উদ্যোক্তা- ফারজানা খান

সেলাইয়ের কাজ ও ব্লক প্রিন্ট দিয়ে শুরুটা করেছিলেন স্কুল জীবন থেকে। এইচএসসি পরীক্ষার আগেই ফারজানা খান সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। ২০১৬ সালে “আ-মাহ্-রা” দিয়ে যাত্রা শুরু করেন।

দুই ভাই আর চার বোনের মধ্যে ফারজানা খান চতুর্থ। উদ্যোক্তার পিতা একজন রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার এবং মাতা একজন গৃহিনী। বেড়ে ওঠা রাজধানীর মহাখালীতে। স্কুল জীবন কাটিয়েছেন সিভিল অ্যাভিয়েশন উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজে নিজের এইচএসসি শেষ করেন। হোম ইকোনমিকস কলেজ থেকে অনার্স পাশ করেন। এরপর যোগদান করেন গাজীপুর শহীদ বৃত্তি ও ক্যাডেট একাডেমিতে শিক্ষকতা জীবনে। সেখানে কাটিছেন তিনটি বছর। ২০১৫ সালে আবদ্ধ হন বিবাহবন্ধনে৷

উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন কিভাবে এসেছে সেই সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বার্তাকে ফারজানা বলেন, “আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন গার্লস গাইডের সাথে জড়িত ছিলাম৷ সেখান থেকে প্রায়ই আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পিংয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হতো এবং আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে আমাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। প্রশিক্ষণে আমাদের ব্লকের কাজ শেখানো হয়েছে। সেখানে শিখে বাসায় বসে বসে অনুশীলন করতাম। আর মা মহিলা অধিদপ্তর থেকে সেলাই শিখে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দিয়েছিলেন, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের সেলাই শেখাতেন। আমিও বসে বসে শিখতাম, সেখান থেকেই মাত্র ৭ হাজার ৫শ’ টাকা নিয়ে সেলাই আর ব্লকপ্রিন্ট দিয়েই আমার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিলো।”

বর্তমানে ফারজানা খানের শেয়ারে একটি কারখানা আছে যেখানে শাড়ি, ওড়না এবং গজ কাপড় তৈরী করা হয়। ক্যামিকেল ডায়টাও করা হয় কারখানাতেই। আর ব্লকের কাজগুলো করেন বাসায়।

রপ্তানির ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলতেই বলেন, “আমার পন্যের রঙের গ্যারান্টি এবং কোয়ালিটি সম্মত হওয়ায় মানুষের চাহিদা অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে প্রায় ৫০ হাজারের মতো শাড়ি, গজ কাপড়, পাটের ব্যাগ এবং ব্লকপ্রিন্টের বিভিন্ন কাপড় রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু মহামারী পরিস্থিতিতে একটু কমে গেছে। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডার পাচ্ছি এবং সবচেয়ে বেশি অর্ডার পাওয়া যায় রাজধানীর গুলশান এবং বনানী থেকে।”

কয়েক দিন পরেই আসছে ঈদুল ফিতরের আমেজ। এই ঈদকে কেন্দ্র করে কি কি পরিকল্পনা করেছেন তা জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন, “ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা বড়সড় পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম, কিন্তু মহামারী পরিস্থিতি আর লকডাউনের জন্য আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। কারণ এই মহামারী পরিস্থিতিতে সবাই মার্কেটগুলোতেই যাচ্ছে। ফলে অনলাইন উদ্যোক্তাদের এবং ব্যবসার অবস্থা খুব একটা ভালো নেই বললেই চলে।”

ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে আরো যোগ করে বলেন, “অনলাইন ভিত্তিক যে দেশীও পণ্যগুলো আছে বা যারা কাজ করছেন, সেদিকে যদি দেশের মানুষ একটু নজর দেয় বা এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো উঠে দাঁড়ানো সম্ভব হতো৷”

শুরু করতে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ফারজানা বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার পর সকলেরই কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তার ক্ষেত্রেও হতে হয়েছিলো ছোটখাট কিছু সমস্যা নিয়ে। বিশেষ করে কারিগর এবং সোর্সিং নিয়ে। ব্যবসা চলাকালীন অবস্থায় উদ্যোক্তার বাবা অসুস্থ এবং মৃত্যুবরণ করায় ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত মোট তিন মাসের মত সকল কাজ বন্ধ ছিলো।

তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে মতামত জানতে চাইলে উদ্যোক্তা ফারজানা খান বলেন, “যে যেই কাজ নিয়ে আগাচ্ছে তাকে অবশ্যই সেই কাজ সম্পর্কে ভালো মত জানতে হবে, শিখতে হবে এবং পড়াশোনা করতে হবে, সেটা যে কোন কিছু নিয়েই হতে পারে। আরেকটা বিষয় তরুণদের খেয়াল রাখতে হবে যে, বেশি বিক্রির আশায় একটু দাম কমিয়ে দেই তাতে বিক্রি বেশি হবে এমন চিন্তা করা মোটেও ঠিক না, এতে বাজার নষ্ট হয়।”

পরিশেষে উদ্যোক্তা বার্তাকে নিয়ে বলেন, “উদ্যোক্তা বার্তা প্রত্যেকটা উদ্যোক্তার কাছে গিয়ে তাদের জীবনকাহিনী সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে, যা খুবই অনুপ্রেরণা দেয়ার মত। আমি খুবই সাধারণ মানুষ, আজ উদ্যোক্তা বার্তার জন্য আমাকে হয়তো আরো কিছু মানুষ চিনতে পারবে আমার সম্পর্কে জানতে পারবে তা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার বা অনেক বড় পাওয়া। অনেক অনেক শুভ কামনা উদ্যোক্তা বার্তার জন্য।”

সাবিত আল বাশার
উদ্যোক্তা বার্তা
ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here