শাশুড়ির বানানো তেল নিয়ে বউমার চমক সৃষ্টি

0
উদ্যোক্তা- সাদিয়া ইসলাম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে বিবিএ করার পরেই তাকে গৃহবধূ হয়ে চলে যেতে হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে যেন নিজের আরেকটি বাসা, আরেকটি পরিচয় পেয়েছেন তিনি। তার ঘর আলো করে আসে ফুটফুটে এক সন্তান তাই তার আর চাকুরি করা হয়ে উঠে নি। তবে বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ড হওয়ায় তার মনের এক সুপ্ত বাসনা প্রায়ই উঁকি দিতো। এরপর তার পুরো পরিবারের সমর্থন, সাহায্য এবং ভালোবাসায় তার এগিয়ে যাওয়া। তিনি যখন কাজ শুরু করেন তখন তার ছেলের বয়স দেড় বছর। সে নারিকেল কে আলাই বলেছিলো। আর তার ডাক অনুযায়ী তারা তাদের পেইজের এবং ব্র্যান্ডের নাম আলাই(aalai) দিয়েছেন।

শুরু থেকেই ব্যবহার করতেন শাশুড়ির হাতে বানানো নারিকেল তেল। খুব উপকার পাওয়ায় এবং সহজলভ্য হওয়ায় আত্নীয় স্বজন চাইলেও দিতেন তিনি। এরপর তাকে তার দেবর এবং দেবরের বউ মিলে বলেন সেটা নিয়ে অনলাইনে কাজ শুরু করতে। কারন সেই সময় করোনার জন্য সবাই বাসায় আর অনলাইনে তখন খুব ভালো প্ল্যাটফরম সৃষ্টি হয়েছিল। যেহেতু অনুপ্রেরনা ছিল দেবরের তাই গুরু দায়িত্ব তিনিই নিয়েছিল নারিকেল কারখানা থেকে নিয়ে এসে খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করা পর্যন্ত। এরপরের কাজে তাকে সাহায্য করতেন তার দেবরের বউ। তারা একসাথে শাশুড়ির দেওয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতেন এবং তেল উৎপাদন করে তা বিক্রি করতেন।

“২০২০ এর ফেব্রুয়ারিতে আমাদের যাত্রা শুরু নারিকেল তেল নিয়ে। তারপর করোনা আসে। আমরা তখন তদের আরেকটি পন্য এক্সট্রা ভার্জিন কোল্ড প্রেসড নারিকেল তেল নিয়ে আসি। তখন ওই পন্য সম্পর্কে সবাই জানতেন না। কিন্তু যারা জানতেন তারা অনেক সাহস দিয়েছিলেন আমাকে।” উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান উদ্যোক্তা সাদিয়া ইসলাম। করোনায় তাদের এই পন্য টি অনেক ভালো বিক্রি হয়। সেই থেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে তার পথচলা আরও মসৃন হয়।

তিনি আরও বলেন, ” মাত্র ২০০০ টাকার নারিকেল দিয়ে শুরু করি। আজ সেখান থেকে আমি সফল হয়েছি এবং আজকে আমার ভালো একটা জায়গা আছে সবার কাছে। ” শুরু থেকেই তারা খাটি নারিকেল তেল নিয়েই কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে তারা এক্সট্রা ভার্জিন কোল্ড প্রেসড নারিকেল তেল নিয়ে আসেন। আর কিছুদিন পরে তারা নারিকেল নাড়ু, বরফি এবং সুগার ফ্রি পিনাট বাটার নিয়ে কাজ শুরু করেন।

তারা নিজেরাই কাজ করেন এখন পর্যন্ত এই পারিবারিক উদ্যোগে। শুরুতে উদ্যোক্তার দেবর আর দেবরের বউ কাজ করলেও দেবরের চাকুরীর কারনে তারা দূরে চলে যায়। বর্তমানে উদ্যোক্তা এবং তার শ্বাশুড়ী মিলেই কাজ করেন এবং উদ্যোগ বড় করে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছেন।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় তিনি জানান “সবার ই কিছু না কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকে। তেমনি আমারও আছে। আমার পরিকল্পনা হলো আমার পন্যের বি এস টি আই এর অনুমোদন করানো। আমার পন্য বাজারে এবং সব জায়গায় খুব সহজে পাওয়া যাবে এই লক্ষ্যেই আমার কাজ করা।” দেশের ভিতর সব জায়গায় এখন পর্যন্ত তাদের তেল ডেলিভারি হয়েছে। বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতে তাদের তেল গিয়েছে। এমন কি দেশের বাহিরে সুইডেন এও তাদের তেল গিয়েছে।


নারিকেল তেল এবং নাড়ু তাদের মোস্ট সেলিং পন্য। মাসে ৩৫০০০ টাকার মতো সেল হয়। তবে এখনো তাদের ফ্যাক্টরী বা কারখানা দেওয়ার মতো সক্ষমতা আসে নি। তবে তারা স্বপ্ন দেখেন যে ভবিষ্যতে আল্লাহর রহমতে তাদের পন্যের কারখানা দেওয়ার ইচ্ছে আছে যেখানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।

সাদিয়া ইসলাম স্বপ্ন দেখেন তরুণরা আমাদের দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পন্য গুলো নিয়ে কাজ করবে এতে করে যেমন স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব হবে পাশাপাশি দেশের জিডিপির হারও বেড়ে যাবে। আর এক অঞ্চলের মানুষ যদি তাদের জায়গার পন্য নিয়ে কাজ করে তাহলে অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ এটা অনেক সহজে জানতে পারবে এবং ব্যবহার করে উপকারও পাবে । তাই বসে না থেকে যে যা ভালো পারে তাই নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত এবং অবশ্যই ভালোবেসে পরিশ্রম করতে হবে।

মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here