উদ্যোক্তাদের অবদান ও অংশগ্রহণের স্বীকৃতি হিসেবে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০১৮’ পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে একজন মোহাম্মদ গাজী তৌহিদুর রহমান। তার ডিসপজেবল প্লেট, বাটি, গ্লাসের উদ্যোগ নিয়ে এফ এম প্লাস্টিক সে বছর শ্রেষ্ঠ মাঝারি শিল্প খাতের উদ্যোক্তা হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।
বাংলাদেশে যদিও এখন এসব ডিসপজেবল বাসন-কোসনের বাজার বেশ সচল থাকলেও বর্তমান কোভিড-১৯ সংক্রমণে উদ্যোক্তা গাজী তৌহিদুর রহমান অটোমেশন মেশিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৈরি করছেন সার্জিক্যাল মাস্ক। যা সুলভ মূল্যে দেশবাসীরা বাংলাদেশের এসএমই উদ্যোক্তাদের সর্ববৃহৎ অনলাইন মার্কেট www.oikko.com.bd এবং ঐক্য স্টোর থেকে কিনতে পারবেন।
সম্প্রতি ঐক্য স্টোরে অনলাইন লাইভে মুখোমুখি হয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত উদ্যোক্তা গাজী তৌহিদুর রহমান। সেখানে তিনি ঐক্যের পরিচালক (এস এম ই বাণিজ্যিক সম্পৃক্তকরণ উইং) জান্নাতুল ফেরদৌস তিথির সঙ্গে কোভিড-১৯ এর মাস্ক তৈরি করা সহ মাস্কের রপ্তানি, দাম, ব্যবহারসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
উদ্যোক্তা বার্তার গ্রাহকদের জন্য ঐক্য স্টোর লাইভের কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধেই কি মাস্কের বাণিজ্যিক উৎপাদনের কথা ভেবেছিলেন?
উত্তর: কোভিড-১৯ এর শুরুতেই চিন্তা ছিল এর সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। তাই আমি চিন্তা করেছি আমাদের মাস্ক দরকার, মাস্ক ছাড়া আমরা বাড়ির বাইরে যেতে পারব না। তাই দেশে যখন করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা দিল তখন আমরা চিন্তা করলাম কিভাবে আমরা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ভালোমানের মাস্ক উৎপাদন করতে পারি। তো আমরা মার্চের প্রথম দিকেই চীনে মাস্ক তৈরির একটা অটোমেশন মেশিন বাছাই করি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বিমানে করে মেশিনটি দেশে নিয়ে আসি।
এর মধ্যে দেশে যারা মাস্ক বিক্রি করছিল তারা কিন্তু বেশি দামে সেটা বিক্রি করছিল যা আমার কাছে মনে হয়েছে এটা দেশবাসীর জন্য চড়া দাম। তাই আমি স্বল্প মূল্যে দেশবাসীর জন্য মাস্ক তৈরি করছি।
প্রশ্ন: আপনার ফ্যাক্টরির মাস্ক উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে দর্শকদের জানাবেন?
উত্তর: মাস্ক উৎপাদনের আগে আমাদের একটা গবেষণা দল ছিল যারা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে জেনেছে এন-৯৫ এবং সার্জিক্যাল মাস্ক সবচেয়ে বেশি উপযোগী। সার্জিক্যাল মাস্কে আমরা তিনটা লেয়ার ব্যবহার করছি। এটার মধ্যে আমরা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ফেবিক্সও যোগ করতে পারি।
দেশে আগে ম্যানুয়্যাল সিস্টেমে মাস্ক তৈরি হতো নন ওভেন ব্যাগে চাপিয়ে, যা অস্বাস্থ্যকর ছিল। আমরা ডিজিটালি করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা মাস্ক তৈরি করছি। আমাদের মাস্ক তৈরির কর্মীরা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিজেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সুরক্ষিত থেকে সামাজিক দুরত্ব মেনে সকল প্রকার মাস্ক বানাচ্ছে। কর্মীদের জন্য ফ্যাক্টরিতে থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। তাদের বাহিরেও যেতে হচ্ছে না। তাছাড়া আমাদের মাস্কের ফেবিক্স অত্যন্ত উন্নতমানের। প্রতিটি মাস্কেই নোজ বার আছে। আমরা আমাদের মাস্কগুলো বিশ্বমানের বলতে পারি।
প্রশ্ন: শুধুমাত্র দেশের গ্রাহকদের জন্য মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে, নাকি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও রপ্তানি হচ্ছে?
উত্তর: আসলে দেশে উৎপাদনের ২০ থেকে ২৫% শতাংশ বিক্রি করছি। বাকি অংশটা বিশ্বের অন্যান্য দেশে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকাতে রপ্তানি করছি।
প্রশ্ন: কিভাবে মাস্কের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখলেন?
উত্তর: দেখুন আমাদের দেশে যেকোন দুর্যোগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার বাতিকটা পুরাতন। আমরা সে পথে হাঁটিনি। গুণগত মাণ অক্ষুন্ন রেখে স্বল্প মূল্যে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: গ্রাহকের সাড়া কেমন পাচ্ছেন?
উত্তর: দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণে আমরা সাড়া পাচ্ছি। শীঘ্রই আমরা আরেকটি ফুল অটোমেশন মেশিন নিয়ে আসব যার মাধ্যমে প্রতিদিন আমরা পৌনে দুই লাখ মাস্ক তৈরি করতে পারব। আমরা আশা করছি জুলাইয়ের শুরুতে এই মেশিনটি চলে আসবে। আমাদের গুণগত মান ভালো বিধায় আমরা প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি তাই এই নতুন অটোমেশন মেশিন আমাদের সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
প্রশ্ন: মাস্কের ব্যবহার সম্পর্কে পাঠকদের যদি কিছু বলতেন
উত্তর: আমাদের গবেষণা দল তথ্য উপাত্ত বিশদভাবে পর্যালোচনা করে জানিয়েছেন মাস্কে যে কোন প্রকার জীবাণু তিনদিনে মরে যায়। আমরা যদি তিনদিনে তিনটি মাস্ক ব্যবহার করি (প্রতিদিন একটি করে) তাহলে পরের তিনদিনে কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই জীবাণুমুক্ত মাস্ক ব্যবহার করতে পারব।
প্রশ্ন: উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে ঐক্য স্টোরের ভূমিকা কী?
উত্তর: ঐক্য স্টোর অসাধারণ কাজ করছে। অনেক সাহায্য পাচ্ছি তাদের কাছ থেকে। তারা নিজেরাই উদ্যোক্তাদের পণ্যগুলো তদারকি করেন। তাদের জন্য শুভ কামনা।
প্রশ্ন: ঐক্য স্টোরের গ্রাহকদের সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত কী?
উত্তর: আপনার ঐক্য স্টোর থেকে পণ্য কিনুন। দেশীয় পণ্য আর দেশীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে থাকুন। এছাড়াও ঐক্য স্টোরের মাধ্যমে আমার পণ্যগুলি যত বিক্রি হবে তার একটি অংশ মেহনতি মানুষদের মাঝে দেওয়া হবে। তাই আপনারা বেশি করে ঐক্য স্টোরে অর্ডার করুন।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা