জামদানী শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ থেকে৷ যেখানে জাম অর্থ ফুল আর দানী শব্দটি ফুল রাখার স্থান বলে বিবেচিত হয়। বাঙালীর শত বছরের ঐতিহ্যের ধারা নানাভাবে হারিয়ে যাবার অবকাশেও হারায়নি আমাদের শেকড়ের ভালোবাসায়। আর সেই ভালোবাসা আর তাঁতীদের শ্রমের বুননের গল্প আজও সাজসজ্জায় রঙিন আবেদনে আছে আমাদের জামদানী শিল্প, যেভাবে ফুল সজ্জিত থাকে ফুলদানীতে অনেকটা তেমনই। বাংলাদেশের সেই পুরোনো জামদানীর রেশ গত কয়েক বছরে দারুণভাবে ছড়িয়ে গেছে দেশের তৃণমূল থেকে শহর-নগর ও বিশ্বব্যাপী।

জামদানির প্রচার বাড়াতে নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা মিলে আয়োজন করে “নারায়ণগঞ্জ গ্র‍্যান্ড জামদানী ইভেন্ট”। মূলত প্রাচীন ইতিহাস অনুসারে জামদানীর উৎপত্তিস্থল নারায়ণগঞ্জকেই ধরা হয়। আর সেই সূত্র থেকেই তারা জামদানীর আঁতুরঘর নারায়ণগঞ্জেই আয়োজন করে জামদানীর প্রথম গ্র‍্যান্ড ইভেন্টটি। তারা প্রত্যাশা করে এ ইভেন্টকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে প্রচুর কনটেন্ট আপলোড হবে। যা সরাসরি ক্রেতা ও আগ্রহী সাধারনের মাঝে জামদানির আবেদন আরো বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

১৪ জন ই-কমার্স নারী উদ্যোক্তা মিলে নিজেদের অর্থায়নে জামদানি ইভেন্টের উদ্যোগ নিয়েছিল, যা নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় একটি রেস্টুরেন্টে সফলভাবে সম্পন্ন হয়। ইভেন্ট উদ্যোক্তাদের অন্যতম একজন জান্নাত সুলতানা জানায়, “জামদানী আসলে ব্যয়বহুল নয়, সীমিত সাধ্যেও জামদানী পাওয়া যায়। যা আমাদের আজকের ইভেন্টের প্রদর্শনীতে আমরা সফলভাবে দেখিয়েছি।” এছাড়াও আরেকজন আয়োজক ফারহানা খান বলেন, “বউকে জামদানী সাজে আমরা ইদানিং দেখছি, তবে জামদানী বর, জামদানী পোশাকে শিশু এমনকি জামদানীর বোরকাও যে কতটা নান্দনিক হতে পারে তা দেখে জামদানী গ্র‍্যান্ড ইভেন্টের দর্শনার্থীরা ভীষণ আনন্দিত ছিলেন।”

ইভেন্টের রেড কার্পেট র‍্যাম্প শো’তে জামদানীতে হাঁটেন গায়ে হলুদের বউ, বিয়ের বউ, মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান সহ বিভিন্ন ধর্মালম্বী কনে, বউ ভাতের বউ সহ নানা রঙিন সাজের মডেল। এছাড়াও সেখানে ৬ জন নারী উদ্যোক্তার জামদানী গয়না, শাড়ি, অলঙ্কার, পাঞ্জাবীসহ অন্যান্য পণ্য প্রদর্শনীও ছিল নান্দনিক ঘরানার।

ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজিব আহমেদের ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা বার্তার মধ্য দিয়ে বেলা ১২টা নাগাদ শুরু হয় “নারায়ণগঞ্জ গ্র‍্যান্ড জামদানি ইভেন্ট”। তিনি বলেন, “জামদানির জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জ। এটি নারায়ণগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য। এ জেলা থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে জামদানি। তিনি আরও বলেন, আমি আশাকরি নারায়ণগঞ্জের উদ্যোক্তারা এমন ইভেন্ট প্রতিবছর করবে এবং প্রতি ৩-৪ মাস পর পর ছোট করেও হলেও ইভেন্ট করবে।”

মজার বিষয় হলো ইভেন্টটি শুধুমাত্র জামদানীর প্রদর্শনীর হলেও সেখানে দেশীয় খাতের অন্যান্য অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি সকলকে অভিভূত করে। কেননা একটি পণ্যের পাশে যখন আরেক পণ্যের উদ্যোক্তা এসে দাঁড়ান তখনই একতার সাথে সারাদেশের সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য এগিয়ে যায়। যা ভবিষ্যতের খাদি, পাটসহ অন্যান্য ওয়েভের গ্র‍্যান্ড ইভেন্টেও সমানভাবে নিশ্চিত হবে।

দিনব্যাপী আয়োজনে সেখানে প্রদর্শিত হয় শিশুসহ নানা বয়সের ও নানান আঙ্গিকের জামদানীর প্রদর্শনী। নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকাসহ আশপাশ থেকে আসা শতশত উৎসুক দর্শনার্থী ছাড়াও দেশীয় বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পরার মতো। ইভেন্টটিতে মিডিয়া ও ওয়েব পার্টনার হিসেবে ছিল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন, টেকজুম ডটটিভি, রাইজিং বিডি ও উদ্যোক্তা বার্তা।

সাদিয়া সূচনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here