আজকের তরুণ-তরুণীরা আগামী দিনের সম্ভাবনাময় সময়ের ভবিষ্যৎ। এই তরুণ প্রজন্ম ভাগ্যের উন্নয়নে দেশ ছাড়ে পড়াশোনায় ভালো সুযোগের সন্ধানে। কেউ বা ভালো চাকরি পেতে অন্য কোনো দেশে পাড়ি দেন। আরেক দল যান স্টার্টআপ খুলতে। কেউ বা দেশকে ভালোবেসে মাটি কামড়ে পরে থাকেন, পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন। আজ আমরা উদ্যোক্তা বার্তায় জানবো একটি ‘আউট বক্স’ সম্পর্কে। যে আউট বক্সের উদ্যোক্তা কলকাতার কুশল মোদী ও সুকৃতি আগরওয়াল।
অন্য রকম কিছু একটা করবেন সেই পরিকল্পনা সবসময় ছিলো তাদের। কলকাতার জেভিয়ার্স কলেজে এক সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এই উদ্যোক্তাদ্বয়। তারা ছিলেন একেবারে পাশের বাড়ির ছেলেটি-মেয়েটির মতো। যারা নিয়মিত ক্লাসে যেতেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, মজা করে, ঘুরে বেড়িয়ে জীবনের মানে খোঁজার চেষ্টা করতেন।
উদ্যোক্তা সুকৃতি আর কুশল মোদী এক সময় তাদের চিন্তা ভাবনাকে সম্পদে পরিণত করেছেন। তাদের এক সময় মনে হয়েছে একমাত্র কলকাতাতেই ‘আউটবক্স’ সম্ভব ছিলো। এই শহরের সংষ্কৃতি, মানুষের রুচি-পছন্দ-চাহিদার নাড়ি নক্ষত্র তাঁরা জানেন। তাই অন্য কোথাও এই স্টার্টআপ তাদের পক্ষে শুরু করা সম্ভব ছিলো না। আউট বক্স শুরু করার সময় ভেবে-চিন্তে করে শুরু করেননি উদ্যোক্তারা।
কলকাতার এই দুই তরুণ উদ্যোক্তার স্টার্টআপ ‘আউটবক্স’ হলো ডেলিভারি সার্ভিস, অর্থাৎ উপহার থেকে বিয়ের কার্ড, আপনার হয়ে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছে পৌঁছে দেবে ‘আউটবক্স’। গিফট বক্স, কেক, থেকে শুরু করে প্রিয়জনকে দেয়া আপনার সবকিছু ঠিকানা ধরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে তারা।
উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসার শুরুর দিক নিয়ে বলেন, ‘কলেজ পাস করে আমরা বুঝে গিয়েছিলাম চলার পথে পদে পদে কতো ফাঁদ পাতা থাকে। এমনকি কর্মক্ষেত্রে কোনো ধাক্কা খেলেও তা সামলে ওঠার জন্য ন্যুনতম স্বান্ত্বনাটুকুও পাওয়া যায় না। যখন আমরা দু’জন কলেজে পড়ি তখনই সাত-পাঁচ না ভেবে জাস্ট বেরিয়ে পড়েছিলাম অজানার পথে। কিছু কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য খুব ভুগেছি। বুঝতে পেরেছিলাম ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময়টুকুও পাওয়া যাবে না’।
‘আউটবক্স’র আইডিয়া এসেছিলো উদ্যোক্তা সুকৃতির দাদার বিয়ের উপহার পাঠানোর এক ভোগান্তির ফলে। দাদার বিয়ে উপলক্ষে ৪০০ জন আত্মীয়ের কাছে উপহার পাঠাতে গিয়ে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন তাঁরা। আর সেটাই ছিলো উদ্যোক্তাদের কাছে ইউরেকা মোমেন্ট। খুঁজে পান নতুন দিশা। তাঁরা চিন্তা করেন এটাই একমাত্র বাজার যেখানে কেউ এখনও পা রাখেনি।
চলমান জীবন ব্যবস্থায় মানুষ এখন অনেক বেশি যান্ত্রিক। পাই পাই পয়সা হিসেব করে খরচ করার দিন চলে গেছে। মানুষ এখন প্রতিদিনের টুকিটাকি কাজও আউটসোর্স দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে। একটা জিনিস কাঙ্খিতজন বা প্রিয়জনকে সময় মতো পৌঁছে দেওয়াকে স্মরণীয় করে তোলাটাও যথেষ্ট সৃজনশীল ব্যাপার।
‘আউটবক্স’ সব ধরনের পার্সোনালাইজড ডেলভারির সেবা (কারো হয়ে কিছু পৌঁছে দেওয়া) দিয়ে থাকে। গ্রাহক যদি চায় তাহলে গ্রাহকের উপহার অথবা নিমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেয়ার কাজটি করে থাকে আউটবক্সের প্রশিক্ষিত কর্মীরা। যারা ঘরে ঘরে গিয়ে সেই সেবাটা দেয়।
উদ্যোক্তা কুশল মোদী জানান, ‘একটা নির্দিষ্ট বাজেট দিয়ে দিলে গ্রাহকের হয়ে গিফট কিনে পৌঁছে দেয় ‘আউটবক্স’। ২০২০ সালে ‘আউটবক্স’ থিম-বেসড ডেলিভারিও করেছে। যেমন ক্রিসমাসে ‘আউটবক্স’র কর্মীরা সান্তাক্লজের পোশাক পরে সারা শহরে শিশুদের গিফট পৌঁছে দিয়েছে। গ্রাহককে শুধু বলে দিলেই হবে কোথায় কী পণ্য, কার কাছে পৌঁছাতে হবে। অনুভূতি প্রবণ আর সৃজনশীল ভঙ্গিমায় গ্রাহকের কাঙ্খিত পণ্যটি পৌঁছে দেয়ার কাজটি ‘আউটবক্স’ যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে করে থাকে।
এখন সুকৃতি-কুশলদের নতুন জগৎ। নতুন ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেওয়ার লড়াই। ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টায় মগ্ন দুই উদ্যোক্তা। তবে পা ফেলছেন সাবধানে। বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গেও কথা বলছেন, যারা সত্যিই ‘আউটবক্স’কে জাতীয় স্তরে নিয়ে যেতে চান। আশাবাদী উদ্যোক্তা সুকৃতি বলছেন, ‘বড় কর্পোরেট হাউস থেকে ছোট মিষ্টির দোকান সবাই আমাদের গ্রাহক। খুব শিগগিরই ভারত জুড়ে আমাদের দেখতে পাবেন আপনারা’।
দুই কলেজ পড়ুয়া উদ্যোক্তার জন্য প্রথম ফান্ডিং করেছেন তাঁদের পরিবারের বাবা-মায়েরা। ‘আউটবক্স’ এর জন্য উদ্যোক্তার পরিবার টাকাটা ঋণ হিসেবে দেননি, বরং ব্যবসায় পুঁজি হিসেবে খাটিয়েছে। অনেক ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ‘আউটবক্স’ প্রজেক্টে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে’।
জানতে চাওয়া হয় নতুনদের সম্পর্কে যারা তাঁদের মতোই স্বপ্ন দেখেন কি-না? দুই উদ্যোক্তা বলেন, ‘যতই অদ্ভুত আইডিয়া হোক না কেনো, বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করতেই হবে। যা করতে চাইছো তার আটঘাট জেনে নাও। হেরে যাওয়ার ভয়ে পিছিয়ে যেও না’।
(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)