বছর খানেক ধরে পাটপণ্য নিয়ে কাজ করছেন রিভা খান। কাজ করতে করতে জানতে পারলেন পাটপণ্য দিয়ে নান্দনিক নকশার পোশাক তৈরি করা যায়। নিজের আগ্রহ আর ফ্যাশনে সচেতনতা থেকে পাট দিয়ে নানান নকশার বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছেন তিনি।
রিভা খান ধানমন্ডির সিটি কলেজ থেকে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং নিয়ে মাস্টার্স করেছেন। নিজের ফ্যাশন ভাবনা থেকেই নিজের স্বপ্নের পথে হাঁটা শুরু করেন। পাট নিয়ে কাজের শুরু ২০১৯ সালে। ইটিসিশপার (EtcShopper) নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পেইজে পাটপণ্য নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। সম্প্রতি মুঠোফোনে রিভা খানের সঙ্গে উদ্যোক্তা বার্তার কথা হয়। সেখানে উঠে আসে পাটপণ্য নিয়ে তার ভাবনা, শুরুর কথা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সহ নানান বিষয়। উদ্যোক্তা বার্তার পাঠকদের জন্য আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
উদ্যোক্তাবার্তা- অনলাইনে পাটের কি কি পণ্য বিক্রি করা হয়?
রিভা-পাট থেকে তৈরি শাড়ী, ওড়না, হিজাব, গজ কাপড়- এগুলোই আমার মূল পণ্য। এছাড়াও আছে বিভিন্ন নকশার ব্যাগ, ঘর সাজানোর সামগ্রী ইত্যাদি। পাট পণ্য বলতে মানুষের মনে সবার প্রথমেই চলে আসে খুব সাধারণ নকশার ব্যাগ। কিন্তু আমি চাই আমাদের দেশের মানুষ জানুক যে পাট দিয়ে কত সুন্দর সুন্দর নকশার পরিধেয় পোশাক তৈরি করা হচ্ছে যেগুলো ব্যবহারে খুবই আরামদায়ক, দেখতে ফ্যাশনেবল এবং পাট দিয়ে তৈরি হওয়াতে অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব।
উদ্যোক্তাবার্তা- পোশাকের প্রক্রিয়াজাত পদ্ধতি কী?
উদ্যোক্তা রিভা- পাটের আঁশ থেকে প্রথমে সুতা তৈরি করা হয়। তারপর সেই পাটের সুতার সাথে নির্দিষ্ট পরিমান সুতির সুতা কিংবা সিল্ক সুতা ব্যবহার করে কাপড় বুনা হয়। যেক্ষেত্রে সুতি সুতা মেশানো হয় সেটা হয় জুট কটন। আর সিল্ক মেশানো হলে জুট সিল্ক। আমি পাটের শাড়ির দাম ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা রাখছি আর ওড়না ৩৫০-৬৫০ টাকা।
উদ্যোক্তাবার্তা- পাটের পণ্যে গ্রাহকের চাহিদা কেমন?
উদ্যোক্তা রিভা- আমি গ্রাহকের কাছ থেকে সবসময়ই ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি, গ্রাহকদের আগ্রহ আছে। সরকারের পাট অধিদপ্তর, জেডিপিসি সবাই সোনালী আঁশ পাটপণ্য নিয়ে কাজ করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে। সম্প্রতি পাট দিবস উপলক্ষ্যে মেলায় গ্রাহকের উপস্থিতি দেখেই বোঝা গেছে এ পণ্যে গ্রাহকের কতোটা আগ্রহ রয়েছে।
উদ্যোক্তাবার্তা- প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেনিং না থাকলেও নিজের ইচ্ছা আর ইন্টারনেট থেকেই আগ্রহী হয়েছেন একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে। কেমন অনুভূতি এই কাজের সফলতায়?
উদ্যোক্তা রিভা- পৃথিবীর খুব অল্প কয়েকটি দেশে পাট উৎপন্ন হয়। কিন্তু আবহাওয়া এবং জলবায়ুগত কারনে বাংলাদেশের পাট গুনে-মানে পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট। এটা আমি মনে করি একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের জন্য খুব বড় আশীর্বাদ। আমি মনে করি আমার কাজের জায়গা থেকে এটা আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মানুষকে পাট, বাংলাদেশে পাটের সোনালী দিন, পাট পণ্য ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানানো। আমার কাজের মাধ্যমে আমি চাই মানুষের মনে পাটের জন্য আগ্রহ এবং ভালোবাসা তৈরি করতে। সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
উদ্যোক্তাবার্তা- বাংলাদেশ আবার পাটপণ্যে হারানো গৌরব ফিরে পাচ্ছে কি?
উদ্যোক্তা রিভা- গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে পাটের তৈরি পণ্যের মানে এবং নকশায় বৈচিত্র্য আনতে যাতে মানুষ পাট পণ্য ব্যবহারে আরও বেশী আগ্রহী হয়ে ওঠে। শুধু দেশেই না দেশের বাইরের মানুষকেও আমাদের তৈরি পাটের পণ্য সম্পর্কে জানাতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ পাট এবং পাট পণ্যকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করবে কেননা এখন এখানে আছে নানান ফিউশনে কাজের সুযোগ।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা