ভ্রমণের নেশায় গড়ল নওরিনের পেশা

0
উদ্যোক্তা - নওরিন আক্তার

গ্রিক গল্প কিংবা উপন্যাসের অন্যতম জনপ্রিয় একটি নাম হচ্ছে সারানা। নামটা দেখে হয়ত অনেকের চেনা চেনা মনে হতে পারে। তবে এই নামের বাংলা অর্থ রাজকন্যা। রাজকন্যা বলতে আমরা বুঝি এমন একজন ব্যক্তি যিনি সব সময় দামী দামী গহনা দিয়ে সেজে-গুজে থাকবে । তবে এই চির চেনা চিন্তা-ভাবনার জায়গা থেকে একটু সরে গিয়ে নিজের হাতের তৈরী গহনা দিয়ে তিনি সাজাতে চান সকল রাজকন্যাদের। জ্বী কথা বলছিলাম সারানা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা নওরিন আক্তারের। আসুন শুনি তার গল্পঃ 

নওরিন আক্তার জন্মগ্রহণ করেন ঢাকাতে। ছোট বেলা থেকেই নিজের মেধা দিয়ে নতুন কোন কিছু্ তৈরী করার চেষ্টা করতেন। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিভাগ থেকে।

ছোটবেলা থেকেই ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন তিনি। বড় হয়ে যেন ভ্রমণের নেশা আরো বেড়ে যায়। তাই এই ভ্রমণের বাড়তি খরচটা বহন করার জন্য নিজের শখে তৈরী করা টিপগুলো বিক্রি শুরু করেন।

তিনি কখনও চিন্তা করেন নাই যে, এই শখকে ব্যবসায় রূপান্তরের মাধ্যমে তিনি এত বেশি জনপ্রিয়তা এবং মানুষের পছন্দের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছাতে পারবেন। শুরুটা হয়েছিল বন্ধুদের কথায় ফেসবুকে একটি পেজ খোলার মাধ্যমে। প্রথমে তিনি তার টিপের কিছু ছবি সেখানে প্রকাশ করেন। এই থেকে শুরু হয় তার উদ্যোক্তা হিসেবে নতুন পথ চলা। এরপর আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। কেননা এই পেজের মাধ্যমে এই টিপগুলো খুব জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়াও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সব টিপ তৈরী করে তাক লাগিয়ে দিতেন টিপ প্রেমীদের।

তবে এই যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সাল থেকে । সেই থেকে আজকের এই জায়গায় আসতে পারাটা মোটেও সহজ ব্যাপার ছিল না। কেননা প্রযুক্তির এই যুগে প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্রতিযোগিদের সংখ্যা। যেহেতু তাঁর এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল প্রধানত অনলাইন মাধ্যমে তাই মাঝে মধ্যেই সমস্যায় পড়তেন। সবচেয়ে বড় সমস্যাটা ছিল নিজের হাতে তৈরী করা টিপ তিনি ফেসবুকে প্রকাশ করতেন; তখন অনেকেই সেই নকশাটি চুরি করতো এবং তারা সেটা আরো কম দামে বিক্রি করতো । ফলে এতে তিনি মারাত্মকভাবে মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন এবং দ্বিগুণ অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন যখন তার ক্রেতারা তাকে বলত যে আপু আপনি এটা আগে তৈরী করেছেন! আমরা আপনার কাছ থেকেই নিব।

তিনি হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলেন, আমি কখনো উদ্যেক্তা হবার স্বপ্ন দেখিনি। আমাকে উদ্যেক্তা বানিয়েছে আমার সেই ক্রেতারা যারা আমার পণ্য ক্রয় করতো। তারা আমার পণ্য এতটাই পছন্দ করেছিল যে, আমাকে আরো টিপ তৈরী করতে হয়েছিল তাদের আবদার পূরণের জন্য। আর সেই কাজগুলোর মাঝে প্রশংসা কুড়ানো আমার কাজের গতি যেন আরো বাড়িয়ে দিত এবং অনুপ্রেরণা পেতাম।

এক স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, একবার ঈদের আগে আমি আমার টিপ তৈরী নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় পার করছিলাম। কেননা তখন অনেক মানুষ টিপ চায়। তাই কাজের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এছাড়াও অনেক জায়গা থেকে অনেক মানুষ টিপের জন্য বলে। আর সেই সময়টাতে টিপ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ হচ্ছিলো না; আমার পণ্য পৌছে দেওয়া সেই ছেলেটার। তখন আমি নিজেই স্কুটি নিয়ে বের হয়ে যাই, টিপ মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য। একজন নারী ক্রেতা এটা দেখে অনেক খুশি হয়েছিলেন এই ভেবে যে, একজন মালিক তার পণ্য দিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়াও তিনি আমার অনেক প্রশংসা করেছিলেন এবং অনেকগুলো চকলেট দিয়েছিলেন। এই ভালবাসাগুলোই আমার উদ্যেক্তা হবার পিছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি শুরু করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি মোটামুটি ১৫,০০০ টাকা নিয়ে শুরু করেছিলাম।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি কখনও অন্যের মত হতে চাইবেন না। আপনার যেটা ভাল লাগে সেটা করুন। আপনি অন্যকে দেখলেন যে, সে পোশাকের ব্যবসা করছে আর আপনি শুরু করে দিলেন পোশাকের ব্যবসা। কিন্তু আপনি ভালবাসেন গহনার কাজ করতে । তাহলে আপনি গহনার কাজ করুন। কারণ পোশাকের ব্যবসা আপনাকে লাভ দিবে কিন্তু প্রশান্তি দিবে না। আর ব্যবসা হল প্রশান্তির জায়গা একে অতি লাভের জায়গায় রূপান্তর করবেন না। মনে রাখবেন অতি লাভ সাময়িক, আর ভাল পণের চাহিদা কখনো শেষ হয় না।

ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন একটা কিছু নিয়ে বসে থাকতে পারি না। সে জন্য আমি চাচ্ছি যে টিপের সাথে চুড়ি সংযুক্ত করতে। এছাড়াও পরবর্তীতে পোশাক নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে।

মো.হৃদয় সম্রাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here