মশক নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতার আলোকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ামিতে দেখেছি কিভাবে তারা মশা নিধনে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা বছরের ৩৬৫ দিনই সব এলাকায় একই ওষুধ একই মাত্রায় ছিটাই। কিন্তু মিয়ামিতে আগে মশার প্রজাতি নির্ণয় করা হয়। তারপর ওষুধ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। তাই আমাদের কাজ হবে ল্যাবে মশার প্রজাতি নির্ণয় করে ও আচরণ গবেষণা করে ওষুধ প্রয়োগ করা। ল্যাব স্থাপন করা যেহেতু সময় সাপেক্ষ বিষয় তাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে তাদের ল্যাবে কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে। যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতায় আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি৷ ইতিমধ্যে দুটি সভা করেছি। সেখানে জাতীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কীটতত্ত্ববিদদের সাথে আলোচনা হয়েছে।’
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩) দুপুরে রাজধানীর গুলশান-২ নগর ভবনের হল রুমে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সভাপতির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।
যুক্তরাষ্ট্রের CLDP Consultation Trip এর মাধ্যমে ডিএনসিসির ২০ সদস্যের এক প্রতিনিধিদলের যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিংটি আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক, বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের অর্থায়নে নগর ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি, মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আহরণ পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধিদলটি গত মাসে ফ্লোরিডার মিয়ামি সফর করেছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মেয়র বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি মশক নিধনে সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। মিয়ামি শহরের মতো আমাদের একটি পিআর (পাবলিক রিলেশন) টিম থাকবে যারা শুধু মশা নিধনে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে৷ বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক কার্যক্রম চালাবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো আমাদের দেশেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সোসাইটিগুলোকে সচেতনতা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘মসকিউটস বাইটস আর ব্যাড’—শিরোনামে একটি পাঠ্যবই রয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বইটি পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীরা কার্টুন আকারে রং করে বইয়ের বিষয়বস্তু অধ্যয়ন ও অনুশীলন করে। আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্যও পাঠ্যপুস্তকে ও কার্টুন আকারে এ বিষয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য মশক নিধনে সচেতনতা বিষয়ক আর্ট বুক প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ডিএনসিসির চলমান বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি মিয়ামি শহরের প্রকল্পের মতোই করা হচ্ছে। তারা যেভাবে বর্জ্য সংগ্রহ করে আমরাও সেভাবেই বর্জ্য সংগ্রহ করবো। আমরা ইতিমধ্যে ডিএনসিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক শহরগুলোর মতো ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার স্থাপন করেছি। সিটি কর্পোরেশনের সব গাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। এছাড়াও মাঠ, পার্ক, খালসহ অন্যান্য স্থাপনাগুলোতেও সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে এগুলো মনিটরিং করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে স্থানীয় সংস্থাগুলোর সব এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) আপডেট আইনের আলোকে করা হয়। আমাদের পুরনো রাজস্ব আইন আপডেট করতে হবে। এছাড়াও ডিএনসিসির এইচ আর (হিউম্যান রিসোর্স) কে ঢেলে সাজাতে হবে। মিয়ামি ডেড কাউন্টি এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা দেবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের আদলে এনিম্যাল ও বৃক্ষ হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে বলেও জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।
ডিএনসিসি ও ডেট্রয়েট সিটির সমঝোতা স্মারকের বিষয় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘এই সফরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ডেট্রয়েট সিটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি ইতিহাস সৃষ্টি হলো। এর ফলে দুই সিটির মধ্যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে। দুই সিটির উত্তম কার্যক্রমগুলো শেয়ার করা হবে।’
ডেট্রয়েট সিটি ডিএনসিসির কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে। দুটো শহরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও অভিজ্ঞতা বিনিময় সমস্যা সমাধানে বেশ কাজে দেবে। আশা করি যুক্তরাষ্ট্র সরকার সহযোগিতা করে যাবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।’
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, ‘ঢাকা শহরের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করবে। যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোর উত্তম কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা ঢাকার সাথে শেয়ার করা হবে৷ ডিএনসিসি চাইলে ভবিষ্যতে আরও যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা প্রদান করবে।’
ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের সঞ্চালনায় প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেঃ জেনাঃ মোঃ জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহঃ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলামসহ ডিএনসিসির সকল বিভাগীয় প্রধান, ডিএনসিসির কাউন্সিলর এবং অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা