উদ্যোক্তা- খন্দকার আহাদুজ্জোহা রুবেল

ছোট্ট বেলায় মাকে দেখেছেন নকশী কাঁথার শাড়ি তৈরি করতে। মা মিসেস সালেমা খাতুন যশোরে নিয়ে এসে সেই শাড়ি গুলো বিক্রি করতেন, নিজ ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পরিবারের মূল আয়ের উৎস কাঁথা, নকশী কাঁথার শাড়ি। সেই নকশী কাঁথার কারুকাজ নিয়ে খন্দকার আহাদুজ্জোহা রুবেল উদ্যোক্তা হবার ব্রত গ্রহণ করলেন।

মাস্টার্স পাশ করে খন্দকার রুবেল বহুমুখী নকশী কাঁথা পণ্য বা নকশী কাঁথা সামগ্রী প্রস্তুত এবং বিক্রি করে উদ্যোক্তা হবার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে পিছিয়ে পরা জনপদে কর্ম চঞ্চলতা সৃষ্টি করবার কাজ ছড়িয়ে দিলেন নিজ এলাকায়।

উচ্চ মাধ্যমিক পড়া অবস্থায় বড় দুলাভাই জাপান থেকে বেড়াতে আসলেন বাংলাদেশে। হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডে একটি কার্যক্রম নিয়ে আসলেন। তরুণ রুবেল কে জিজ্ঞেস করলেন কি করতে চায় সে? নিজে কোন কাজ নাকি চাকরি না অন্য কিছু। বড় ভাই সম-পরিবারের সদস্য আনিসুর রহমান তরুণ রুবেল কে অনুপ্রেরণিত করলেন মায়ের বিজনেস ট্রেন্ডকে চেইনে পরিণত করে কাজ করতে।

জাপান বাংলাদেশ কালচারাল এসোসিয়েশন আঞ্চলিক অফিসে ২৫ জন নারীকে নিয়ে ট্রেনিং নিলেন খন্দকার রুবেল। অফিস ম্যানেজমেন্ট কোর্সও সম্পন্ন হলো। ২০০৫ সালে স্বপ্ন এঁকে ফেললেন কাগজে। নাম লিখলেন “প্রাপ্তি”। প্রাপ্তি মানে পাওয়া। এক নতুন কিছু পাওয়া, দুই নকশীর কাজ যশোর অঞ্চলে সহজলভ্য। কাঁথায় জনম, কাঁথায় মৃত্যু যে প্রবাদ প্রচলিত আছে এই অঞ্চলে সেই প্রবাদ হলো সবচেয়ে বৃহৎ শক্তি। নিজেদের অঞ্চলের ঐতিহ্যের কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যাবেন এবং এগিয়ে নিবেন নিভৃত গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারীদের। এই প্রত্যয়ে “প্রাপ্তি” পথচলা শুরু করলো।

ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে কেউ যায় উচ্চ শিক্ষায়, কেউ চাকরি খুঁজে কেউ বা যায় বিদেশে। কিন্তু রুবেল এবং তাঁর আরও ১৫জন বন্ধুরা মিলে আত্মকর্মসংস্থানে মনোযগী হলেন। বন্ধুরা পরবর্তীতে নিজ নিজ কর্মে, চাকরিতে প্রবেশ করলেও মূল উদ্যোগের স্থানে খন্দকার রুবেল উদ্যোগ পরিচালনার হাল ধরেছেন এবং পেছনে সেই বন্ধুরা আছেন সর্বক্ষণ। এগিয়ে চলে উদ্যোক্তা রুবেল এবং তাঁর নতুন কর্ম।

২০০৯ সালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড সবগুলো থেকে কাজ পাওয়া শুরু করলেন উদ্যোক্তা রুবেল। প্রখ্যাত ডিজাইনার, গবেষক এবং খ্যাতনামা উদ্যোক্তা সাহিদ হোসেন শামিম অনুপ্রেরণার এক বাতিঘর হিসেবে তরুণ উদ্যোক্তা রুবেল ও তাদের বন্ধু সার্কেলের জীবনে আসেন। উদ্যোক্তা রুবেল প্রথম তৈরি করলেন বেবি কাঁথা, সালোয়ার কামিজ, গায়ের চাদর, পাঞ্জাবি এবং নিজেদের ব্যবহার করা কাঁথা দিয়ে পণ্য তৈরি করলেন তাদেরকে নিয়ে যে নারীরা ট্রেনিং নিয়েছেন খন্দকার রুবেলের সাথে।
নিজেদের পড়নের পোশাক এবং গৃহস্থালীর সামগ্রী বানিয়ে তা নিজের মধ্যেই ব্যবহার শুরু করলেন। ঈদে, চাঁদে, উৎসবে আত্মীয়রা কিনে নিতেন নানান পণ্য, অর্ডার করতেন। জাপানী পণ্য নিতেন বড় ভাই এবং তা নিতেন সারা বছরের জন্য এক থোকে। ৪ বছরে সক্ষমা অর্জন করে ফেললেন প্রাপ্তি’র সদস্যরা।

২০০৯ সালে বাণিজ্যিক পথচলা শুরু হলো প্রাপ্তি’র। সদস্য সংখ্যা ১০০জন। জাপান প্রথম বাজার। একে একে দেশের ১১ থেকে ১২টি স্বনামখ্যাত ব্র্যান্ড সপে কাজ দিতে শুরু করলেন উদ্যোক্তা রুবেল। সামাজিক উদ্যোগে এগিয়ে গেলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেলন পণ্য তৈরিতে, পণ্য বিক্রিতে। সদস্য, কর্মীসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং নিজে গ্রহণ করতে থাকে কোয়ালিটি মেইন্টেন করে ডিজাইন এবং ফিল্ড তৈরির কাজ। কাজের অর্ডার আসতে থাকে, বাড়তে থাকে কর্মী সংখ্যা।

২০১৫ দেশের বাজারে নকশি কাঁথার ডিমান্ড বরাবর রয়েছে কিন্তু শহুরে জীবন কম্বলের চাহিদা ব্যাপক। নকশি কাঁথা কে শুধু কাঁথায় আটকে না রেখে উদ্যোক্তা রুবেল চিন্তা করলেন বহুমুখী নকশি কাঁথার পণ্য সামগ্রীর ব্যাপারে। শাড়ি, শাল, ওড়না, স্কার্ফ, থ্রি পিস, পাঞ্জাবি, কুশন কাভার, ওয়ালম্যাট, গ্লাস কোস্টার, টেবিলম্যাট সেট, তৈরি হতে থাকলো হাজার হাজার পিস।

রিসাইকেল প্রোডাক্টে হাত দিলেন উদ্যোক্তা। ব্যবহৃত শাড়ি দিয়ে নকশি কাঁথা এবং নানান পণ্য তৈরি করাও শুরু হলো। ন্যাচারাল ডাই কোন কেমিক্যাল ব্যবহার না করে উদ্যোক্তা তৈরি করতে থাকলেন তার পণ্য তার কাঁথা সামগ্রী। আজ ৩০০ কর্মী কাজ করছেন উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান প্রাপ্তি’তে।

আজ দেশীয় ঐতিহ্যে, নিজ সংস্কৃতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নজরকারা আন্তর্জাতিক মানের কাঁথা পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করে এগিয়ে চলেছেন একজন উদ্যোক্তা দুর্বার গতিতে তিনি খন্দকার আহাদুজ্জোহা রুবেল।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here