আজমাইন আহমেদ খান, মাহাবুব আলম রনি, দেওয়ান শারমিলা খানম স্মৃতি, আজমেরি সুলতানা রিয়া ও ফাহিম মাহমুদ ফারহান

টেলিভিশনে চলচ্চিত্র কিংবা সিরিয়াল দেখার জন্য অনেকেই অস্থির হয়ে ওঠেন। কারো কারো জন্য নেশার মতো। না দেখতে পারলে কিছুই ভালো লাগে না। এসব দেখা নিয়ে পরিবারের বড়দের বকাঝকা নিত্য সঙ্গী। তবে টিভি সিরিয়াল দেখেও কেউ কেউ জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। পেতে পারেন জীবনের নতুন পথের সন্ধান। না এটি কোনোও সাহিত্যের গল্প নয়। বরং কয়েকজন তরুণের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা কথা বলছি।

সদ্য উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে দু চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ডিপার্টমেন্টে ৪জন এবং ১জন অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ ভর্তি হলেন। সহপাঠী হিসেবে পরিচয় হলো পাঁচটি নতুন মুখের। বন্ধুত্বের অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হলেন-আজমাইন আহমেদ খান, মাহাবুব আলম রনি, দেওয়ান শারমিলা খানম স্মৃতি, আজমেরি সুলতানা রিয়া ও ফাহিম মাহমুদ ফারহান। বন্ধুত্বটা আরো একটি কারণ তাদের চিন্তা চেতনা। অন্য সকলের চেয়ে তাদের ভাবনার জগৎটা ভিন্ন। সবার ভাবনায় ভিন্ন কিছু করা। কথায় কথায় তারা জানতে পারে, তুরস্কের একটি টিভি সিরিয়াল ‘সার্টে’ যার বাংলা অর্থ ঐতিহ্য। নামের সঙ্গে মিল রেখে ওই সিরিয়ালে অনেক ঐতিহ্য তুলে ধরা হতো যেগুলো দেখে এই তরুণরা অনুপ্রাণিত হয়। তাদের ভাবনায় দোলা দেয়। নিজেদের দেশেও এমন অনেক ঐতিহ্য এবং ঐতিহ্যবাহী পণ্য আছে যা সবাই-ই নিজেদের সংগ্রহে রাখতে ভালোবাসেন এমনকি আমরা নিজেরাও। কিন্তু এমন পণ্য খুঁজতে গেলে খুব সহজে কোথাও পাওয়া যায় না। এবার ৫ তরুণ চিন্তা করলেন দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো সকলের সামনে তুলে ধরতে ‘সার্টে’ সিরিয়ালের নামেই যাত্রা শুরু করবেন তারা।

যেহেতু তাদের পাঁচজনের চারজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী। তাই তাদের আঁকা-আঁকি সমস্যা হবার কথা নয়। কিন্তু পরিকল্পনা হলেও পণ্য তৈরি করার মতো পুঁজি ছিলো না তাদের। থেমে না থাকার মানষিকতা না থাকা এই তরুণরা প্রত্যেকে মাত্র ৩শ টাকা দিয়ে শুরু করলেন সিরিয়ালে দেখা বিভিন্ন তৈজসপত্রের পেইন্টিং। তারা তাদের নতুন এ উদ্যোগের নাম দিলেন ‘সার্টে’।

প্রথম অর্ডার টি পেয়েছিলেন বন্ধুর মায়ের কাছ থেকে। এরপর শুধুই সফলতার গল্প। সময়ের সঙ্গে স্ঙ্গে চারিদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে তাদের পণ্যের। বাড়তে থাকে অর্ডার। হ্যান্ডপেইন্টের তৈরি কুর্তি, শাড়ি, জুয়েলারি, ওয়ালম্যাট, মাটির বিভিন্ন পাত্র, ব্লক-বাটিকসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরী করে চলেছেন তারা।
এবারের বিসিক ঐক্য উদ্যোক্তা মেলা-২০২১ ‘এর মাধ্যমে প্রথম মেলায় অংশগ্রহণ করলেন ‘সার্টে’র উদ্যোক্তারা। অনলাইনই এখন তাদের প্রধান পণ্য বিক্রির মাধ্যম। স্থায়ী কোনও শো-রুম না থাকলেও রাজধানী ও চট্টগ্রামেই তাদের বেশি ক্রেতা। পাশাপাশি দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের হাতে যাচ্ছে তাদের উৎপাদিত এ পণ্য।

এখন আজ তাদের প্রতি মাসে অর্ডার আসে ১৫০টিরও বেশি। প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়। অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ তারা প্রত্যেকে সফল উদ্যোক্তা। নিজেদের আয় দিয়ে দাঁড়িয়েছেন পরিবারের পাশে, হয়েছেন আত্মনির্ভরশীল।

‘সার্টে’ উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন আজমাইন আহমেদ খান। নিজেদের এমন অভিনব উদ্যোগের বিষয়ে উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘মূলধন যদি প্রধান বিষয় হতো তাহলে আজ আমরা কেউই উদ্যোক্তা হতে পারতাম না। মাত্র ৩শ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। ছাত্রাবস্থাতেই আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি এমন উদ্যোগ নিতে পেরেছি। অনেকে হয়তো মনে করেন পড়াশোনা অবস্থায় কিছু করা সম্ভব নয়, পড়াশোনার ক্ষতি হয়। কিন্তু আসলে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সত্যি বলতে দৃষ্টিভঙ্গি, কাজ করার ইচ্ছা আর মেধা এ কয়টি থাকলে উদ্যোক্তা হওয়া যায়। পুঁজির দিকে দেখতে হয় না’।

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here