মেডিকেল ছাত্রী থেকে উদ্যোক্তা

0
উদ্যোক্তা - সাজিয়া রহমান।

একজন তরুণী, মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। পারিবারিক কারণে স্বপ্ন ভেঙে খান খান। পড়াশোনা করা হলো না মেডিকেল কলেজে। তবুও এতটুকু দমে গেলেন না তরুণী। আত্মকর্মে বলীয়ান হওয়ার জন্য উদ্যম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। করলেন একটি মাত্র কম্পিউটার কোর্স। কর্মমুখী শিক্ষায় ৩০ হাজার তরুণ-তরুণীর জীবনমান বদলে দেয়া একজন নারী, একজন উদ্যোক্তা। জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্ত নারী উদ্যোক্তা সাজিয়া রহমান।

মেডিকেল কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়াশোনা চলাকালীন বিয়ে হয়ে গেল। পারিবারিক কারণে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ফেলতে হলো সাজিয়াকে। একজন তরুণী যখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন, মেডিকেল কলেজে পড়ে একজন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন যখন ভেঙে খান খান হয়ে যাই, তখন কতটাই না কষ্ট হয়। না, এতটুকু দোমে গেলেন না সাজিয়া। বেসিক কোর্স করে ফেললেন এবং শুরু করলেন একটি জব। ২০০৭ সাল, কম্পিউটার ট্রেইনার হিসেবেও একটি জব করা হলো । ২০০৬-৭ জব চলছে, ট্রেনিং দিতে শুরু করলেন একটি বেসরকারী সংস্থার সাথে। সেলাই ট্রেনিং, ব্লক-বাটিক এবং অন্যান্য কাজে। জনাব মান্না, যিনি প্রথমে সফল আত্মকর্মী হতে শিখিয়েছিলেন তিনিই পার্টনারশীপ করলেন তার স্বীয় ব্যবসায়।

২০০৮ সাল, নিজের চাকরি থেকে জমানো কিছু টাকা এবং বাবার কাছ থেকে নেয়া কিছু টাকা নিয়ে সব মিলিয়ে আড়াই লক্ষ টাকা হলো। ২০০৮-এর এপ্রিল মাস, সাজিয়া রহমান ৬০০ স্কয়ার ফিটের একটি সেন্টার খুললেন। এক পাশে চললো কম্পিউটার ট্রেনিং, আরেকটি পাশে সেলাই, ব্লক-বাটিক, পার্লার। নিজের কর্ম হলো শুরু। ২০০৮ সাল, প্রথম মাসেই ৩০ জন কম্পিউটার স্টুডেন্ট। পরের মাসেই ১০ জন পার্লারে। তারপর আরো ১০ জন। কম্পিউটার, সেলাই, ব্লক-বাটিক, পার্লার, নতুন নতুন কোর্স ইন্ট্রোডিউস করেন সাজিয়া। মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ২০০৯ ইলেকট্রিকাল এন্ড হাউজ ওয়্যারিং, ফ্যাশন ডিজাইন কোর্স। ২০১১, ১২ এই সকল সালগুলো যেন নিজের আত্মকর্মে বলীয়ান হওয়ার বছর সাজিয়া রহমানের জন্য। প্রথম সন্তান এবং ভীষণ স্ট্রাগল করে নিজের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চালানো। ২০১৪ সালে ১৫০০ থেকে ২০০০ জন ছাত্র। ৬৫০ স্কয়ার ফিটে আলো ঝলমলে হতে থাকে ট্রেনিংয়ে। এক একজন বেরোতে থাকেন আত্মকর্মে বলীয়ান হওয়ার নতুন স্বপ্ন চোখে মুখে আঁকতে থাকেন সাজিয়া রহমান। যুব উন্নয়ণ অধিদপ্তর থেকে ব্লক, বাটিক, সেলাই, কাটিং, ফ্যাশন ডিজাইন, রান্না এবং নানান সময়ে করা নানা কোর্সগুলোকে নিজে ট্রেনিং নিয়ে শিখে অন্যকে আত্মকর্মে বলীয়ান করার যে স্বপ্ন সাজিয়া রহমান চোখে মুখে এঁকেছেন তাই তিনি শিখিয়েছেন তার সেন্টারে। সাথে নিয়েছেন লিডারশিপ ট্রেনিংও। ২০১৪ সালে যুব উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত হলো সাজিয়া রহমান এর নতুন অফিস।

নতুন ট্রেনিং সেন্টার, নতুন এক জোয়ার শুরু হয় উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষক সাজিয়ার জীবনে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে আত্মকর্মী উদ্যোক্তা হতে শুরু করলেন সাজিয়া রহমান। প্রতি মাসে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে ৪০০ থেকে ৫০০ জন স্টুডেন্ট হিসেবে ভর্তি হন আত্মকর্মে বলীয়ান হতে কারিগরি প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নেন বহুমুখী শিক্ষায়। কোনো কোনো বিভাগে ২০০ থেকে ৩০০ জন ভর্তি হতে থাকে। আত্মকর্মে বলীয়ান করে যে সকল তরুণদের ট্রেনিং সম্পন্ন করেন, তাদের উৎপাদিত পণ্য নিজে সাজ বুটিক খুলে এবং সেই সাজ বুটিকের মাধ্যমে বুটিক হাউজ এবং মেলায় প্রদর্শণ এবং বিক্রি করে নতুন আরেক স্বপ্ন শুরু করেন সাজিয়া। ইতোমধ্যে সাজ ট্রেনিং একাডেমি থেকে পার্লার ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে কাজ শেখা প্রায় ১০০জন বা তারও বেশি পার্লার বা বিউটি সেলুন দিয়ে ফেলেছেন এবং শুরু করেছেন স্বীয় ব্যাবসা।
কম্পিউটার ট্রেনিং-এর কথা যদি বলা যায়, তবে সাজিয়া রহমানের কাছ থেকে ট্রেনিং গ্রহণ করে, তার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে ট্রেনিং গ্রহণ করে ১৫ টিরও বেশি ট্রেনিং সেন্টার খুলে ফেলেছেন এখন থেকে শেখা যুবরাই।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের চাহিদা ও সুনাম এবং প্রশিক্ষণ এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আরো বেশি সংখ্যক যুবদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সাজিয়া আরও দুটি শাখা খোলেন। হাজার হাজার যুব ও তরুণ-তরুণী ট্রেনিং নিতে শুরু করেন বিস্তর। ট্রেনিং নিয়ে সকলে এক কর্মমুখী শিক্ষা সম্পাদন করে ঝাঁপিয়ে পড়েন জীবন যুদ্ধে খুন সহজেই। সাজিয়ার পরামর্শ এবং তত্ববধানে এলাকার ২৫ জন যুব ও যুবনারী প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উদ্যোক্তা হিসেবে। সাজিয়ার কর্ম অভিজ্ঞতার করণে ব্র্যাক, সেভ দ্যা চিলড্রেন এবং সুরভী প্রতিষ্ঠানে একজন প্রশিক্ষকের সম্মাননা অর্জন করেছেন সাজিয়া, ট্রেনিং দিচ্ছেন বিভিন্ন বিষয়ে। সাজিয়া রহমানের প্রতিষ্ঠানে ৩০ হাজার যুব ও যুবনারী বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। জীবনের কর্মমুখী পথে এগিয়ে কর্মমুখী শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন আত্মকর্মে বলীয়ান। কর্মসংস্থান সৃজন ও আত্মকর্মসংস্থানের গৌরব স্বীকৃতি স্বরূপ সফল আত্মকর্মী সাজিয়া রহমান অর্জন করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের “জাতীয় যুব পুরস্কার -২০২০”।

নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে উদ্যোক্তা বলেন, “এ-পর্যন্ত আমি অনেক উদ্যোক্তা তৈরী করেছি, আরো বেশি উদ্যোক্তা তৈরি করতে চাই এবং বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে একটি আইডল হিসেবে তৈরি করতে চাই”।

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here