বৈশাখ মাতাবে রাজশাহীর ‘শখের হাঁড়ি’

0

মাটির তৈরি বিভিন্ন আকারের হাঁড়িতে শৈল্পিক কারুকার্য। কারুকার্য দেখলে মন ছুঁয়ে যাবে যে কারো। প্রতি বছর বৈশাখে ঢাকার বিভিন্ন মেলায় স্থান পায় এই হাঁড়ি। রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বসন্তপুর গ্রামের হাঁড়ির কারিগর সুশান্ত কুমার পালের ‘শখের হাঁড়ি’ সুনাম কুড়িয়েছে সারাদেশে।

কালের বিবর্তনে অনেকটাই হারিয়ে যাওয়া রাজশাহীর এই হাঁড়িতে মিশে রয়েছে বাঙালিয়ানা। মেলা কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যাওয়ায় শখের হাঁড়ির জুড়ি মেলা ভার। অথচ সেই হাঁড়ি নিয়ে কথা ওঠে শুধুই বৈশাখে। সারা বছর কেউ এই শখের হাঁড়ির খবর নেয় না বলে আক্ষেপও করেন কারিগর সুশান্ত কুমার পাল।

সুশান্ত কুমার পালের বসন্তপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে শখের হাঁড়ি তৈরিতে সবাই ব্যস্ত। কেউ মাটি তৈরি করছেন, কেউবা শখের হাঁড়ি তৈরি করছেন। আবার কেউ কেউ সেগুলোতে রং চড়াচ্ছেন। রঙ আর শখের হাঁড়িগুলো শুকানোর কাজে সুশান্তকে সহযোগিতা করেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও।

সুশান্ত কুমারের পুত্রবধূ করুনা রানি পাল বলেন, ‘হাতে সময় নেই। ঢাকার দুই জায়গায় বৈশাখী মেলা হবে। সাতসকালে বসেছি কাজে। দুপুর গড়িয়ে গেছে। তাও কাজ শেষ হয়নি। কমপক্ষে তিন দিন আগে শখের হাঁড়ি ঢাকার মেলা প্রাঙ্গণে নিতে হবে। সেখানে সাজসজ্জা ছাড়াও অনেক কাজ রয়েছে। তাই বাড়ির সবাই শখের হাঁড়ি তৈরির কাজে লেগে গেছে। সকাল থেকে ১০০ সেট রং-তুলি শেষ করেছি। একেকটা সেটে চারটি করে শখের হাঁড়ি আছে।’

সুশান্ত কুমার পালের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল বলেন: বৈশাখী মেলার আয়োজন নিয়ে আমরা কাজে ব্যস্ত রয়েছি। বৈশাখী মেলাটা ঢাকায় হবে। এবার রোজার জন্য অন্য জায়গাগুলোতে বৈশাখী মেলা হচ্ছে না। তবে ঢাকার সোনারগাঁও জাদুঘরে বৈশাখী মেলা বসছে। দুই মেলায় আমাদের স্টল রয়েছে। সেখানে বাবা ও দাদা যাবে। আমাদের ৯০ শতাংশ প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন গাড়িতে তুলে শখের হাঁড়িগুলো ঢাকায় নেব। আমাদের শখের হাঁড়ি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলাগুলো মাতিয়ে রাখে।

তাদের তালিকায় আছে: ৪ পিসের শখের হাঁড়ি, ছোট পাতিল, সাজি, পঞ্চ সাজি, মাটির পুতুল, খেলনা। শখের হাঁড়িতে বিভিন্ন প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়। হাঁড়ির শরীরে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি বা খয়েরি রঙে আঁকা থাকে পদ্ম, মাছ, ধানের ছড়া, লক্ষ্মীপ্যাঁচা, সিঁদুরের কৌটা ইত্যাদি।

এ বছর ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা দামের শখের হাঁড়ি রয়েছে। এখানে দামটা বিষয় নয়, শখের হাঁড়ি রাজশাহীর ঐতিহ্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি রাজশাহীর মানুষ তেমন চেনে না।

সুশান্ত কুমার পাল বলেন, সোনারগাঁও মেলায় সবসময় যাওয়া-আসা আছে। সেখানে আমার দোকান আছে। বৈশাখে আমি ছয়টি মেলা করি। কিন্তু এবার মাত্র একটি মেলা করতে হবে।

শুধুমাত্র শখের হাঁড়িকে কেন্দ্র করে সুশান্ত কুমার পাল জায়গা কেড়ে নিয়েছেন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে। সেখানে তার ছবিসহ গল্প রয়েছে। আর রাষ্ট্রীয় পদক ছাড়াও পেয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কার। ঘুরে বেরিয়েছেন জাপান, শ্রীলংকা ও নেপালে। এ বিষয়ে সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ‘শুধু শখের হাঁড়ির কারণে আমার এত পরিচিতি। আমি দক্ষতা পুরস্কার পেয়েছি ১৮টি, শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছি ৪টি। এছাড়া গত বছর লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে আজীবন সম্মাননা পেয়েছি।

পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, সুশান্ত কুমার পালের বাপ-দাদারা এই কাজ করতেন। সেই সময় থেকে তারা একই কাজ করছেন। তারা ঢাকার বিভিন্ন মেলায় অংশ নেন। শখের হাঁড়ির অনেক সুনাম রয়েছে।

পবা উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা অভিজিৎ সরকার বলেন, শখের হাঁড়ির অনেক সুনাম রয়েছে। রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, কিন্তু রাজশাহীর মানুষ চেনে না। তাদের বিষয়ে অনেকেই বলছেন। তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here