শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপি বলেছেন, বৈশাখী মেলা নববর্ষের সর্বজনীন অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। নতুন বছরে মানুষের আনন্দ অনুভূতির প্রকাশ ঘটে বৈশাখী মেলার মাধ্যমে। এ মেলা উপলক্ষে মানুষের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, নানা জাতের কুটির শিল্প, কারুশিল্প, খেলনাসহ হরেক রকমের পণ্যের সমাহার ঘটে এ মেলায়। এছাড়াও থাকে যাত্রা, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, সার্কাসসহ বিনোদনমূলক বিভিন্ন আয়োজন। নতুনকে বরণ করার উদ্দেশ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে বৈশাখী মেলা একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়। এতে মানুষের প্রগতিশীল চেতনা জাগ্রত হয়।
শুক্রবার (১লা বৈশাখ) রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বৈশাখী মেলা ১৪৩০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আবুল মনসুর। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিসিকের চেয়ারম্যান মুহ: মাহবুবুর রহমান।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলার আয়োজনের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির লালন, বিকাশ ও সংরক্ষণে বাংলা একাডেমি শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।
পহেলা বৈশাখ প্রতিহত করার জন্য কিছু ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নানাভাবে অপচেষ্টা চালিয়ে বর্তমান সরকারের তৎপরতার কারণে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন পহেলা বৈশাখের দু’টি প্রেক্ষাপট অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য তুলে ধরেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বিসিক উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালে শিল্পসমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কাজেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। আমি উদ্যোক্তাদের সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে সকল সরকারি সংস্থাসমূহের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেন, সংস্কৃতি ও ধর্ম স্বতন্ত্র বিষয়, একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো বিরোধ নেই। আমরা প্রকৃতি থেকে সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করি, শিক্ষা নেই। অন্যদিকে, সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে আমরা ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করে থাকি। একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো দ্বন্দ্ব নেই।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে বিসিকের উদ্যোগে দেশের কারুশিল্পীদের মধ্যে তাদের কাজের দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে কারুশিল্পী পুরস্কার-১৪২৯ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পীকে ‘কারুরত্ন’ এবং নয়জন দক্ষ কারুশিল্পীকে ‘কারুগৌরব’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
মেলায় মোট স্টল থাকছে ৮৮টি যার মধ্যে চামড়াজাত ও পাটজাত পণ্য ১৩টি, ফ্যাশন/বুটিকস পণ্য ৪৮টি, খাদ্যজাত পণ্য ১০টি, বাঁশ, বেত ও হস্তশিল্প ৫টি, বিসিক মধু ২টি এবং কর্মরত কারুশিল্পী ১০টি।
এবারের বৈশাখী মেলায় একই সাথে থাকছে আকর্ষণীয় ডিজাইন ও সুলভ মূল্যের বিভিন্ন স্বদেশী পণ্য। জামদানি, পোশাক, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যার, নকশি কাঁথা ও নকশি পণ্য, হস্ত ও কারুশিল্প পণ্য, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, বাঁশ ও বেতের পণ্য, মৃৎশিল্প পণ্য, শতরঞ্জি, শীতলপাটিসহ হরেক রকমের স্বদেশী পণ্যের সমাহার। এছাড়াও থাকছে মধু ও খাদ্যজাত পণ্য এবং শিশু কিশোরদের জন্য বিনোদন ব্যবস্থা। মেলা থেকে ক্রেতা সাধারণ কারুপণ্য, নকশিকাঁথা, পাটপণ্য, বুটিকস পণ্য, জুয়েলারি, লেদার গুডস, অর্গানিক ফুডস, ইলেকট্রনিকস পণ্য, মধুসহ নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারবেন।
মেলা প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।
ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা