ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি, বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করে বেরোলেন এক ঝলমলে তরুণ, প্রায় ১ বছর কাজ করলেন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে। এর পর দেশীয় দুটি প্রতিষ্ঠানে ২ বছর। এই তিনটি বছরই চাকরী করেছেন বকশী আলাউর রহমান।
চিত্রঃ উদ্যোক্তার বাউন্টি ফুড পণ্য
আর প্রাইভেট চাকরী নয়, সরকারী চাকরী।সরকারী পরীক্ষা দিয়ে পিএস সি নিয়োগে হলেন শিক্ষা অফিসার। ৭ বছর কাজ করলেন একটানা। স্ত্রী ও সরকারী চাকুরে। দুইজনকে থাকতে হয় দুই প্রান্তে। পরিবার কে সময় দেয়া, সন্তান কে লালন পালন, এর জন্য স্ত্রীকে চাকরী থেকে ইস্তফা নিতে বলেননি, কিংবা বলেননি চাকরী করতে পারবেনা। বরং নিজেই কর্মসংস্থান সৃষ্টির তাগিদ, নিজের মতো করে কিছু করতে পারা এই সব কিছু বলে বকশী আলাউর কে নতুন কিছু করবার। বিনয়ের সাথে চাকুরী থেকে নিজেই ইস্তফা নিলেন, কে জানতো ৪০- ৫০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন তিনি?
চিত্রঃ উদ্যোক্তার বাউন্টি ফুড ফ্যাক্টরিতে কর্মীগণ পণ্য উৎপন্ন করছেন
ডিলারশীপ ব্যবসা নিলেন মৌলভী বাজার, পণ্য বাজারে ব্যবসা নিলেন দেশের বেশকিছু স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠানের পণ্যের, ব্যবসা সফলতার মুখ দেখে প্রথম দানেই। ভীষণ প্রত্যয়ী হয়ে উঠলেন বকশী আলাউর রহমান।
উদ্যোক্তার সফলতার গল্প দেখুন ইউটিউবে-দেখতে ক্লিক করুন
৭ জন কর্মী নিয়ে দিন রাত খাটুনি।চাকরী ছেড়ে ব্যবসায় উদ্যোগ সফল হয়, হাসি ফোটে মুখে। ৩ বছরের মধ্যেই, নিজের বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করা বিষয় ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি পড়শোনা লব্ধ জ্ঞান বাংলাদেশের জন্য গুণগতমান, স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য পণ্যে, আন্তর্জাতিক অবস্থানে পণ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার তাগিদ তাড়িয়ে বেড়াতে থাকলো উদ্যোক্তা বকশী আলাউর রহমানকে। দেশজ ফল, সবজি প্রকৃয়াজাত করে ভ্যালু এডেড প্রডাক্ট উৎপাদন শুরু করলেন উদ্যোক্তা। ২০ হাজার টাকার কিনলেন পণ্য। ভয়ে ভয়ে বানালেন।
চিত্রঃ উদ্যোক্তার বাউন্টি ফুড ফ্যাক্টরিতে পণ্য উৎপন্ন হচ্ছে
চলবেতো?চলেছে, আচার এর ওপর প্রথম গবেষণা ও আঘাত, ৩৫ দিনের প্রসেসিং পার হয়ে আমের আচার। ল্যাক্টিক এসিড ব্যাক্টেরিয়া হলো উপকারী এক বন্ধু পাকস্থলীর জন্য, এবং এই মেথড হয়ে দাঁড়ালো সর্ববৃহৎ শক্তি দেশজ এবং অবহেলিত ফল নিয়ে স্বপ্ন ভরা চোখ এবং পড়াশোনা লব্ধ জ্ঞানে বলীয়ান তরুণ গবেষক ও উদ্যোক্তা বকশী আলাউর রহমানের। বিপুল সাড়া মিললো, উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠা করলেন তার প্রতিষ্ঠান বাউন্টি ফুডস। আমের পরে জলপাই, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ফল সাতকড়া। দেশীয় রসুন, একে একে আচারের ফুল ফোটে। ২০ হাজার টাকা নিয়ে শ্রদ্ধেয় বড় ভাই বকশী মেজবাউর রমান এর ফ্যাক্টরীর ছোট্ট এক কোনায় গবেষণা করে যাত্রা শুরু করা তরুণ উদ্যোক্তার স্বপ্ন বাস্তবে স্থান করে স্থান করে নেয় তার নিজের ব্যবসার উদ্যোগে ৬০০০ স্কয়ার ফিটে।
চিত্রঃ উদ্যোক্তা বাউন্টি ফুডের পণ্যের কাজে ব্যস্ত
আজ বাংলাদেশের উদ্যোক্তার ফ্যাক্টরীতে তৈরী পাপড়ের বিশ্ব সংস্করন প্লেইন রাইস পাপাডামস জায়গা করে নিয়েছে ইউকে, ইউ এস এ, এবং কানাডায়। প্রোডাক্ট লাইনে আজ ২৪ টি প্রোডাক্ট। ছোট্ট, মিনি চাটনী, তেতুল, বরই, জলপাই, আম। রসুনের আচার, সাতকরার আচার, চালতার আচার, আমের আচার, জুল্পাই এর আচার, অরেঞ্জ, স্ট্রবেরি, পাইন এপেল জেলী, ইন্সট্যান্ট মাশরুম সুপ পাউডার, সরিষা ফুলের মধু, মাল্টি হেলথ ফাইবার, বেকিং পাউডার, কাস্টার্ড পাউডার, কর্নফ্লাওয়ার, আমলকি চাটনী, জলপাই চাটনী, আমলকী চাটনী, বরই চাটনী, তেতুল চাটনী, আমের চাটনী নানা প্রোডাক্টে আজ স্বপ্নভরা চোখ নিয়ে পথ চলা শুরু করা উদ্যোক্তার স্বপ্ন, দেশ এবং বিদেশে সমাদৃত। কর্মসংস্থান হয়েছে ৪০ জন কর্মীর। মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করছেন।