ভর্তা, ব্যস এতেই যথেষ্ট! আলাদা করে অন্য কোনো উপমার প্রয়োজন নেই। প্রায় ৮০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই খাবারের আবেদন যে এখনো অটুট আছে, তা এর জনপ্রিয়তা দেখলেই বোঝা যায়। আপনি যদি অন্যান্যদের মতো জিভে জল আনা ভর্তার একজন ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে এই গল্পটি আপনার জন্যই।
রুবাইদা রিয়াত রাখী। রাখী নিজেকে খুব চিন্তাশীল মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন।
ছোট থেকেই রাখী বাবা মায়ের অনেক ভালোবাসা এবং সাপোর্ট পেয়ে এসেছেন। তবে উদ্যোক্তা হতে চাওয়ার স্বপ্ন ছিল আরো আগেই। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেলেও বিয়ে সন্তান সব সামলে কাজ করে ওঠার সুযোগ পাননি। তবে রাখীর চাকরির চেয়ে ব্যবসার প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। নিজের একটা কিছু সেটা ছোট হোক বা বড়- এই চিন্তাটাই রাখীকে উদ্যোগ নিতে শেখায়। আর একমাত্র সন্তান সামলে ঘরে বসে মেয়েদের জন্য অনলাইন ব্যবসাটাকে রাখীর মনে হলো খুব আগ্রহের সাথে করতে পারবেন এই বিশ্বাসটা দৃঢ় ছিল।
অনলাইন ব্যবসা রাখী প্রথম শুরু করেন ২০১৪-২০১৫ এর দিকে ড্রেস আর পাঞ্জাবি নিয়ে। তখন ব্যবসা চালানো এখনকার মতন সুযোগ কম আর ভাল কস্ট ছিল। একসময় উদ্যোক্তা সেটা বন্ধ করেন কিছু পারিবারিক কারণে কিন্তু নেশাটা থেকে যায়। উদ্যোক্তা রাখী বলেন- “ঘর থেকে বের হতাম কম। কেনাকাটা এবং খাবার দাবার প্রায় সব অনলাইন থেকেই করতাম বেশিরভাগ। এভাবেই একদিন ভুত চেপে বসে খাবার নিয়ে কাজ করার কিন্তু খাবার গুলো হতে হবে একটু আলাদা অবশ্যই। পোলাও কোরমা বিরিয়ানি তো অনেকেই করেন, তাই আমি না হয় পোলাও কোরমার সাথে দেশী প্রায় যত রকম আইটেম আছে যেগুলি আমি ভাল পারব এই বিশ্বাস দিয়ে শুরু করি! যেমন ভর্তা ভাত, বিভিন্ন রকম ভাজী, সবজী ডাল, তরকারী, সবরকম দৈনন্দিন খাবার নিয়ে আমি যাত্রা শুরু করি”।
প্রথমে উদ্যোক্তার এই রকম উদ্যোগে অনেকেই নাক সিঁটকালে বা ভর্তা শুনে অবহেলা করলেও মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে অনেক উদ্যোক্তাই এখন দেশী খাবার নিয়ে ঝুঁকেছে। দেশী খাবার আইটেম বেশিভাগ মানুষের রোজ প্রয়োজনীয় আর তাই উদ্যোক্তা রাখী এটা মাথায় রেখে তার “ভর্তা বাহার” নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এরপর থেকে রাখীকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
উদ্যোক্তা রাখী বলেন- “সত্যি বলতে যেদিন শুরু করেছিলাম আমার মা ছাড়া কাউকেই পজেটিভ বলতে শুনিনি। একবারে জিরো ইনভেস্টমেন্ট থেকে আমি কাজ শুরু করি। খুবই কম অর্থে এবং স্বল্প লাভে আমি আস্তে আস্তে ভর্তা বাহার নিয়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে শুরু করি”।
তিনি আরো বলেন- “আমার প্রথম জিদ ছিল আমি কারো উপর নির্ভর করে কোন কাজে হাত দেবনা। নিজের যেটুকু আছে সেটুকুর সাথে শ্রম দেয়ার চেষ্টা করব। আমি বিশ্বাস করি মানুষ চাইলে অনেক কিছুই পারে এবং যে যেটাতে আগ্রহী এবং পারবে বলে বিশ্বাস করে আর সাহস করে সেটি নিয়েই কাজে নেমে পড়া উচিত। সমাজের অনেক নারী ভেবে থাকেন রান্নার কাজে অনেক কিছু নস্ট হবে বা কষ্ট বেশি হবে বলে অনেকেই এই প্রতিভা নিয়েও ঘরে বসে আছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলব সাহস করে নেমে পড়ুন, লেগে থাকুন”।
উদ্যোক্তা রাখীর সব সময় রাধতে ভাল লাগত। বাড়ির রান্না, বাড়ির সেই খাবারের স্বাদ আর গন্ধ এবং নস্টালজিয়াকেই নতুন করে মানুষের কাছে আনছেন রুবাইদা রিয়াত রাখী। এই উদ্যোক্তার অন্যতম উদ্দেশ্য কিন্তু বাংলাদেশ ও সমগ্র বাংলার স্বাদের ঐতিহ্যকে নিজস্ব মাত্রায় বজায় রাখাও।
ভালোবেসে রান্না করা আর তা সম্পর্কে মন দিয়ে চিন্তা শৈলীর মিশ্রণ ঘটানো এই দুইয়ের মধ্যেই যে এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তা অনস্বীকার্য। আর এই সম্পর্ককে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন রুবাইদা রিয়াত রাখী। অনেক বছর ধরেই নিজস্ব “ভর্তা বাহার” চালিয়ে আসছেন। খাবারের পিছনের গল্প, নিজস্ব কিছু রেসিপি, এবং খাবারের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত। “ভর্তা বাহার” আসলে এমন এক উদ্যোগ যা বাংলাদেশে বাংলার নানার ঘরানার খাবারের প্রতি এক ট্রিবিউটও। যে কারণেই তাঁদের খাবারের তালিকায় রয়েছে দেশি হরেক রকম এর বাহারি ভর্তার সমাহার।
উদ্যোক্তা রাখী ভবিষ্যতেও সফল হবার পরও এই হোমমেড খাবার ধরে রাখতে চান। উদ্যোক্তা বলেন-“আমি আরেকটা জিনিস খুব অনুভব করেছি এ উদ্যোগ নিতে এসে যে রোজ কাজের প্রয়োজনে যারা বাইরে অফিস করেন তাদের জন্য রান্নার সময় কুলিয়ে ওঠা মানুষগুলো রান্না করা খাবার নিয়ে সমস্যাগ্রস্ত আর তাই এই মানুষগুলোর কথা ভেবেই বিশেষ করে আমি কাজ টাকে আরো বেশি জোরদার করেছি”।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা