‘শীতলপাটি’তে আয়েশার পরিবারের স্বপ্ন গাঁথা

0
উদ্যোক্তা আয়েশা আক্তার

সিলেটের মেয়ে আয়েশা আক্তার কাজ করছেন হস্তশিল্প নিয়ে। তার প্রতিষ্ঠানের নাম শীতলপাটি। আয়েশার আজ থেকে পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে উদ্যোক্তা হবার পথের শুরু।

২০১৭ সালের জুলাই মাসে স্বামী হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলে মানসিকভাবে প্রচন্ড ভেঙে পড়েন আয়েশা আক্তার। তিন সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। জীবনে চলার তাগিদ, বেঁচে থাকার তাগিদ সবকিছুই যেন ভাবিয়ে তোলে তাকে। কিন্তু কি করবেন তিনি! কিছুই যেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না। সে সময় সার্বক্ষণিক পাশে পেয়েছিলেন তার পরিবারকে। শ্বশুরবাড়ি এবং বাবার বাড়ি কোন দিক থেকেই যেন সহযোগিতার কমতি ছিল না তার। আর অনুপ্রেরণার সবচেয়ে বড় অংশ ছিল তার তিন সন্তান।

নিজের কিছু একটা করার চিন্তা করে একটি দোকান ভাড়া নেন তিনি। মেয়েদের পোষাক, সাথে টেইলারিংও রাখেন।সংসার এবং পরিবারের দায়িত্ব দুটোই তাকে সামলাতে হবে এই চিন্তাটা সার্বক্ষণিক মাথায় ঘুরতে থাকে তার।জীবনে পিছিয়ে পড়তে রাজি নন আয়েশা আক্তার। এর কিছুদিন পর অনলাইন পেইজ খুলেন। অনলাইন এবং অফলাইন মিলে ভালো চলে যাচ্ছিলো উদ্যোক্তার উদ্যোগ ।

২০১৯ সালে উইমেন এন্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট গ্রুপে জয়েন করেন তিনি। বেশ কিছুদিন সাইলেন্ট মেম্বার হিসাবে থাকেন এবং সবার পোস্ট এবং কাজ দেখেন।নিজেও কাজ শিখার চেষ্টা করেন।
আর তখনই চিন্তা করেন দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করবেন তিনি। সিলেটের ঐতিহ্যবাহি পণ্য শীতলপাটি নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

শুরু হয় উদ্যোক্তা জীবনের পথচলার কঠিন সংগ্রাম । বর্তমানে তিনি শীতলপাটি ও শীতলপাটির নতুন নতুন ফিউশন নিয়ে কাজ করছেন। সাথে কাপড়েরও উদ্যোগ আছে -কাস্টমাইজড ড্রেস,শাড়ী,ব্লাউজ ও বেবি ড্রেস। উদ্যোক্তা জানান প্রথম দিকে যে সমস্যা ছিল সেটা হলো মূলধন এবং পণ্যের সোর্সিং।

অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করেন তিনি। খুব বেশী পণ্য স্টক করেননি। আস্তে আস্তে সেল বাড়ে। কোয়ালিটি ভালো রাখার চেষ্টা করেন সর্বক্ষণ। এতে করে কাস্টমাররা ও খুশি হতো এবং কাস্টমার ফুল পেমেন্ট করে দিত। এতে করে পরবর্তী তে আর পুঁজি নিয়ে সমস্যা হয়নি। কঠিন পরিশ্রমী এই উদ্যোগক্তা জীবনে আসা সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করেছেন চরম সাহসিকতার সাথে।পণ্যের গুণগত মানে ছিলেন আপশহীন। শুধু তাই নয় নিজে খোঁজ করে কারিগর বের কছেন তিনি, যারা কাজ ছেড়ে দিয়েছিল তাদেরকে উৎসাহিত করে আবার কাজে ফিরিয়ে আনেন। এতে করে সোর্সিংয়ের সমস্যাটাও সমাধান হয়ে যায় । কাজের শুরুতে মূলধন ছিল ৬০০০০ টাকা।

উদ্যোক্তা আরও জানান একজন উদ্যোক্তার সব থেকে বড় প্রয়োজন ট্রেনিং। কারন না জেনে বুঝে কিছু করতে গেলে সফলতার বদলে ব্যার্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। ট্রেনিং এর মাধ্যমেই একজন উদ্যোক্তা, কাজের দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। কাজের গুণগত মান সম্পর্কেও জানতে পারেন। আয়েশা আক্তার উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘‘নিজে কাজে সফলতার পাশাপাশি অনেক কর্মীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছি। বর্তমানে শীতলপাটির কারিগর ২০ জন। এখন জীবনকে আমি অন্যভাবে দেখি। একসময় মনে হত আমি কারো স্ত্রী, কারো মা নিজের কোন পরিচয় নেই। আজ এই সময় এসে মনে হয় আমার নিজের একটি পরিচয় তৈরি করতে পেরেছি।আমার পরিচয় দিয়ে আমার সন্তান গর্বিত বোধ করে।’’

উদ্যোক্তা স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যৎ শীতলপাটি ও শীতলপাটির ফিউশন কে শুধু দেশে না দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। কাজ করতে চান পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত নারীদেরকে নিয়ে। পরিশ্রম করে যেতে চান জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত।

মার্জিয়া মৌ, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here