বয়নশিল্পীদের প্রতি ভালোবাসা প্রমাণে ‘জামদানি উৎসব’

0

জামদানি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ‘জামদানি উৎসব’ বয়নশিল্পীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রমাণ বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি।

শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে বেঙ্গল শিল্পালয়ে পাঁচ সপ্তাহব্যাপী জামদানি উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামদানি উৎসব আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এসময় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।  প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে জামদানি প্রদর্শনী।  তবে রোববার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।

শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি বলেন,  আজকের এই উৎসব জামদানি শিল্পের, এই শিল্পীদের  প্রতি শ্রদ্ধা  ও ভালোবাসার প্রমাণ। প্রত্যেকটি শিল্পী পরম মায়া মমতা দিয়ে একেকজন শিল্পী পরিশ্রম করে যেমন মা তার সন্তানকে ভালোবাসে ঠিক সেইভাবে তুলে ধরেন তাদের শিল্পকে। তাদের আমরা শ্রদ্ধা করছি।

তিনি বলেন, জামদানি বয়নশিল্প বাংলাদেশের ঐতিহ্যের মৌলিক, উৎকৃষ্ট ও অন্যতম অংশ। পারসিক মোটিফের সঙ্গে বাংলার নিসর্গ ফুল-ফলের নকশা সংযোজন করে বয়নশিল্পীরা জামদানিকে করে তোলেন অনিন্দ্যসুন্দর।

বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওকে ওয়ার্ল্ড ক্রাফটস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ‘ওয়ার্ল্ড ক্রাফট সিটি’র মর্যাদালাভের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

বর্তমান সময়ে উন্নতমানের সুতার অভাব এবং উৎপাদনের অত্যধিক ব্যয় জামদানি বয়নে অন্তরায় দাঁড়িয়েছে। আদি জামদানির অভূতপূর্ব মূলানুগ অনুকরণে সমর্থ এদেশের বর্তমান প্রজন্মের বয়নশিল্পীদের অসামান্য কুশলতা তুলে ধরতেই বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ এবং বেঙ্গল ভিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে জামদানি উৎসব।

জামদানি উৎসবে বক্তারা বলেন, অসাধারণ নকশায় সমৃদ্ধ জামদানি বস্তুত মসলিনের একটি প্রকার, যা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের বয়ন শিল্পীদের হাতে অনবদ্য শিল্পকর্ম রূপ নিয়েছে। ষষ্ঠদশ শতকে মুঘল শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকার নন্দিত মসলিন হয়ে ওঠে সৃজনসৌকর্যে উৎকৃষ্ট নকশাদার জামদানি।

ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে এই অঞ্চলে এবং ইউরোপে ও ইংল্যান্ডে পুরুষ ও মহিলাদের সৌখিন বস্ত্র হিসেবে জামদানি অত্যন্ত আদরণীয় ছিল। বর্তমানে মর্যাদাপূর্ণ পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জামদানি বস্ত্র অপরিহার্য পরিধেয়।

উদ্বোধনী দিনের প্রদর্শনীতে ছিলো পুরোনো সংরক্ষিত শাড়ির সংগ্রহ, সুতা গবেষণাসংক্রান্ত তথ্য – উপাত্তসহ সোনারগাঁও এর কৃতী জামদানি বয়নশিল্পীদের তৈরি একশ বছর পুরনো নকশার  অনুকরণের অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যে নতুন করে বয়নকৃত শাড়ি ও বস্ত্রসম্ভার।

জামদানি বয়নশিল্পের চর্চা ও উন্নয়নে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এমন চারটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান থেকে ২জন করে প্রধান বয়নশিল্পী ও সহকারী বয়নশিল্পীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সম্মাননা পান আড়ংয়ের প্রধান বয়নশিল্পী মোতালেব ও সহকারী সহকারী বয়নশিল্পী নূর আলম। টাঙ্গাইল শাড়ী কুটিরের প্রধান বয়নশিল্পী মো. জামাল এবং সহকারী কারিগর শাকিল।

অরণ্যের প্রধান বয়নশিল্পী ওস্তাদ মো. মনির, সহকারী বয়নশিল্পী আবু বকর। কুমুদীনির প্রধান বয়নশিল্পী ওস্তাদ কারীগর মো. সিদ্দিক এবং সহকারী বয়নশিল্পী মাকসুদা।

জামদানি উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপােরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ অন্যরা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম।

খাদিজা ইসলাম স্বপ্না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here