ছোটবেলায় মায়ের কাজ দেখেই হাতের কাজে হাতেখড়ি দিলরুবা তালহার। কলেজ ভার্সিটিতে পড়াকালীন সময় নিজের ড্রেস নিজেই বানানোর পাশাপাশি নিকটাত্মীয় প্রতিবেশিদের ড্রেসে হাতের কাজ করে দিতেন শখের বসেই।
সরকারি কর্মকর্তার সাথে বিয়ে অতঃপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সুবাদে যেখানেই গিয়েছেন স্থানীয় নারীদের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন রকম শাড়ী, টু পিস, থ্রি পিস, বিছানা চাদর, পর্দা তৈরী করেছেন এবং নতুন কাজ শিখেছেন।
শুরুরদিকে শখের বসেই পরিচিত পরিজন, আত্মীয় স্বজনদের নানান হাতের কাজ করে দিতেন পারিশ্রমিক ছাড়াই। সবাই প্রশংসা করতো তার কাজের।
ধীরে ধীরে কাজের পরিধি বাড়তে থাকলো। তবে হাতে ছিলোনা মূলধন। স্বামীর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিলেন উদ্যোক্তা। ২০১০ সালে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৯৯ পিস পর্দা অর্ডার পেয়ে কাজ সম্পন্ন করার পর ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। এটাই ছিলো উদ্যোক্তার প্রথম উপার্জন।
নিজের কাজ সম্পর্কে দিলরুবা তালহা বলেন, “আমি সাধারনত অর্ডার ভিত্তিক কাজ করি। এক জায়গায় বেশিদিন না থাকতে পারায় এখনো শো-রুম করিনি। কারখানা করলেও সেটা দীর্ঘমেয়াদী নয়। তাই প্রতিনিধি তৈরী করে কাজ সম্পন্ন করাই”।
বর্তমানে নকশীকাঁথা, নকশী শাল, টু পিস, থ্রি পিস এবং নকশী ডিজাইনে বাহারী সিল্ক শাড়ী তৈরি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মসলিনে হ্যান্ডপেইন্ট, এমব্রয়ডারি, হাতের সেলায়ের কাজ হচ্ছে ঢাকায়। জামদানী, সিল্ক, সুতি শাড়িতেও নান্দনিক ডিজাইন যোগ করছেন উদ্যোক্তা।
তিনি বলেন, “আমাদের মসলিন, সিল্ক, জামদানী এমনিতেই জনপ্রিয়। আমি শুধুমাত্র সাথে আমার নিজস্ব কিছু ডিজাইন যোগ করে পরিবেশন করেছি। তাতে সাড়াও পাচ্ছি ব্যাপক।”
ঢাকায় বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন উদ্যোক্তা। এছাড়াও সম্প্রতি তিনি ইন্ডিয়াতে ইন্টারন্যাশনাল মেগা ট্রেড ফেয়ারে অংশগ্রহন করে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
ই-কমার্স মেলায় প্রেসিডেন্ট অব ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর দিলারা খান উদ্যোক্তার কাজের গুণগত মান দেখে খুব প্রশংসা করেছিলেন। পরে লন্ডনে ফিরে গিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা মূল্যমানের কাজের অর্ডার দেন উদ্যোক্তাকে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই চাহিদামত পণ্য পৌঁছে যায় লন্ডনে।
তিনি আরও বলেন, “লন্ডনে আমার পণ্য বিভিন্ন এক্সিবিশনে যাচ্ছে। আমি আমার দেশের পণ্য বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে চাই”।
বর্তমানে যশোরে ২৫ জন নারী ঘরে বসেই উদ্যোক্তার সাথে কাজ করছেন। এছাড়াও ঢাকায় অস্থায়ী কারখানায় হ্যান্ড পেইন্ট, এমব্রয়ডারী মেশিনের কাজ করছে ২৫ জন।
নিজের প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “বড় কোনো অর্ডারের ক্ষেত্রে মূলধন একটা বড় সমস্যা। স্থায়ী শো-রুম না থাকায় আমি ব্যাংক লোন নিতে পারছিনা”।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, “পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে আমি বদ্ধপরিকর। আমার সাথে যেসব কর্মী বোনেরা কাজ করছেন তাদের সাথে নিয়ে আমি অনেকদূর এগিয়ে যেতে চাই”।
খুরশিদা পারভীন সুমী