বেলা তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা। গ্রামের পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন তরুণ যুবক। হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে একটি গাছের নিচে বসে পড়লেন তিনি। হঠাৎ তার শরীরে কিসের যেন কামড় বসলো, তাকিয়ে দেখেন একটি মাছি উড়ে যাচ্ছে। সেটি সাধারণ মাছি নয়, এটি হলো ডাঁশ মাছি। যা বেশিরভাগ অঞ্চলে মৌমাছি নামে পরিচিত। গাছের ওপরে চোখ পড়তেই তিনি বিশাল আকৃতির একটি মৌমাছির চাক দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে চারিদিক থেকে তাকে মৌমাছি ঘিরে ফেলে এবং খুব কষ্টে তিনি সেখান থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেন। মনে মনে খুব রাগ হতে থাকে তার। সিদ্ধান্ত নেন ওই গাছের চাকটি তিনি ভাঙবেন। সে অনুযায়ী স্থানীয় লোকজন থেকে খবর নিয়ে তিনি জানতে পারেন ১৪ দিন পর চাকটি ভাঙা হবে। চাক ভাঙার দিন তিনি সঠিক সময়ে পৌঁছে যান সেখানে এবং মাওয়ালের সহযোগীতায় চাকটি ভেঙে প্রচুর পরিমাণ মধু সংগ্রহ করেন।
এই যে গল্পটি পড়ছিলেন, যাকে কেন্দ্র করে গল্পটি আবিষ্কার হলো তিনি হলেন সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়ার মোঃ আব্দুল বারী ইবনে জামান। মনে মনে তিনি ভাবতে থাকেন এই মধুগুলো দিয়ে কি করা যায়? প্রশ্নটি ভাবিয়ে তুলছিলো মোঃ আব্দুল বারী ইবনে জামানকে। সৌভাগ্যবশত বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব জানতে পারেন তার এই মধু ভাঙার কথা এবং সঙ্গে সঙ্গে তার কাছ থেকে মধু কিনে নেয়ার পাকাপাকি কথা বলেন। শুরু হলো উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা।
মধু টেস্ট করার পর আব্দুল বারীকে জানান এ রকম খাঁটি মধু তিনি আরো নিতে চান। নিজ গ্রাম, পাশের গ্রাম এবং আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে আব্দুল বারীর খাঁটি মধু সংগ্রহের উদ্যোগের কথা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে খাঁটি মধুর চাহিদা। সবচেয়ে মজার এবং অবাক করা বিষয় হলো, যে অর্ডার আসছিলো, সেসবের একশো ভাগের পঁচাত্তর ভাগই ছিলো পুরাতন গ্রাহকদের অর্ডার। একজন উদ্যোক্তার কাছে রিপিট কাস্টমার আসা মানে তার পণ্য যে শতভাগ খাঁটি তার প্রমাণ পাওয়া। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন আদরের বড় ছেলে আয়ানের নামে। ‘Ayaan Mega Malls’ নামে তার একটি ফেইসবুক পেজ রয়েছে।
এইভাবে গুটি-গুটি পথ ধরে একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে তিনটি, তিনটি থেকে চারটি এমন করে ৩শ’ টিরও অধিক চাক ভেঙেছেন আব্দুল বারী। চলার পথে পরিচিত হয়েছেন ৩০ জন মাওয়ালের সঙ্গে।পণ্যের গুণগত মানে দেশের আনাচে কানাচে তো বটেই দেশের বাইরেও ২২ টি দেশে আয়ানের খাঁটি মধু পৌঁছে দিয়েছেন। বলে রাখা ভালো জাতিসংঘে কর্মরত কিছু ব্যক্তিও আয়ানের মধুর স্বাদ গ্রহণ করেছেন এবং তারা আয়ানের পুনঃগ্রাহকের তালিকাভুক্ত হয়েছেন বেশ কয়েকবার।
শুনলেন আব্দুল বারীর ৩শ’ চাক ভাঙার গল্প। প্রিয় পাঠক, একবার ভাবুন ৩শ’ চাকের পেছনে কত হাজার ক্রেতা জড়িয়ে আছেন। বাঙালিরা কিছু পারুক আর না পারুক ভালো পণ্যের কদর মন উজাড় করে দিতে জানেন। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কিন্তু আব্দুল বারীর খাঁটি মধু। মাত্র কয়েক দিন আগে যাত্রা শুরু করে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশ থেকেও সুনাম কুড়িয়ে চলেছে স্বপ্নবাজ তরুণ উদ্যোক্তা মোঃ আব্দুল বারী। আঞ্চলিক মেলাতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মেলায় পথচলা শুরু করেন এবং বিসিক ঐক্য উদ্যোক্তা মেলা তার দ্বিতীয় মেলা। “Purity is Our priority” এই স্লোগান নিয়ে অদম্য শক্তিতে সামনে এগিয়ে চলছে ‘আয়ান মেগা মলস্’।
তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা