বয়স খুব জোর বেশি হলে তেরো কি চৌদ্দ হবে। সপ্তম শ্রেণীতে পড়েন। এই বয়সেই নিজ কাঁধে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে। নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে পাড়ি জমালেন ঢাকা শহরে। শুরু করলেন বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ।
কয়েকটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করলেন কিন্তু তার লক্ষ্য যেন পূরণ হচ্ছিল না। তিনি চাচ্ছিলেন এমন কোন ফ্যাক্টরিতে কাজ করবেন এবং কাজ শিখবেন যেন সেই কাজের পুরোটাই তিনি রপ্ত করতে পারেন। যেন ভবিষ্যতে তিনি নিজেই এমন একটি ফ্যাক্টরি দিতে পারেন। তারপর শুরু করলেন শতরঞ্জি তৈরির ফ্যাক্টরিতে কাজ। খুব মনোযোগের সাথে সে কাজগুলো রপ্ত করতে থাকেন। কিভাবে মেশিনে সুতা তুলতে হয় সেখান থেকে সম্পূর্ণ শতরঞ্জি বের করা পর্যন্ত এমনকি পণ্য তৈরির কাঁচামাল কোথা থেকে কিনতে হবে সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা অর্জন করেন তিনি।
এভাবে সম্পূর্ণ কাজ শিখতে প্রায় সাত বছর লেগে যায় , তারপর তিনি ফিরে আসেন তার নিজ গ্রাম বাংলাদেশের শেষ সীমানা পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার পানিহাকায়। সেখানে গড়ে তোলেন তার স্বপ্নের কারখানা ” রংবেরং” হ্যান্ডিক্রাফট। তার এক ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে মাত্র দুটি মেশিন নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনিI যেহেতু তিনি সম্পূর্ণ কাজ গুলোর খুঁটিনাটি জানতেন তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি। তৈরি করা শুরু করলেন দৃষ্টিনন্দন শতরঞ্জি।
বাজারে বেশ চাহিদাও লক্ষ্য করলেন। যোগাযোগ করলেন ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় দোকান গুলোতে, বিভিন্ন পাইকারদের সঙ্গে ক্রমেই তার সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। ফ্যাক্টরির কাজ বাড়তে থাকে একজন থেকে দুজন এভাবে কর্মীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৫ জন। পঞ্চগড়ের পাশাপাশি তিনি ঠাকুরগাঁয়ে আরও একটি ফ্যাক্টরি দিয়েছেন সেখানেও কর্মরত আছেন বেশ কিছু নারী-পুরুষ কর্মী।
শতরঞ্জি ,এম্বুস কার্পেট, কার্পেট, ওয়াল ম্যাট, ফ্লোর ম্যাট, ডোর ম্যাট, রাউন্ড কার্পেটসহ প্রতিদিন প্রায় ৩০ টি শতরঞ্জি উৎপাদন করতে সক্ষম হন উদ্যোক্তা সাইদুল ইসলাম। প্রতি মাসে কমপক্ষে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার বেচা বিক্রি করে থাকেন। ভবিষ্যতে তার ইচ্ছা তার ফ্যাক্টরি আরো অনেক বড় হবে এবং আরো বিভিন্ন জায়গায় তার শাখা থাকবে। সেখানে তার মত কর্মীরা কাজ করবেন এবং তারাও তার মত স্বাবলম্বী হয়ে নিজেই ফ্যাক্টরি দিবে, সেজন্য তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।
মাত্র ২৪ বছর বয়সে দুটি কারখানার মালিক উদ্যোক্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, “আপনি যদি কিছু করতে চান , কিছু হতে চান তাহলে একদমই বসে না থেকে শুরু করুন। সেটা শ্রমিকের কাজ দিয়েই হোক না কেন শুরু করতে হবে। যেমন আমি নিজে করেছি, লক্ষ্য থাকতে হবে যে আমি কি চাই। আমি কি সারাজীবন কাজ করব নাকি আমি ফ্যাক্টরি দিতে পারবো। সেই লক্ষ্যটা ভেতরে ধারণ করতে হবে এবং সেভাবেই নিজেকে এগিয়ে নিতে হবে। আমি চেয়েছি নিজেই কারখানা দিতে আমি পেরেছি আপনি যদি চান আপনিও পারবেন তবে বসে থাকা যাবে না কাজ শুরু করতে হবে একটা সময় আপনি ঠিকই আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন”।
বিপ্লব আহসান