বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে প্রথম ও চাল উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ, মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম, ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ ও ছাগলের মাংস উৎপাদনে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে কোভিড-১৯ ও চলমান বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। কৃষিবান্ধব নীতির প্রভাবে ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি ও ফলসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) ড. শিরীন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন। সেসময় কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্যের তথ্য তুলে ধরে তিনি এসব তথ্য জানান।
বাজেটে কৃষকদের প্রণোদনা ও পুনর্বাসন সহায়তার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি উপকরণ ও ঋণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২ কোটিতে উন্নীত হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন: সকল কৃষককে স্মার্ট কার্ড প্রদানের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের ভর্তুকির পাশাপাশি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কৃষি খাতে অবদানের জন্য সরকার ‘কৃষিখাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি)’ সম্মাননা পদকের প্রবর্তন করেছে এবং ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো এ পদক প্রদান করা হয়েছে।
কৃষিপণ্য রফতানিতে ১০০ কোটি ডলার আয়ের মাইলফলক অতিক্রম করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও উন্নত প্যাকেজিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ফসল সংগ্রহোত্তর ক্ষতি কমিয়ে আনা হচ্ছে। আমরা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আধুনিক সংরক্ষণাগার, প্যাকেজিং হাউজ, কুল চেইনসহ অন্যান্য সুবিধা স্থাপনকে উৎসাহিত করছি। কৃষিপণ্য রফতানি বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ৭০টির বেশি সবজি ও ফল বিদেশে রফতানি হচ্ছে। কৃষিপণ্য রফতানিতে ইতোমধ্যে ১০০ কোটি ডলার আয়ের মাইলফলক অতিক্রম করেছি আমরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষি করতে সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে মুস্তফা কামাল বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা ‘কৃষি খাত উন্নয়নে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা ২০২২’ প্রণয়ন করেছি। লবণাক্ততাসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু ধানের চাষ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূপ্রকৃতিগত বিভিন্নতা বিবেচনায় নিয়ে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। উৎপাদন নিবিড়তা বাড়ানোর জন্য এখন ভার্টিকাল পদ্ধতিতেও চাষাবাদ করা হচ্ছে। ভাসমান কৃষি, ছাদ কৃষি, হাইড্রোপনিক ও অ্যারোপনিক কৃষি, সমুদ্র সম্ভাবনা ও প্রিসিশন কৃষি কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া মোবাইল এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কৃষকদের দোরগোড়ায় কৃষিতথ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনলাইন কৃষি মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম ‘হর্টেক্স বাজার’ এবং ‘ফুড ফর নেশন’ চালু করা হয়েছে। ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান অব বাংলাদেশ-এর আওতায় কৃষির ক্ষেত্রে জলবায়ু- স্মার্ট কৃষি সম্প্রসারণ উৎসাহিত করা, টেকসই কৃষি উপকরণ ও রূপান্তরিত ভ্যালু চেইন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন এবং কৃষি সম্প্রসারণ সেবা জোরদারকরণ ইত্যাদি অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
খাদ্য সংরক্ষণ ও বিতরণের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ক্ষমতা বিদ্যমান ২১ দশমিক ৮ লাখ মেট্রিক টন হতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সারাদেশে পুরাতন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদির মেরামত এবং নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, খাদ্যশস্যের পুষ্টিমান নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রিমিক্স কার্নেল মেশিন ও ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ চলছে।
এছাড়া দরিদ্র, অনগ্রসর, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনগোষ্ঠীর নিরাপদ খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ৫৫টি উপজেলায় ৩ লাখ পরিবারের মধ্যে পারিবারিক সাইলো বিতরণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২৪ হাজার ২২০ কোটি টাকা। তাই হিসাব মতে, এবার ৮৯৮ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ হয়েছে কৃষি খাতে।
ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা