মাত্র দেড় বছরে সফল উদ্যোক্তা এনামুল হক

0
উদ্যোক্তা এনামুল হক

মোঃ হাসান আলী এবং মৃত সাহার বানুর ছেলে এনামুল হক। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। জন্মস্থান কুষ্টিয়া হলেও বাবার চাকরি সুবাদে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মাধ্যমিক দিয়েছেন আলমডাঙা পাইলট স্কুল থেকে। তারপরে বাবার বদলি হলো রাজশাহীতে। উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য ভর্তি হলেন নিউ সরকারি ডিগ্রি কলেজে। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন উদ্যোক্তা এনামুল হক।

ছাত্র জীবন শেষ করে প্রবেশ করলেন কর্মক্ষেত্রে। দীর্ঘ ১৭ বছর চাকরি করলেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। প্রতিটি চাকরি ছিলো কৃষিকেন্দ্রিক।একটা সময় তার মনে ভাবনা এলো এই বাঁধাধরা নিয়ম আর লিমিটেড বেতনে চাকরি না করে আমি এমন কিছু একটা করি যেন সেখানে নিজের স্বাধীনতা থাকে। চাকরি ছাড়ার পর তিনি কি নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন এ রকম একটা চিন্তাধারা সব সময় তাঁর মনে ঘুরপাঁক করতে থাকে। কিছু দিন পর তার মনে হলো আমি যেহেতু প্রতিটি চাকরি করেছি কৃষিকেন্দ্রিক, আমার এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বেশ ভালোই ধারণা তৈরি হয়েছে। তাহলে আমি কৃষিকেন্দ্রিক কোনো কাজ শুরু করবো।

২০১৯ সালে দুই বন্ধু মিলে ৬ লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে ‘সাস্টিন্যাবল এগ্রিকালচার সলিউশন’ (SAS – স্যাস) নামে একটি নার্সারি গড়ে তুললেন। প্রথম দিকে নার্সারিতে শুধু চার ধরনের চারা উৎপন্ন করতেন। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে চার ধরনের চারা থেকে স্যাস-এ মরিচ, পেঁপে, লাউ, বেগুন, টমেটোসহ ১৬ ধরনের ক্যাটাগরির চারা উৎপন্ন হচ্ছে উদ্যোক্তার নার্সারিতে। বর্তমানে ৪ জন কর্মী আছে এই প্রতিষ্ঠানে।

স্যাস-এ শুধু চারা নয় এখন পাওয়া যাচ্ছে কৃষি যন্ত্রাংশ। ছাদ কৃষির গুরুত্ব চিন্তা করে তারা সিকেচার, স্প্রে মেশিন, চারা রোপন যন্ত্র, পাওয়ার স্প্রে মেশিন, ঘাস নিড়ানো যন্ত্র ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে নতুন যুক্ত করেছেন। এছাড়াও স্যাস-এর চারার পাশাপাশি অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ককোপিট এবং জৈব সার।

অন্যান্য নার্সারি হতে একটু ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে স্যাস-এ। মাটিতে নয়, চারাগুলো বীজ রোপণ ট্রেতে উৎপন্ন হচ্ছে। মাটির পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে ককোপিট, জৈবসার এবং টাইকোডার্মা। এই পদ্ধতিতে মাটিতে যে পরিমাণ পোকামাকড়ের উপদ্রব হতো সেই তুলনায় অনেক কম উপদ্রব হয় এবং চারাগুলোকে ঝড়, বৃষ্টি, অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে বাঁচাতে এনামুল হক ব্যবহার করছেন ‘শেড নেট’। যা চারাগুলোকে ভালো রাখতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

রাজশাহীর আলিমগঞ্জে জামান মন্ডলের মোড়ে এই নার্সারিটি অবস্থিত। সিনজেন্টা ফাউন্ডেশনের সহোযগিতায় রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলার ৬ টি উপজেলার ৪০ টি নার্সারিতে পৌঁছে যাচ্ছে সাস্টিন্যাবল এগ্রিকালচার সলিউশনের চারা, ককোপিট, জৈবসার, কৃষি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। সাস সহো বাকি ৪০ টি নার্সারিতেও সিনজেন্টা ফাউন্ডেশন সার্বিক সহোযোগিতা করে থাকেন।

এই তিনটি জেলা বাদ দিয়েও তারা সারা দেশে চারাগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন। অনলাইনেও তার প্রতিষ্ঠানের নামে একটি পেজ রয়েছে। সেখান থেকেও তিনি বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন। ৬ লাখ টাকার পুঁজিকে দেড় বছরের ব্যবধানে আরো বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন উদ্যোক্তা।

তরুণদেরপ্রতি লক্ষ্য করে উদ্যোক্তা এনামুল হক বলেন, “পড়াশোনার পাশাপাশি তরুণরা যদি এগিয়ে আসে বিভিন্ন উদ্যোগে তাহলে দেশ অনেক দ্রুত এগিয়ে যাবে।”

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here