বাংলাদেশের ফ্যাশন শিল্প অঙ্গনে প্রায় কুড়ি বছর পথচলা বিবিয়ানার। বহু মানুষের ঘামে-শ্রমে তৈরি হয় একটি পোশাক। সুতা থেকে সেলাইকারী, পূর্ণ পোশাক তৈরিতে অনেকের নান্দনিক চোখ ও মস্তিষ্ক যুক্ত থাকে। পোশাকের গায়ে ফুটে ওঠে স্বদেশের চেতনার রং ও নান্দনিক কারুকাজ। আর বিবিয়ানার বিশেষত্ব হলো, প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্তদের নব্বই শতাংশই নারী। নারীর কর্মসংস্থান তৈরিতে এ ফ্যাশন হাউসের অবদান রাখেন।
চারুকলার শিক্ষার্থী লিপি খন্দকার সপ্তম শ্রেণিতে পড়া থেকেই নিজের মনের আয়নায় উঁকি দেওয়া আলপনাগুলো ফুটিয়ে তুলতেন নিজের পোশাকে। পরে নিজেই গড়ে তোলেন ফ্যাশন হাউস বিবিয়ানা। তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত এ প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে মানুষের মনে স্থান করে নেয়। এখন ফ্যাশন অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত নাম। অবশ্য বিবিয়ানার অংশীদারও রয়েছেন লিপি খন্দকারের স্বামী কাজী হাসিবুল আহসান।
উদ্যোক্তা লিপি শুরুতে বলেন, ‘২০০১ সালের নভেম্বরে বিবিয়ানা শুরু করেছিলেন। যখন শুরু করেন তখন ভাবেননি এতদূর চলে আসতে পারবেন। তখন আর্ট কলেজে পড়েন। তার আগে আড়ংয়ে কাজ করতেন। সেখানে ৮ বছর কাজ করার পর পারিবারিক কারণে চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়। পরে ভাবলেন এতদিন একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেন, নিজের কাজের সিগনেচার নিয়ে একটা এক্সিবিশন করলে কেমন হয়। সেই এক্সিবিশন করতে গিয়েই বিবিয়ানার শুরু। এক্সিবিশন করার পর যে পোশাকগুলো ছিল তা দিয়েই একটি বুটিক করা য়ায় কিনা সেটা ভাবতে থাকেন। ধানমণ্ডিতে বাসার কাছেই একটা বাসা পেয়ে যান তিনি। সবকিছু তার মনের মতো পেয়ে গিয়েছেলন। এভাবেই বিবিয়ানার জন্ম। ‘
‘একে একে জানতে জানতে অনেক লোক জেনে গেল। সবাই বিবিয়ানায় আসা শুরু করল। মাত্র ২২০০ ফিটের মধ্যেই একজন মানুষের দাঁড়ানোর জায়গাও থাকত না। এটা আমার ইন্সপাইরেশনের একটা বড় জায়গা বিবিয়ানার জন্য। যখন শুরু করি তখন ভাবিনি এতদূর আসতে পারব’।
উদ্যেক্তা লিপি খন্দকার একজন শিল্পী। পোশাকের শিল্পী। পোশাক ডিজাইনের পাশাপাশি তিনি একাধারে বিবিআনা ফ্যাশন হাউজেরও কর্ণধার। আর্ট কলেজে ড্রইং এন্ড পেইন্টিংয়ে পড়ে শুরু করেন ফ্যাশন হাউজ ‘বিবিয়ানা’। সেই থেকে শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাংলাদেশের মান সম্মত ফ্যাশন হাউজের কথা বলতে গেলে ‘বিবিআনা’র নাম সবার আগে চলে আসবে। ১৩ বছরের সাধনার ফসল বিবিআনা ও দেশের বর্তমান ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে লিপি খন্দকার কথা বলেছেন উদ্যোক্তা বার্তাই।
স্ট্রাগলের জায়গা ছিল অন্য জায়গায় তার। কাস্টমারের জন্য ভাবতে হয়নি কখনও। সেই হাউসের ২২০০ স্কয়ার ফিট স্পেসটা ডিসপ্লের জন্যও এত প্রোডাক্ট ছিল না। এক্সিবিশনের যে তিন চারশো প্রোডাক্ট ছিল তা দিয়েই তো শুরু করেছিলেন। মাথায় কোনভাবেই ভাবনা ছিল না যে অতবড় আউটলেটের জন্য স্টকতো দূরের কথা, ডিসপ্লেই হচ্ছিল না।
তিনি তাঁতীদের সঙ্গে কথা বলেন। এতো প্রোডাক্ট কোথা থেকে পাব। তাঁতীরা বলল যে, আপা তারাই কাপড় দিচ্ছেন তারপর বিক্রি করে উদ্যেক্তাকে টাকা দিতে বলেন। তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ জানান। শুধু আড়ংয়ের পরিচিত তাঁতীরা নয়, বাইরের তাতীরাও সাপোর্ট দিয়েছে তাকে। এছাড়াও ট্রেইলররাও সাপোর্ট দিয়েছে। এভাবে প্রোডাকশন লাইনটা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়াও ধন্যবাদ জানান সেই সময় থাকা পাশে দুইটা মানুষকে চন্দ্র শেখর এবং মাহিন খান।
বিভিন্ন অকেশন, ঈদ, পহেলা বৈশাখ, ফাল্গুন, বিজয় দিবস এগুলোকে আমরা রং দিয়ে ভাগ করেন।অনেক কলকা ডিজাইন ব্যবহার করেন। এটা অসম্ভব প্রিয় ডিজাইন। এগুলো থেকে মোটিভ নেন। যেমন এবার নিয়েছেন তাস।পহেলা বৈশাখে তাসের বিভিন্ন ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন। এর আগে রিক্সা, রঙধনু, ঘুড়ি নিয়ে থিম ভিত্তিক ট্রেডিশনাল মোটিভ নিয়ে কাজ করেছেন।
এ সকল সফলতার জন্য তিনি তার মাকে ইন্সপাইরেশনের মানেন। তিনি বলেন, ‘আমার আম্মা সব বোনদের জন্য নিজের হাতে কাপড় তৈরি করতেন। মূলত সেখান থেকে ডিজাইন করা শিখিছি।আম্মাকে দেখে দেখে ডিজাইন এর প্রতি আগ্রহ, মায়া আরও বেশি বেরে যায়।সেখান থেকে এখন পর্যন্ত আমার এত দূর আসা।’
নতুন যারা আসে তাদের জন্য বলেন, ক্রিয়েটিভিটি, হার্ড ওয়ার্কিং ও ধৈর্য্য, এই তিনটি জিনিস থাকতে হবে। ক্রিয়েটিভির মধ্যে নিজের মেধাটা লাগবে। নেট থেকে কপি করলে হবে না। পরিশ্রম করতে হবে। একদম পাশ করা ডিজাইনাররা এখানে কাজ করতে আসে তাদেরকে আবার একদম জিরো থেকে শেখাতে হয়। ধৈর্য থাকতে হবে।
স্বপ্ন দেখা ভুল নয়। স্বপ্ন ছোট হোক অথবা বড়। তা একজন শিল্পীর ততক্ষণ তৃপ্তি মিটাতে পারেনা যতক্ষণ তার স্বপ্ন পূরণ না হয়, তা প্রমাণ করেছেন সফল উদ্যোক্তা লিপি খন্দকার।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা, ঢাকা