রেশম নগরীতে ‘রেশম কন্যা’র গ্রামীণ চেক

0
উদ্যোক্তা আরেফিন আহমেদ

‘রেশম কন্যা’র স্বত্বাধিকারী আরেফিন আহমেদ। জন্মস্থান রাজশাহীতে হলেও বাবা-মায়ের চাকরির সুবাদে দেশের নানা প্রান্তে কাটিয়েছেন শৈশব-কৈশর। দেশসেরা রাজশাহী কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। স্বাধীনচেতা আরেফিন অন্যের অধীনে থেকে চাকরির বিষয়টি বরাবরই অপছন্দ করতেন। তাই পরিবারের সকলে চাকরিজীবি হলেও তিনি অনেক আগে থেকেই নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করানোর কথা ভাবতেন।

‘ব্যবসা দাঁড় করাবো বা উদ্যোক্তা হবো’– এমন চিন্তা যখন করলেন তখন কোন পণ্য নিয়ে কাজ করবেন সেটাও নিশ্চয়ই বড় ভাবনা ছিলো। বিষয়টি কিভাবে নির্বাচন করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন: আমি বাসায় পরার জন্য গ্রামীণ চেকের থ্রি-পিস ব্যবহার করতাম। পরে খুব শান্তি পেতাম। তাই পরবর্তীতে আবারো কিনতাম। এভাবে গ্রামীণ চেকের উপর আলাদা ভালো লাগা তৈরি হয়। এছাড়াও সব দেশের পোশাকের একটি নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিসমৃদ্ধ পোশাকের অন্যতম গ্রামীণ চেক। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে নিজস্ব সনাতন তাঁতে বোনা জ্যামিতিক বর্ণিল নকশার ঐতিহ্যগত লুঙ্গি চেকের একটি আধুনিক রূপ হচ্ছে আজকের গ্রামীণ চেক। জ্যামিতিক বর্ণিল বুননের এই লুঙ্গি-গামছা একসময় কৃষক অথবা শ্রমিকের পোশাক বলেই গণ্য ছিল। সেই সাধারণ লুঙ্গি-গামছার বর্ণিল নকশা কালের বিবর্তনে হাজারো চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নতুন বর্ণসমতা ও বৈচিত্র্যের ঝুড়ি নিয়ে ফ্যাশন জগতে একটি নতুন নাম গ্রামীণ চেক হিসেবে বিশ্বজুড়ে নিজস্ব স্থান দখল করে নিয়েছে। আমাদের দেশে কতো মধূর ইতিহাস গ্রামীণ চেককে ঘিরে। তাই সবমিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম গ্রামীণ চেক নিয়ে কাজ করবো।

উদ্যোক্তা বলেন, “আমি মূলত গ্রামীণ চেকের থান কাপড়, থ্রি-পিস এবং সিঙ্গেল ওড়না নিয়ে কাজ করি। আমার হাসবেন্ড আমাকে চারটি ড্রেস একসাথে উপহার দিয়েছিলেন, সেগুলোই আমার পুঁজি ছিলো। গ্রামীণ চেকের থানকাপড় থেকে কেউ থ্রি-পিস, কেউ বেবি ড্রেস, ফতুয়া, পাঞ্জাবী কেউবা কাতোয়া যার যার চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে নেন। রাজশাহী নগরীর পাশাপাশি ঢাকার মোহাম্মদপুর, পটুয়াখালী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের অনেক জায়গায় ‘রেশম কন্যা’র থানকাপড় যায়। এবার ঈদে মোহাম্মদপুরে একজনের কাছেই দেড়শ গজ কাপড় পাঠিয়েছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে ‘রেশম কন্যা’র ৯৮ শতাংশই রিপিট কাস্টমার।”

পরিবারকে কতটা পাশে পেয়েছেন এই উদ্যোক্তা?

”আলহামদুলিল্লাহ, শুরু থেকেই আমার পরিবার বিশেষ করে আমার বর আমাকে ভীষণভাবে সহযোগিতা করেছে। রাজশাহীতে যেহেতু এই কাপড় পাই না, তাই আমাকে রাজশাহীর বাইরে গিয়ে সেখানকার তাঁতিদের থেকে ডিজাইন দিয়ে পছন্দের কাপড় তৈরি করে আনতে হয়। এজন্য অন্তত ছয় থেকে সাত দিন সময় নিয়ে সেসব জায়গায় যেতে হয়। সেসময় আমার বর সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করেন।”

বিসিক থেকে উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন আরেফিন আহমেদ। এছাড়াও তার উদ্যোক্তা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে বিশাল ভূমিকা রেখেছে উইমেন্স অ্যান্ড ই কমার্স ট্রাস্ট (উই)। সেখানে রাজিব আহমেদের দিকনির্দেশনামূলক কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশীয় ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন আরেফিন।

রেশম নগরীর এই উদ্যোক্তা বলেন: হাল ফ্যাশনের যুগে বিদেশি ফ্যাশন দেশের বাজার দখল করায় দেশের ঐতিহ্য গ্রামীণ চেক অনেকটা হারিয়ে যাওয়ার পথে। তাই এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান তিনি।

গ্রামীণ চেক হাতে চালানো তাঁতে বোনা হয়। তাঁতটি সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। জনসাধারণের চাহিদা, রুচি ইত্যাদি বিবেচনা করে বিভিন্ন ডিজাইনে গ্রামীণ চেকের কাপড় বোনা হয়। এই কাপড়ের বুনন খুবই সাদাসিধে। টানা সুতায় হালকা রং দেওয়া হয়। বুননের সময় প্রতি ইঞ্চিতে থাকে মোট ৭২টি সুতা। এভাবেই টানা ও পড়েন সুতার তালে তালে তৈরি হয় দেশীয় ঐতিহ্যের কাপড়।

সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনসহ বিশ্বের অনেক বিখ্যাত মানুষ গ্রামীণচেকের কাপড় পরে এর প্রশংসা করেছেন। গ্রামীণচেক শুধু দেশীয় পোশাকের চাহিদাই পুরণ করছে না, বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকেও তুলে ধরছে।

তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা
,রাজশাহী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here