রাঙ্গামাটির ঐতিহ্যকে নিয়ে বহুদূর যাওয়ার স্বপ্ন

0
উদ্যোক্তা আরাফাত টিপু

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বকীয় ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও গহনায় ভিন্নতা থাকায় তা ফ্যাশন হিসেবেই মনে হয় অনেক মানুষের কাছে। এসব পোশাক ও গহনা নিয়ে রাঙ্গামাটির বাসিন্দারা নিরলস চেষ্টায় ফুটিয়ে তুলছেন পুঙ্খানুপুঙ্খ ডিজাইন। এমনই একজন ডিজাইনার উদ্যোক্তা ইয়াসিন আরাফাত টিপু। শুধু নিজের জন্য নয়, নৃ-গোষ্ঠীর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে কাজ করছেন তিনি।

রাঙ্গামাটির ছোট সদর গ্রামের বাসিন্দা টিপু। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করতেন। কিন্তু মহামারী দুর্যোগের কারণে কর্মস্থল ত্যাগ করার পরপর নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। গড়ে তুলেছেন নিজের কর্মভুবন “জুম বাজার”।

টিপু উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘কর্মস্থল ত্যাগ করার পরপরই নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। পরিবারের মা-বোন, স্ত্রীর সহযোগিতায় প্রথম দিই খাবারের দোকান, সেখানে ব্যর্থ হই কারণ অভিজ্ঞতা ছিল না। পরবর্তীতে যেখানে চাকরি করেছিলাম সেই ব্যবসা নিয়ে কাজ শুরু করা। পরিবারের হাল ধরতে এবং রাঙ্গামাটির ক্ষুদ্রশিল্প বিকাশের সম্ভাবনা উজ্জ্বলের লক্ষ্যে ব্যবসা শুরু করি।’

তিনি বলেন: জুমের বাহারী পোশাক এখন আধুনিক তরুণীদের দারুণ প্রিয়। পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ করা জুম তুলা থেকে তৈরি পোশাকের ফ্যাশন ওই অঞ্চলের ঐতিহ্যের কথাই তুলে ধরে। জুম তুলার সুতা থেকে তৈরি সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া থেকে শুরু করে সব পোশাকেই রয়েছে আকর্ষণ। এখন বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ তরুণদের কথা মাথায় রেখে এসব পোশাকের পাশাপাশি নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রও বিক্রি করছি।

দশ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে প্রথমে লেডিস ব্যাগ তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেন। বাড়িতে কয়েকজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কর্মী নিয়ে শুরু, বর্তমানে দুইজন কর্মী নিয়ে তবলছড়ি, রাঙ্গামাটিতে টেক্সটাইল মার্কেটে একটি শোরুম দিয়েছেন। সেখানে শুধু নিজের পণ্য নয়, নৃ-গোষ্ঠীর পণ্য দিয়ে সাজিয়েছেন নিজের কর্মভুবন। মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় হয় তার।

জুম বাজার শোরুমে সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট বিক্রি হয়। ফ্যাশন হাউজ প্রবর্তনায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তৈরি গামছা, ওড়না, গায়ের চাদর, ব্যাগ ইত্যাদি সরবরাহ করেন উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের মেলাসহ অনেক শোরুমে যাচ্ছে এসব পণ্য।

উদ্যোক্তা টিপু বলেন, “চাকমা, মগ বা মারমা মেয়েরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে যে পোশাক পরেন সেটাকে পিনন বলে। আর এটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক। পোশাকটি উজ্জ্বল রং আর বুননে চমৎকারভাবে তৈরি করে এখানকার নারীরা। থামি কেটে সমতলের মানুষরা সালোয়ার-কামিজ, শার্ট, ফতুয়া, ওয়ান পিস প্রভৃতি তৈরি করছে। এতো কষ্ট করে যে পোশাকগুলো তৈরি হচ্ছে, সেগুলো সহজে আমরা বিক্রি করতে পারছি না। সেজন্য আমি বিভিন্ন বিভাগে মেলায় অংশগ্রহণ করে পণ্যগুলোর প্রচার-প্রসার ঘটাতে চেষ্টা করি। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে শুধু দেশে ,নয় বিদেশেও ঐতিহ্যবাহী পণ্য ছড়িয়ে দিতে চাই।

ফ্যাশন মানেই সংযোজন-বিয়োজন। সেই ধারাকে কেন্দ্র করে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ধারার সঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন আঙ্গিক। যার সঙ্গে সমাদৃত হয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে একজন উদ্যোক্তা ইয়াসিন আরাফাত টিপু। শুধু নিজে নয়, গোটা রাঙ্গামাটির ঐতিহ্যকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান বহুদূর।

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here