উদ্যোক্তা - জ্যাক মা

জ্যাক মা এমন একজন ব্যক্তির নাম যিনি কিনা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ‍উঠে এসে সবচেয়ে শীর্ষ জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন। তিনি কেবল ফোর্বসের তালিকায়  উঠে আসা প্রথম চীনের উদ্যোক্তা নন, তিনি প্রায় দুই হাজার একশত কোটি টাকা নিয়ে চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন এছাড়াও পৃথিবীর মধ্যে ৩৬ তম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। আসুন জেনে নেই সেই ব্যক্তির অবিশ্বাস্য সেই গল্পটিঃ

সবাই যা পারে না তাই করে দেখিয়েছেন আলিবাবার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। চীনা ই-কমার্স সাইট আলিবাবার চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসরে চলে গেলেন। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড্যানিয়েল ঝ্যাংয়ের হাতে সব দায়িত্ব দিয়ে সরে গেলেন প্রযুক্তি জগতের অন্যতম এই উদ্যোক্তা।

চীনে তার প্রজন্মের বিশিষ্ট ইন্টারনেট উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনিই প্রথম, যিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন।

তবে চেয়ারম্যান পদ ছাড়লেও আগামী বছর আলিবাবার শেয়ারধারীদের বার্ষিক সাধারণ সভা পর্যন্ত জ্যাক মা আলিবাবা বোর্ডে থাকবেন। এ ছাড়া তিনি আলিবাবা পার্টনারশিপের আজীবন সহযোগী হিসেবে থাকবেন।

২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হংকংয়ে অনুষ্ঠিত ‘অ্যান ইভিনিং উইথ জ্যাক মা’ অনুষ্ঠানে তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, আজকালকার তরুণদের যেসব যোগ্যতা থাকে, আমার সেই সবের কিছুই ছিল না। লোকে আমাকে বলত, ‘কী যোগ্যতা আছে তোমার? তুমি কখনো অ্যাকাউন্টিং শেখনি, ম্যানেজমেন্ট শেখনি। এমনকি কম্পিউটার সম্পর্কেও তেমন কিছু জানো না। তুমি কেন ব্যবসা করবে?’ সবাই জানে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবার গণিতে আমি ১ পেয়েছিলাম। তিনবার পরীক্ষা দিয়েও ভাল কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাইনি। শেষ পর্যন্ত যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, সেটার তেমন কোনো নাম ছিল না-হ্যাংঝোউ নরমাল ইউনিভার্সিটিকে তখন ‘চতুর্থ শ্রেণির’ বিশ্ববিদ্যালয় ধরা হতো।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় জ্যাক মা মন্তব্য করেন, “আমি এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সব সময় ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে ভালবাসেন। আমি পেছনে ফিরে তাকাতে চাই না।”

“আমি শিখেছি অনেক কোম্পানি কেন ব্যর্থ হয়। কারণ তারা তাদের দেখা স্বপ্নটি ভুলে যায়। স্বপ্নই আমাদেরকে কঠোর পরিশ্রমী করে তোলে।”

১৯৬৪ সালে একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই ইংরেজী শেখার প্রতি একটি বিশেষ ঝোঁক ছিল তার। তাই তিনি বিদেশীদের সাথে কথা বলার জন্য বাসার পাশের হোটেলের চারপাশে ঘোরাঘুরি করতেন। যখন তার বিদেশীদের সাথে ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠল তখন তারা তার চীনা নামটি (মা ইয়ুন) বদলে “জ্যাক” নামে ডাকা শুরু করে।

স্কুল জীবনের পড়াশোনা শেষ করে জাতীয় কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় তিনি দুইবার ফেল করেন। তবে তিনি ১৯৮৮ সালে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে। এরপর  তিনি হ্যাংজহু ডায়ানজি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাসিক ৯৬০ টাকা বেতনে ইংরেজি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৪ সালে জ্যাক একটি অনুবাদ সংস্থা বা ট্রান্সলেশন ফার্ম খুলে বসলেন, ফলে প্রথমবারের মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেখানে তিনি প্রথম ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারেন।

চীনে ফিরে এসে, ইন্টারনেটে তিনি যেই শব্দটি প্রথম খুজেছিলেন সেটি ছিলো ‘বিয়ার’! তিনি বিভিন্ন দেশে এই সম্পর্কে নানা তথ্য পাচ্ছিলেন তবে চায়না ভাষায় কোন তথ্য পাচ্ছিলেন না। ফলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন একটি ওয়েবসাইট খোলার।

১৯৯৯ সালের এপ্রিলে স্ত্রী এবং এক বন্ধুর সহায়তায় ২০,০০০ ডলার নিয়ে একটি ইন্টারনেট সংস্থা চালু করেছিলেন। সংস্থাটি মূলত ওয়েবসাইট তৈরির জন্য কাজ করত। এটিই ছিল চীনের প্রথম ইন্টারনেট ব্যবসা।

পরবর্তী তিন বছরে তাদের এই সংস্থাটি ৫,০০০,০০০ চীনা ইউয়ান (তখন ৮০০,০০০ মার্কিন ডলার) আয় করেছিল। কিছু সময় পরে জ্যাকের প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয়তার জন্য চীনা টেলিকম কোম্পানি যৌথ উদ্যোগে কাজ করার জন্য তাকে চাপ দেওয়া শুরু করে এবং পরে তিনি সেই কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।

১৯৯৯ সালে তিনি এই সংস্থার চাকরি ছেড়ে দেন। ১৮ সদস্যের দল ও নিজের জমানো ৫০০,০০০ ইউয়ান দিয়ে নিজের শহর হাঙ্গজুতে ফিরে আসেন। সেখানে তিনি আলিবাবা প্রতিষ্ঠা করেন।

আলিবাবা ডটকমে ক্রেতারা তাদের পছন্দমত পণ্য ক্রয় করতে পারে এমন পণ্য তালিকা সেই ওয়েবসাইটে তিনি পোস্ট করেন। এতে তিনি বিপুল ক্রেতা পান এবং শীঘ্রই জনপ্রিয়তা অর্জন করে আলিবাবা ডটকম। এই কাজকে আরো বড় করার জন্য জ্যাক দেশীয় পাইকারকে একসাথে করে এই ব্যবসার আওতায় নিয়ে আসেন।

২০১২ সালের মধ্যেই আলিবাবার অনলাইন লেনদেনের পরিমাণ এক কোটি ট্রিলিয়ন ইউয়ান অতিক্রম করে ।

তবে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় খবরটি আসে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে। যখন নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে (এনওয়াইএসই) আলিবাবা গ্রুপের আইপিও মার্কিন ইতিহাসের বৃহত্তম আইপিও পেয়েছে এবং তাকে চীনের ধনীদের শীর্ষে রাখা হয়েছিল।

তার পর থেকে জ্যাক মা কেবল বিশ্বের অন্যতম ধনীই হয়ে ওঠেননি, আলিবাবা গ্রুপও বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান প্রযুক্তিময় সংস্থায় পরিণত হয়েছে। আজ যার বাজার মূল্য প্রায়  ২০১.৭ বিলিয়ন ডলার।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী জ্যাক মা চীনের অন্যতম ধনী ব্যক্তি, যার সম্পদের পরিমাণ ৩৮.৬ বিলিয়ন ডলার।

মো. হৃদয় সম্রাট

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here