মিরসরাইয়ে প্লাস্টিকের টুকরিতে ভাগ্যবদল

0

পাহাড় থেকে আনা বাঁশ দিয়ে আগে লাই, খাঁচি, টুকরিসহ বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করতেন বিবি ফাতেমা, জেসমিন আক্তার মণি, আমেনা আক্তারসহ অনেকে। কিন্তু দিন দিন পাহাড়ে বাঁশের জোগান কমে যাওয়ায় এবং বাঁশের তৈরি এসব পণ্যের চাহিদা কমতে থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছিল তাদের। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক দিয়ে হাতের কারুকাজসহ ছোট-বড় বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে ভাগ্যবদল করেছেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মেহেদীনগর গ্রামের এসব নারী।

জানা গেছে, উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের দক্ষিণ মেহেদীনগর, উত্তর মেহেদীনগর ও স্টেশন গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই আর্থিকভাবে অসচ্ছল। আগে শীতলপাটি বোনা ও বাঁশ থেকে তৈরি বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করে সংসার চালাতেন নারীরা। এখন শীতলপাটির প্রধান কাঁচামাল পাটি বেত ও পাহাড়ে সামাজিক বনায়নের ফলে বাঁশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় আগের মতো বাঁশ পাওয়া যায় না। বিগত ৮-১০ বছর পূর্বে মেহেদীনগর গ্রামে প্লাস্টিকের বেত দিয়ে বিভিন্ন সাইজের টুকরি, হাতপাখা, ডালা, লাইসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজ শুরু করেন কয়েকজন উদ্যোক্তা। প্রথমে কয়েকটি পরিবার ক্ষুদ্র আকারে প্লাস্টিকের বেত দিয়ে টুকরি তৈরির কাজ শুরু করলেও এখন তা হিঙ্গুলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে গেছে।

পাইকাররা প্লাস্টিকের বেত সরবরাহ করেন; সেই বেত দিয়ে বিভিন্ন সাইজের টুকরি তৈরি করে আবার পাইকারদের কাছে দেন তারা। ছোট টুকরি ১৭ টাকা, মাঝারি টুকরি ২৫ টাকা, বড় টুকরি ৬০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন তারা। প্রতিদিন ১৫-২০টি টুকরি তৈরি করতে পারেন একজন নারী। প্রতি সপ্তাহে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা আর মাসে প্রায় ১২ হাজার টাকা আয় করেন একজন নারী।
 
পাইকাররা নারীদের হাতে তৈরি প্লাস্টিকের টুকরি ২-৩ দিন পরপর সংগ্রহ করে বিভিন্ন মাছের আড়ত, সবজির পাইকারি বাজারসহ ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন বড় বাজারে নিয়ে গিয়ে তা বিক্রি করেন। তবে নারীদের কোনো পুঁজি না থাকায় পাইকাররা তাদের অল্প মজুরি দিয়ে বেশি দামে টুকরি বাজারে বিক্রির করার অভিযোগ করেন কেউ কেউ। তাদের যদি সরাসরি সরকারি প্রণোদনা দেওয়া যায় তা হলে তারা লাভবান হবেন টুকরি বিক্রি করে।

উদ্যোক্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, মেহেদীনগর গ্রাম থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকার টুকরি দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রির জন্য নেওয়া হয়। প্লাস্টিকের বেতের তৈরি টুকরিগুলো দিয়ে মাছ, সবজি কাঁচামালসহ অন্য দ্রব্যাদি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে প্রেরণ করা হয়। টুকরিগুলো অনেক টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় অনেক দিন ব্যবহার করা যায়।

বিবি ফাতেমা বলেন, স্বামী ও ৩ ছেলে নিয়ে তার সংসার। সাংসারিক কাজ শেষে প্রায় সময় অলস সময় কাটাতে হয়। তাই গ্রামের নারীদের থেকে প্লাস্টিকের টুকরি বানানো শিখে তিনিও ২ বছর ধরে টুকরি বানানোর কাজ করছেন। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় দামের মধ্যে যা দিয়ে কিছুটা হলেও সংসারের খরচ মেটাতে স্বামীকে সহায়তা করতে পারেন তিনি।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মেহের আফরোজ বলেন, আমাদের মা-বোনেরা সংগ্রামী জীবনযাপন করেন। প্লাস্টিকের বেত দিয়ে টুকরি তৈরি করে তারা যেভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন সেটি সত্যি প্রশংসনীয়। আমি মেহেদীনগর গ্রাম পরিদর্শন করব এবং সহজশর্তে তাদের সরকারি ঋণ ও ব্যাংক ঋণ পাইয়ে দিতে সহায়তা করব।

হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোনা মিয়া বলেন, ইউনিয়নের ৫ শতাধিক নারী প্লাস্টিকের বেত দিয়ে টুকরি তৈরি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। গ্রামের বেশিরভাগ নারী বিভিন্ন এনজিও থেকে বেশি সুদে ঋণ নিয়ে জর্জরিত। তফসিলী ব্যাংক ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা যদি তাদের সহজশর্তে ঋণ এবং আর্থিক প্রণোদনা দেয় তা হলে টুকরি তৈরির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, সরকারি কয়েকটি দফতর থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। আমি মেহেদীনগর গ্রামের নারীদের টুকরি তৈরির বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করব।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here