মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর গ্রামের আহসান উল্লাহ এসএসসি পাস করার পর পোশাকশিল্প কারখানায় চাকরি করতেন। ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে তিনি হস্তশিল্পের ওপর ঢাকায় প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ২০২০ সালে ৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে নিজ গ্রামে শুরু করেন হোগলাপাতা, খেজুরপাতা, সন্ধ্যাপাতা, কলাপাতা, খড় ও পাট দিয়ে পণ্য তৈরির ব্যবসা। পরে ‘মা-বাবার দোয়া হ্যান্ডিক্রাফট’ নামে হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ধীরে ধীরে তার এই প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
উপজেলার নয়ানগর, ষোলআনি, ফুলদী ও চরকিশোরগঞ্জ গ্রামের অন্তত ১১৫টি পরিবার আহসান উল্লাহর প্রতিষ্ঠানের হয়ে হস্তশিল্পের কাজ করে তাদের ভাগ্য বদলেছেন। পরিবারগুলোর নারী-পুরুষরা তৈরি করছেন ফল ও ফুলের ঝুড়ি, চামচ রাখার ঝুড়ি, বিভিন্ন প্রকার শোপিস, হাতব্যাগসহ নানা পণ্য। গ্রামীণ মানুষের হাতে তৈরি এসব পণ্য বিশ্বের প্রায় ৪৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান আহসান উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘দেশের গন্ডি পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এই হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, যা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের হস্তশিল্পকে উপস্থাপন করছে। এ শিল্পকে ঘিরে উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই শিল্পের পণ্য পরিবেশসম্মত হওয়ায় এর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
আহসান উল্লাহ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজে কিছু করার স্বপ্ন ছিল। এসএসসি পাস করার পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। পরে পোশাক কারখানায় চাকরি করতে থাকি। ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে মামার সহায়তায় ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি হ্যান্ডিক্রাফট তৈরি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ শেষে বেশ কিছুদিন চাকরি করি। তারপর প্রথমে গাজীপুরে কারখানা তৈরি করি। কিন্তু আমার গ্রামের মানুষকে নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন রয়ে যায়। পরে ২০২০ সালে প্রথমে নিজ গ্রামে নারী-পুরুষদের নিয়ে কাজ শুরু করি।’
নয়ানগর গ্রামের হালিমা বেগম (৪০) বলেন, ‘তিন বছর আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ কাজ শুরু করি। অবসর সময়ে ঘরে বসেই এ কাজ করছি। মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা রোজগার হয়। আবার কোনো মাসে বেশিও হয়। এতে পরিবারের বাড়তি রোজগার হচ্ছে।’
সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকারি সহযোগিতা পেলে এই শিল্প বিকাশ লাভ করতে পারবে। মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর বিসিকের উপপরিচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, যিনি এই শিল্পের প্রসারে কাজ করছেন, তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের যদি কোনো সহায়তার প্রয়োজন হয়, আমরা প্রস্তুত রয়েছি। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনে ঋণ দেওয়া হবে।’
ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা