বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের বাচ্চারা

তামান্না ও শোয়েব রাতদিন দফায় দফায় আলোচনায় সাজাতে থাকলেন স্কুলের পাঠ্যক্রম। স্কুলের আভ্যন্তরীন পরিবেশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী কোথায়, কিভাবে কি করা যায় এই যেন তাদের ধ্যানজ্ঞ্যানে পরিণত হলো। সারাদিন চাকুরী সামলিয়ে দিনশেষে ঘরে ফিরতেন তামান্না। মাঝে মাঝেই ক্লান্ত হয়ে শোয়েবকে বলতেন, “সংসারের প্রয়োজনে ইনকাম করা প্রয়োজন শোয়েব! ইনভেস্ট নয়!” শোয়েব ছিলেন নাছোড়বান্দা। সংসারের সব চিন্তাকে একপাশে সরিয়ে রেখে শোয়েব ঠিক স্বপ্নে বিভোর করতেন তামান্নাকে। এমনই এক টানাপোড়েনের দিনে শত বাধা ভুলে যাত্রা শুরু করলো বাতিঘর।

উদ্যোক্তা- তামান্না সেতু

৬টি বিভাগের ৬জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা নিয়ে শুরু করেছিল বাতিঘর। এর মাঝে দু’জন ছিলেন তামান্না নিজে ও তার জীবনসঙ্গী শোয়েব। তামান্না সেতু ছিলেন নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষক এবং শুদ্ধ উচ্চারন ও আবৃত্তি শিক্ষক ছিলেন মেহেদী হাসান শোয়েব। বর্তমানে বাতিঘরের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন ৬০জন শিক্ষক।

ঢাকায় লালমাটিয়া, উত্তরা, বনশ্রী, মিরপুর, ওয়ারীর ৫টি ব্রাঞ্চ এবং ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম এই মোট ৬টি ব্রাঞ্চে চলছে বাতিঘরের কর্মকাণ্ড। তামান্না সেতু চান, বাতিঘর সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাক। তিনি বলেন, “বড় হয়ে যত গুণী শিল্পীই হও না কেন! বাংলা সংস্কৃতিকে নিজের মাঝে ধারন করা তোমার দায়িত্ব। এই শেকড়কে ভুলে গেলে চলবে না।” শিশুদের শিল্প-সংস্কৃতি, সাহিত্য, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নিয়ে গড়ে তুলতে বাতিঘর হোক সঠিক দিক-নির্দেশনার অভিপ্রায় এই ব্রত নিয়ে কাজ করছেন তারা।

বাতিঘরের বাচ্চাদের কথা ভাবতেই তামান্নার চোখে ভাসে সেই ছোট্ট তামান্নার কথা। যে তামান্না বিশাল বড় বাড়িতে ঘরভরা মানুষ নিয়ে কাটিয়েছে সোনালী শৈশব। বর্তমানের শিশুদেরকেও তিনি দিতে চান সেই শৈশব, যেখানে থাকবে হাসি, আনন্দ, গান, নৈতিকতার শিক্ষণ ও শিল্পমনের বিকাশ। সেই লক্ষ্যেই প্রণিত হয়েছে বাতিঘরের পাঠ্যক্রম। বাচ্চারা এখানে খেলার ছলে হয়ে উঠে মৃৎশিল্পী, আবৃত্তিশিল্পী, অভিনেতা, সুরের মোহে খুদে যাদুকর। দেশজুড়ে বাতিঘরের বাচ্চারা শিল্প ও সংস্কৃতিতে সমাদৃত সবখানে। বাতিঘরের বাচ্চারা প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ সংখ্যক শিশুশিল্পী নিয়ে বাল্মিকী প্রতিভা মঞ্চায়ন করেও বাংলাদেশে রেকর্ড করেছেন তারা। ইতোমধ্যে নাটকটি ৫ম মঞ্চায়ন সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও তাসের দেশ মঞ্চায়ন করেছে ৪বার। যার ছবি আঁকতে ভালো লাগে সে ছবি আঁকবে, যার নাচতে ভালো লাগে সে নাচবে, গাইবে, গল্প করবে এমনই এক বাড়ি নামক ভিন্নধর্মী স্কুল বাতিঘর। এই বাতিঘরে বাচ্চাদের মধ্যে নেই কোনো সাম্প্রদায়িকতার ছোঁয়া। এখানে তারা সকলেই মানুষ, সকলেই শিল্পী ও শিক্ষার্থী এই এক মন্ত্র তাদের।

যারা উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে চান তবে তারা যে কাজকে ভালোবাসেন সেই কাজ নিয়েই এগিয়ে যাবেন এমনই পরামর্শ দেন তামান্না। উদাহরণ দিয়ে তামান্না বলেন, “ধরুন আপনি সুই বিক্রি করতে চান তবে সেই ছোট্ট সুই নিয়ে আপনার গবেষনা ও কার্যক্রম হবে এতোটাই দৃঢ় যে একদিন আপনি হবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুই তৈরীর কারিগর। এমন মানসিকতা নিয়ে যদি এগিয়ে যান সফলতা আসবেই।”

 

 

সাদিয়া সূচনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here