উদ্যোক্তা সংস্কৃতি ও উদ্ভাবনী পরিবেশ তৈরিতে নারীর ভূমিকা” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও আইসিটি টাওয়ারে অনুষ্ঠিত হয় “নারী উদ্যোক্তা দিবস- ২০১৯” উপলক্ষে বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর অধীনে “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (iDEA)।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদান সবচেয়ে বেশি। আমাদের জিডিপিতে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান শতকরা ৩৪ ভাগের বেশি। তৈরি পোশাক শিল্পে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ নারী কর্মী কাজ করছে। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি । বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার, এমপি; বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক এবং ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার।অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প” (iDEA) এর পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সৈয়দ মজিবুল হক।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিশন ২০২১ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে নারী পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসে ইনক্লুসিভ উন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে দেশে ৫ হাজার ৮ শত ৬৫টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে। প্রতিটি ইউডিসিতে একজন পুরুষের পাশাপাশি একজন নারী কাজ করছেন। বিগত কয়েক বছরে ২১টি জেলায় প্রায় সাড়ে দশ হাজার নারী উদ্যোক্তা গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ব জয় করার মতো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান।নারী উদ্যোক্তারা দেশের প্রত্যেকটি আইসিটি পার্কের ফ্লোর বিনামূল্যে ব্যবহারের করে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে নিজেদের ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন জুনায়েদ আহমেদ পলক ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি বলেন, সত্যিকারের অর্থে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য। তিনি সর্ব সেক্টরকে নারী বন্ধব করার চেষ্টায় আছেন। কারণ নারী জাগরণ শুধু মুখে নয়, কর্মক্ষেত্রেও প্রমাণ করতে হবে।সমাজের বিশেষ অংশ হল নারী। তাই নারীদের সামনে এগিয়ে যাবার জন্য তিনি সকল নারীদের আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)-এর নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব বলেন যে, বাংলাদেশে নারী বান্ধব পরিবেশ ও পলিসি তৈরিতে সরকার কাজ করছে। বর্তমানে যে সকল প্রকল্পগুলো চলছে এগুলো শুরু হবার আগের থেকেই বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বিভিন্ন ধরণের তথ্য  প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ বা এর বেশি নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যার ত্রিশ শতাংশই নারী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, আমরা নারীরা সকলের সাথে মিলে কাজ করি ও করতে চাই। মেয়েরা এখন ঘরে বসেও কাজ করছে। সংসারে স্বচ্ছলতা এনে দিচ্ছে।নারীদের মাথায় রাখতে হবে যে নারীরা সমাজের একটা বড় অংশ।সেই লক্ষ্যে নারীদের সাহসের সাথে সামনে এগিয়ে যেতেতিনি উৎসাহিত করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, সব নারীরই একই কথা। নারীদের সমস্ত কষ্টের জায়গা এক। নারীরা কোন অজুহাত দিতে পারে না। তাই নিজের স্থান নিজেকেই করতে হবে। নারী কখনও হেরে যায় না। তিনি নারীদের কোন অবস্থায় হাল না ছাড়তে অনুরোধ করেন। একজন নারীকেই আরেক নারীর পাশে দাড়াতে হবে। এছাড়া তিনি নারীদের এ্যাকসেস টু ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে সহজীকরণের লক্ষ্যে ন্যাশনাল ক্রেডিট পোর্টালের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন এবং দ্রুত চালুকরণেরও জোর প্রস্তাব করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সভাপতি শমী কায়সার বলেন, নারীদের নিজেদের জায়গাটা শুরু হয় নিজেদেরে বাড়ি থেকে। মেয়েরাই মেয়েদের শক্তি। মেয়েরা যখন আরো কয়েকজনকে নিয়ে একসাথে হয় তখনই তৈরি হতে পারে একটি পাওয়ারফুল কমিউনিটি। দেশে প্রফেশনাল নারী নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে। এছাড়া তিনি আরো বলেন উদ্যোক্তা সংস্কৃতি ও উদ্ভাবনী পরিবেশ এখন থেকে ২০ বা ২৫ বছর পূর্বে ছিলনা। আমাদের দেশের নারীরা এসএমই সেক্টরে ভালো করছে। দেশে প্রাইভেট বা কর্পোরেটে নারীরা অনেক দক্ষতার সাথে কাজ করছে। কিন্তু নারীদেরকে আমরা বড় বড় বিজনেস ক্ষেত্রে ও ইন্ডাস্ট্রিতে বড় জায়গায় দেখতে চাই।অনুষ্ঠানের সভাপতি “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প” (iDEA)-এর পরিচালক (অতিরিক্ত-সচিব) সৈয়দ মজিবুল হক তার স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে আমন্ত্রিত অতিথিদেরসহ সকল নারীদের ‘নারী উদ্যোক্তা দিবসের’ শুভেচ্ছা জানান এবং আইডিয়া প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সহোযোগিতার লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস পরিচলনার পরিকল্পনা করছে iDEA প্রকল্প। তিনি iDEA প্রকল্পে নারীদের তাদের উদ্ভাবনী আইডিয়াগুলো কিভাবে আবেদন করবে সেই সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, উদ্যোগ গ্রহণে ফান্ডিং, কো-ওয়ার্কিংস্পেস প্রদান, ট্রেড লাইসেন্সসহ যেকোন প্রকার সহোযোগিতায় নারীদের বিশেষ সহোযোগিতায় পাশে থাকবে iDEA প্রকল্প।

নারীদের জন্য উন্মুক্ত সেমিনারটিতে বেসিস, ই-ক্যাব, ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম-উই, উইমেন অন্ট্রাপ্রিনিয়রস অফ বাংলাদেশ-উইবিডি, কল্যানী, নিবেদিতা এবং অন্যান্য বিভিন্ন সংগঠন থেকে শতাধিক নারী উদ্যোক্তারা অংশ নেন। সংগঠনগুলো থেকে বক্তব্য রাখেন শারমিন আকতার সাজ (উইমেন অন্ট্রপ্রিনিয়রস অফ বাংলাদেশ-উইবিডি), আনিকা ইসলাম (নিবেদিতা), ফারজানা তণ্বি (ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম-উই), রাবেয়া খাতুন (iSocial এর কল্যানী)।

এছাড়াও সেমিনারে অতিথিগণ উপস্থিত নারী উদ্যোক্তাদের সাথে তাদের বিভিন্ন বাস্তব অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এবং নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সেমিনারটির ২য় অংশের পরিচালনা করেন আইডিয়া (iDEA) প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) কাজী হোসনে আরা।

 

ছবি- সংগৃহীত

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here