ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির টানেই বাংলার মানুষ এখনো বার বার ফিরে আসে মাটির কাছে, মৃৎ শিল্পের কাছে। প্রতিটি দেশেরই একটি নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি রয়েছে। তেমনি মৃৎশিল্প আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক-বাহক।
বাবু সরকার, খুব সাধারণ একটি পরিবারে জন্ম তার। লেখা পড়ার প্রতি তেমন একটা টান ছিল না। অন্যদিকে পরিবারেরও খুব একটা সামর্থ্য ছিল না বাবুকে পড়ানোর। ছোটবেলা থেকে মাটি দিয়ে বিভিন্ন মূর্তি তৈরি করতে পারতেন বাবু, হয়তো সৃষ্টিকর্তার দেয়া একটি প্রতিভা বলা যেতে পারে। পাশের বাসায় একজন ভারতের আর্ট কলেজের শিক্ষার্থী থাকতেন, তারই কাছে কাজ শেখেন বাবু সরকার।
শুরু হয় বাবু সরকারের নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার যুদ্ধ। ১৯৯০ সালের দিকে মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিজেই বানানো শুরু করেন। তার একাজে পরিবারের সদস্যরাও সহযোগিতা করেন। মাটি দিয়ে সুন্দর ডিজাইন করে তারপর তা রোদে শুকিয়ে জলন্ত চুল্লীতে দিয়ে পোড়ানো হয়। এভাবে প্রায় ৫০ রকম শো-পিচ তৈরি করেন তিনি। সেগুলো প্রথম অবস্থায় স্থানীয় কিছু মেলায় বিক্রি করতেন। তাছাড়া আশেপাশের অনেকেই সুন্দর সুন্দর ডুগি-তবলা, হারমনিয়াম, আয়না, বিভিন্ন মূর্তি ইত্যাদি কিনে নিয়ে যেতেন তার কাছ থেকে।
রাজশাহীর বাইরে ঢাকাতে তার পণ্য গুলো নিয়ে যান এবং সেখানে একটি বড় সুযোগ মিলে উদ্যোক্তার। ২০০২ সালে উদ্যোক্তার পণ্য দেখে বাংলাদেশের একটি সুনামধণ্য প্রতিষ্ঠান আড়ং এর সাথে যুক্ত হন। একা কাজ করা সম্ভব না হওয়ায় তিনি তিন জন কর্মী নিলেন সাথে। নিজের প্রতিষ্ঠানটিরও নামকরণ করলেন ‘কারু কটেজ’ নামে।
পহেলা বৈশাখ আসলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। বৈশাখে বিভিন্ন মেলায় এ মৃৎশিল্পের প্রদর্শন করা হয়। ২০১০ সালে উদ্যোক্তার তৈরি ১০ হাজার পণ্য প্রথম নেপালে যায়। উদ্যোক্তার নিজের কাজের প্রতি ভালবাসা জন্মে দিগুণ। কাজের চাপ বাড়ার সাথে সাথে দুটি কারখানাও নেন উদ্যোক্তা। একটি রাজশাহীর নওদাপাড়ায় অপরটি রাজশাহীর কালীগঞ্জে।
বর্তমানে উদ্যোক্তা আড়ং এ তার তৈরি পণ্য দিচ্ছেন পাশাপাশি নিজ বাসা থেকে আশেপাশের স্থানীয় দোকান গুলোতে দিচ্ছেন। উদ্যোক্তা বাবু সরকারের কারু কটেজটিতে মোট ১৪জন কর্মী কাজ করে যাচ্ছেন।
বাবু সরকার উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, সৃষ্টিকর্তা সহায় হলে আমার নিজের তৈরি পণ্যকে অন্য প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে না, আমাদের এ কারু কটেজটিকে একটি ব্র্যান্ডে পরিণত করতে চাই।
বংশপরম্পরায় চলে আসা বহুসংখ্যক মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান পেশা হিসেবে শিল্পটি আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। তাই হারিয়ে যাওয়া মৃৎ শিল্পকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সেই সাথে এই শিল্পের উত্তরোত্তর প্রসার ঘটাতে তরুণদের উদ্যোগী হয়ে সামনে এগিয়ে আসতে হবে।
রাইদুল ইসলাম শুভ
উদ্যোক্তা বার্তা