উদ্যোক্তা- নাহিদা বানু

পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকরি করবেন এমন ভাবনা সবারই। যশোর সরকারি এম এম কলেজে ইংরেজী সাহিত্যে অধ্যয়নকালেই প্রশিক্ষক হিসেবে একটি কোচিং সেন্টারে যোগ দেন নাহিদা বানু। যেখানে নিজের মেধা আর মননে বিকশিত করেছেন ছাত্রছাত্রীদের চিন্তাচেতনাকে, ভূমিকা রেখেছেন তাদের এগিয়ে চলার পথকে সমৃদ্ধ করতে। এভাবেই চলেছে বেশ কিছুদিন।

সুঁই সুতোয় ফুটিয়ে তুলছেন নিজের মনন

২০১০ সাল, বিয়ের পর যশোর ছেড়ে পাড়ি জমান স্বামীর কর্মস্থল ঢাকায়। শুরু হয় নতুন পথচলা। ঢাকায় এসেই একটি চাকরি নিলেন তিনি। ৯টা-৫টা চাকরির পাশাপাশি ছুটির দিনগুলোতে অবিরাম ঘোরাঘুরি, উচ্ছাস। যদিও এ অধ্যায় বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। জীবনকে আলোকিত করে পৃথিবীতে আসা দুই সন্তান আর সংসার, সবকিছু মিলিয়ে চাকরি ছেড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সংসার নিয়ে। গৎবাঁধা অফিস টাইমে আবদ্ধ না থেকে নিজে কিছু করা যায় কিনা ভাবতে থাকেন। পেয়ে যান নতুন ধারনা।

নাহিদা ইউবি প্রেসকে বলেন, “লেখাপড়ার পাশাপাশি হাতের কাজের প্রতি আমার বেশ দুর্বলতা ছিলো। অনেকটা শখের বশেই নিজের করা ডিজাইনে হাতের কাজ করতাম। বলা যায় নিজের শখকে পুঁজি করেই জমানো কিছু টাকা দিয়ে শুরু করি অফিসে কর্মরত মেয়েদের জন্য পোশাক তৈরির কাজ। এতে আশাব্যঞ্জক সাড়াও পেলাম। যাত্রা শুরু হলো আমার নিজস্ব ব্র‍্যান্ড ‘অপরাজিতা’র। তবে তখনও ডিজাইনের উপর ছিলোনা কোনো পুঁথিগত বিদ্যা। নিজের কাজকে আরো সমৃদ্ধ করার তাগিদে এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে প্রয়োজনীয় কিছু প্রশিক্ষণ নেই। যা আমাকে যুগিয়েছে অনুপ্রেরণা,  কাজের ক্ষেত্রে করে তুলেছে আরোও আত্মবিশ্বাসী”।

উদ্যোক্তার তৈরি হ্যান্ড পেইন্টের শাড়ীনতুন ডিজাইনের স্যাম্পল কপিটা উদ্যোক্তা নিজেই তৈরী করেন। পরে বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করেন রাজধানী ঢাকা ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২ শতাধিক কর্মী। কাজের মান, ফেব্রিক্স ও সুতাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করেন উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠানে তৈরি শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, বিছানার চাদর, নকশী কাঁথা, ব্যাগ ইত্যাদি হোলসেলে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর অনেক নামী শোরুমসহ দেশের বিভিন্ন মেলায়। শুধুমাত্র দেশেই নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও সুনাম অর্জন করেছে তার হস্তশিল্পকর্ম। সুদূর কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব এমনকি দুবাইতেও রয়েছে অসংখ্য গ্রাহক।

উদ্যোক্তার ডিজাইনকৃত হাতের কাজের পণ্য

প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের বিভিন্ন কালচারাল অনুষ্ঠানে শোভা পাচ্ছে উদ্যোক্তার পণ্য। মান ও দামে সন্তোষজনক হওয়ায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্রেতা চাহিদা। এছাড়া একটি ফেসবুক পেইজ এবং গ্রুপের মাধ্যমে চলছে উদ্যোক্তার পণ্যের বেচাকেনা।

তিনি আরোও বলেন, “আমার ব্যবসায় সামগ্রীর ৯৫ শতাংশ ফেব্রিক্স-ই আমি সংগ্রহ করি আমাদের দেশ থেকে। এক্ষেত্রে দেশীয় তাঁতিদের তৈরি উন্নতমানের কাপড় ও মসলিন সিল্ক আমার প্রথম পছন্দ। হাতের কাজের পাশাপাশি ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, বাটিক, টাইডাই, হ্যান্ড পেইন্টের কাজও করি। রয়েছে ম্যানুয়াল ও ডিজিটাল এমব্রয়ডারি কারুকাজ।

নকশী চাদরে সুঁই সুতোয় ব্যস্ত কর্মীরাভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে নাহিদা ইউবি প্রেসকে বলেন, ” নিজের করা ডিজাইনের পাশাপাশি ক্রেতার পছন্দের ডিজাইনেও কাজ করি। ভবিষ্যতে প্রয়াত বাবা-মায়ের নামে একটি ফাউন্ডেশন করার চিন্তা রয়েছে আমার। যেখানে বিনামূল্যে কাজ শিখিয়ে দক্ষ কর্মীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরো অবদান রাখতে পারবো। পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য সেখানে থাকবে খাদ্য, বস্ত্র ও সুচিকিৎসার সুব্যবস্থা”।

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here