বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (SEIP) প্রকল্পের আয়োজনে শুক্রবার অন্ট্রোপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ওপেন লোন ডিসবার্সমেন্ট শীর্ষক একটি সম্মেলন রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়।
কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মোঃ নাছেরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকল্প পরিচালক মোঃ এখলাছুর রহমান। বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সোনালী ব্যাংকের সিইও ও এমডি আফজাল করিম, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন, ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি ও সিইও শাহ্ এ সারওয়ার।
সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মোঃ জাকের হোসেন। সঞ্চালনা করেন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জাহিদ ইকবাল। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ছাড়াও বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী, অংশীজন ও উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নতুন ও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা, দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে কনফারেন্সে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, অর্থনৈতিক অর্জনে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোক্তা তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট SEIP প্রকল্পের এর আওতায় অন্ট্রোপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছে।
দেশের তরুণ উদ্যমী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নেয়ার প্রয়াসে ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রোগ্রাম’ অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে তিনি ব্যাংকারদের সিএসআর তহবিল থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত উদ্যোক্তা তৈরির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। সেক্ষেত্রে সিএসআর নীতিমালায় কোন পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
বর্তমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশে কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করেন গভর্নর।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং ওয়েজ আর্নারদের রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে দেশে অর্থ প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফি ব্যাংকগুলোকে বহনের জন্য তিনি আহবান জানান। তিনি বলেন, এর ফলে একদিকে যেমন রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা দেশে অর্থ প্রেরণে উৎসাহিত হবেন, অন্যদিকে ব্যাংকগুলোও তাদের কাঙ্খিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবে।
প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা যেন কোনভাবেই অবৈধ চ্যানেলে না যায় সে ব্যবস্থা গ্রহণের উপর জোর দেন গভর্নর। মালদ্বীপসহ যেসব দেশ থেকে রেমিট্যান্স আহরণের সুযোগ রয়েছে সেসব দেশে এক্সচেঞ্জ হাউজ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে তিনি ব্যাংক নির্বাহীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
গম, চিনি, ডাল, ভোজ্য তেলসহ আমদানি নির্ভর যেসকল খাদ্যসামগ্রী রয়েছে তার আমদানি যেন কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের বিশেষ দৃষ্টি দিতেও গভর্নর আহবান জানান। একইসাথে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্য আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করার জন্য ব্যাংকারদের নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।
বিশেষ অতিথি মোঃ এখলার রহমান তার বক্তৃতায় বলেন, SEIP প্রকল্পের আওতায় উদ্যোক্তা/কর্মীদের এমনভাবে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যার ফলে প্রশিক্ষিত কর্মীরা স্বাবলম্বী হতে উদ্বুদ্ধ হন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মোঃ নাছের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের SEIP প্রকল্পের আওতায় উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। উচ্চ মূল্যমানের পণ্য উৎপাদনে এবং দক্ষ কর্মবল সৃষ্টিতে এ প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
SEIP প্রকল্পের অধীনে উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচির উপর নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের SEIP প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিট-এর উদ্যোগে প্রশিক্ষণার্থীদের শিক্ষণ উপকরণ হিসেবে প্রকাশিত ‘উদ্যোগ সফলতায় ১০০ ঘন্টা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়কও উন্মোচন করা হয়।
বিভিন্ন ব্যাংকের অধীনে প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপ্তকারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৮৮ জনের হাতে প্রতীকি চেক তুলে দেওয়ার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। উদ্যোক্তারা নিয়মিত এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আয়োজনের পরামর্শ দেন যাতে দেশের প্রান্তিক উদ্যোক্তারাও এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসা সফলভাবে পরিচালনা করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।
ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা