স্বামীকে সহযোগিতা করে, সংসারের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে মোছাঃ আইনুন্নাহারের একজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। এসএসসি পরীক্ষার পরেই বিয়ে হয়ে যায় একান্নবর্তী পরিবারে। নয় ভাই-বোনের সংসারে সবার ছোট সদস্যও ছিলেন মোছাঃ আইনুন্নাহার। স্বামী ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে বড় ছেলে, একমাত্র উপার্জক, এবং মাসিক আয় মাত্র ১২শত টাকা। স্বামী একা সংসার টানতে পারছিলেন না, তাই স্ত্রীকেও বললেন দু’জনে মিলে সংসার পরিচালনা করার বিষয়ে।

উদ্যোক্তার সফলতার গল্প দেখুন ইউটিউবে-দেখতে ক্লিক করুন

২০০৩ সালে, যুব-উন্নয়ন অধিদপ্তরে সেলাই এবং ব্লক এর ট্রেনিং নিয়ে গোল্ডেন রেজাল্ট করলেন এবং পুরষ্কারে একটি সেলাই মেশিনও পেলেন মোছাঃ আইনুন্নাহার। সাড়ে ছয় গজ করে কাপড়, সুতা, সুঁই, মেশিনের জন্য সব সরঞ্জাম ক্রয় করে, নৈপুণ্যতার সাথে হ্যান্ড-প্রিন্ট ও সেলাইয়ের কাজ করে থ্রি পিস, শাড়ি বানালেন এবং তা দেখতে দু-চার জন ক্রেতাগণও এলেন।  ১২শত টাকা দিয়ে বিক্রি হয়ে গেল প্রথম থ্রি পিস সেটটি। এই ক্ষুদ্র সফলতা মোছাঃ আইনুনাহারকে আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী করে তুললেন। নিজের মেধাকে ব্যবহার করে কাপড়ে নানান ডিজাইন, ‘কারচুপির কাজ করে তা ক্রেতাদের নিকট বিক্রয় করবার এবং ব্যবসাকে ধীরে ধীরে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে উদ্যোক্তা অগ্রসর হতে থাকেন।

উদ্যোক্তা ও তার কর্মী পোষাক তৈরি করছেন

উদ্যোক্তা বার্তাকে আইনুন্নাহার বলেন, “পারিবারিক আর্থিক অবস্থা উন্নয়নে স্বামীর একার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পরছিলো, তাই তার পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে, তাকে সাহায্য করবার তাগিদ থেকেই একজন উদ্যোক্তা হবার পথটা বেছে নেই। “

মোছাঃ আইনুন্নাহারের শত বাধাবিঘ্ন পার করে উদ্যোক্তা হবার পথচলা, তার সুন্দর ও নৈপুণ্য কাজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। ময়মনসিংহ জেলা শহরের তিনটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল থেকে প্রতিটির ২৫০০ টাকা অর্থাৎ ৭৫০০ টাকা, প্রথম বাণিজ্যিক ব্যবসায় পুঁজি হিসেবে আইনুন্নাহারকে পথ চলার শক্তি দেয়। ২০০৭ সালে, দুই হাজার ছাত্র-ছাত্রীর পোশাকের অর্ডারের কাজ করে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মোছাঃ আইনুন্নাহারকে, অর্ডার আসতেই থাকে। ২০০৮ সালে, নানান বেসরকারি উন্নয়ণ সংস্থা সমাজে অবহেলিত বা পিঁছিয়ে পরা সুবিধা বঞ্চিত নারী এবং কিশোরীদেরকে নিয়ে অনেক ট্রেনিং দেবার জন্য উদ্যোক্তা এবং ট্রেইনার আইনুন্নাহারের কাছে কোর্স মডিউল দিলেন। উদ্যোক্তা অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্ত হতে থাকেন এবং প্রতিষ্ঠা করলেন তৃণমূল কারুপণ্য।

উদ্যোক্তার তৈরিকৃত পোশাক ও তার শো রুম

উদ্যোক্তা আইনুন্নাহার বলেন, ” যুব-উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে নেয়া ট্রেনিং, নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে এবং সমাজের অন্য সকল নারীদেরও স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার এক প্রবল লক্ষ্য ডাকছিলো আমাকে। তাছাড়া, প্রায় নিয়মিত ৬৩ জন কর্মী কে নিয়ে এগিয়ে চলা আমার। পোশাক-পাঞ্জাবি, থ্রি পিস, শাড়ি, বেডশিট, নকশী কাঁথা। ১০ পিস, ৫০ পিস, ১০০ পিস, ৫০০ পিস করে সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং উৎসবের সকল পোশাক তৈরি করা শুরু করলাম।”

পোশাক তৈরির কাজে কর্মীদের কর্মব্যস্ততা

২০১০ সাল, যখন একজন উদ্যোক্তা এগিয়ে যায় সফলতার কাজে, তখনই উদ্যোক্তা সফলতার দেখা পান। যুব-উন্নয়ণ অধিদপ্তর উদ্যোক্তা আইনুন্নাহারকে সফল আত্মকর্মী যুব-নারী হিসেবে পুরষ্কার দিলেন। সেই সাথে বাড়লো তৃণমূল কারুপণ্যের কাজ, কাজের পরিধি। ডিবি রোডে ৫০০ স্কয়ার ফিটে প্রায় ৫০ জন কর্মী নিয়ে নিজের কর্মের ভুবন সাজিয়ে উপহার দেন উদ্যোক্তা। ২০১৩ সাল, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ‘জয়ীতা’ সম্মাননা পেলেন উদ্যোক্তা আইনুন্নাহার। ময়মনসিংহ জেলার নারী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ণ ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন,  সেখানে ২০০ জন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা ও তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের রেজিস্ট্রেশন, সকল বিষয়ে কাগজ এবং নথি তৈরির গতিশীলতা প্রদান করা হয়।

নতুন প্রজন্মকে সফল উদ্যোক্তা হবার পথে আহবান জানিয়ে আইনুন্নাহার বলেন, “মূলধন একজন উদ্যোক্তার হেরে যাবার কারণ বা তার সফলতার মূল বিষয় হবে, তা আমি কখনোই বিশ্বাস করি না। একজন উদ্যোক্তার আত্মবিশ্বাস, মনোবল, অনড় স্পৃহা, সৃজনশীল জ্ঞান, ধৈর্য্যশীলতা এসব কিছু হলো তার সফলতার পথচলার পোক্ত আশ্রয় এবং উদ্যমতার প্রাণশক্তি”।

মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে মাত্র দুই হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ, ৬৩ জন নিয়মিত কর্মী এবং ৩০০ জন চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মীদের নিয়ে জুট, লেদার,  বেডশিট, নকশি কাঁথা, সালোয়ার কামিজ, স্কুল পোশাক, উৎসব পোশাক মিলেয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ব্যবসা পরিচালনা করছেন সারা বাংলাদেশে সফল নারী উদ্যোক্তা আইনুন্নাহার।   

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here