শত বছরের বেলুয়ার ভাসমান বাজার

0

পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায় বৈটাকাটার বেলুয়া নদীর বুকে প্রায় শতবর্ষী ভাসমান বাজার। জেলা শহর থেকে ৪৩ কি. মি. উত্তরে এ বাজার অবস্থিত।

ভৌগলিকভাবে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার পুরোটাই নদী আর খালবেষ্টিত। পানির ওপর সবজি ও সবজির চারা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই এলাকা। কৃষি প্রধান উপজেলাটিতে বেশিরভাগ কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে ভাসমানভাবে। কৃষকের উৎপাদিত সবজি ও বিভিন্ন কৃষজ পণ্য কেনা-বেচার জন্য ভাসমান বাজারও গড়ে উঠে, কারো কারো মতে প্রায় একশ বছর আগে।

বর্তমানে বাজারটি বহুল প্রচারিত হওয়ায় নিজ এলাকার পাশাপাশি, চিতলমারী, মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত নানা ধরনের কৃষিপণ্য দিয়ে নৌকা সাজান পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়ের জন্য। এ বাজারের একেকটি নৌকা যেন একটি ভাসমান গুদাম।

ভাসমান এ বাজারে বরবটি, কুমড়ো, পুঁইশাক, করলা, পটলসহ মৌসুমি প্রায় সব ধরনের সবজি পাওয়া যায়। শাক-সবজির পাশাপাশি সবজির চারাসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যেরও ব্যাপক সমারোহ ঘটে বৈটাকাটার ভাসমান এ বাজারে।

সবজি ছাড়াও চাল-ডাল বিক্রি হয়। নৌকার উপর একটু বৈচিত্রময়ভাবেই সাজানো হয় চালের বাজার, যা পরিচিত দোকানের চাইতে আলাদা। প্রতিটি দোকানে বাঁশ দিয়ে তৈরি পাত্রে চাল সাজানো থাকে। স্থানীয় ভাষায় যা ডোলা নামেই পরিচিত। প্রতিটি ডোলা ৬ থেকে ৭ শত কেজি চালের ধারণ ক্ষমতার। বিভিন্ন রকমের চাল বস্তাবন্দিও করে রাখা হয় বেচা-কেনার জন্য।

ক্রেতাদের চাহিদায় বিভিন্ন রকমের মুখরোচক খাবারও বিক্রি হয় ভাসমান এই বাজারে। পানিতে জন্ম নেয়া বিভিন্ন জলজ আগাছা, কচুরিপানা বিক্রি হয় যা ভাসমান চাষের জন্য প্রয়োজনীয়।

অন্যান্য বাজারের তুলনায় ভাসমান এ বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনাও বেশি। নদী পথে চলাচল হওয়ায় এ বাজারের পরিশ্রম ও খরচ দুটোই কম। শাক-সবজি, ডাব, আখ, নারকেল, কলাসহ নানা পণ্য পাইকারি ক্রয় করে নৌ পথে সরাসরি ঢাকায় নিয়ে সরবরাহ করা যায় অতি সহজে।

কাক ডাকা ভোর হতে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলে বাজার। সপ্তাহের দুই দিন শনি ও মঙ্গলবারে এই ভাসমান বাজার বসে। কৃষকের ডিঙ্গি নৌকার কৃষি পণ্যের পসরায় দৃষ্টি নন্দন হয়ে ওঠে এই ভাসমান বাজার। বর্তমানে অনলাইনের বদৌলতে হাজার হাজার ক্রেতা দর্শনার্থীর আগমনও ঘটে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মতে, প্রতি হাটে ১০ থেকে ১১ লাখ টাকার বেচাকেনা হচ্ছে। যা সপ্তাহে দাঁড়ায় প্রায় ২২ লাখ টাকা। শীতকালে তা বেড়ে প্রতি হাটে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার কেনাবেচা হয়।

হাবিবুর রহমান
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here