ছোটবেলা থেকে সবসময়ই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পছন্দ করেন যশোরের মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন। ঠিক কী করবেন তা না জানলেও আগে থেকেই তার ইচ্ছে ছিল নিজে কিছু করবেন। ২০১৮ সালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়াকালীন সেই ইচ্ছাটা আরও প্রবল হলো। শুরু করলেন নিজের উদ্যোগ।
উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর দিকের কথা জানতে চাইলে সুরাইয়া উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “আর্ট এবং ক্রাফটের প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল সবসময়ই। সেই ভালোবাসার হাত ধরে জন্ম হলো ‘সুকন্যা’র। অনলাইনে সুকন্যা নামে একটি পেজ খুলি। শুরু করেছিলাম হাতে আঁকা টিপ দিয়ে। তারপর হাতে তৈরি শৌখিন গয়না, হাতে আঁকা পোশাক। তখন এতো বেশি অর্ডার পেতাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রমে সমস্যা হতো। তখন ঠিক করলাম অনার্স কমপ্লিট হলে তারপর কাজ শুরু করা যাবে! তাই সুকন্যার জন্মের প্রায় আটমাস পরে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয় সকল কার্যক্রম। এখানে আমার ভালোলাগার কারণ ছিল। অচেনা কিছু মানুষ আমার কাজ দেখে মুগ্ধ হচ্ছে, ভালোবাসছে, ভরসা করে পেমেন্ট করছে।”
দ্বিতীয় দফায় উদ্যোগ আবার কীভাবে চালু করলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে উদ্যোক্তা বলেন, ‘২০১৮ সালের সুকন্যার জন্ম। সেই হিসাবে এখন বয়স ৩ বছর। তবে মাঝে বন্ধ ছিল এক বছরের বেশি সময়। ২০২০ সালের মার্চে আবার শুরু করি কার্যক্রম। তখন চিন্তা করছিলাম কাজের মাধ্যম পরিবর্তন করা যায় কী না। কারণ আমাদের যশোরের আদি শিল্প হচ্ছে সূচিশিল্প। শৈশব থেকে দেখছি কিভাবে একেকটা নকশীকাঁথা তৈরি হয়। ছোট থেকে দেখার কারণে আমি নিজেই সবগুলো সেলাই পারি। প্রথমে নিজেই ডিজাইন করে ফেসবুকে পোস্ট করতাম। অর্ডার হলে অ্যাডভান্স পেমেন্টের টাকা দিয়ে আবার কাপড় কিনে কাজ করে ডেলিভারি দিতাম। এভাবে ধীরে হাটতে শুরু করে সুকন্যা। এই পথে আমার মা সবসময় পাশে ছিল। আরেকজন আমার ছোট বোন, সারাক্ষণ ছায়ার মতো পাশে আছে।’
মাত্র ২৬০ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করা উদ্যোক্তা সুরাইয়া ইয়াসমিন এখন প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার পণ্য উৎপাদন করছেন। কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা হস্তশিল্পের পোশাক, যেমন: শাড়ি, থ্রিপিস, রেডি কুর্তি পাঞ্জাবি এগুলো নিয়ে কাজ করছি। এর সাথে হোম ডেকর আইটেম নকশীকাঁথা, কুশন এগুলোও উৎপাদন করছি। আমাদের অরিজিনাল নকশীকাঁথা , যেগুলো ২০-৩০ বছর আগে উৎপাদন হতো সেগুলো সংগ্রহ এবং পুনরায় উৎপাদনের চেষ্টা করছি।’
বর্তমানে উদ্যোক্তা সুরাইয়া ইয়াসমিনের উদ্যোগের সাথে কাজ করছেন ৩০ জনের বেশি কর্মী। এরা সবাই গ্রামের মহিলা কিংবা স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী। অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবারের। তাদের সংসারের চলে সেলাই-এর টাকা দিয়ে। অনেকেই পড়াশোনা করছে সেলাইয়ের টাকা দিয়ে। মহামারীর কারণে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আয় বন্ধ থাকার কারণে সেলাইয়ের উপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন তারা। সুকন্যার লক্ষ্য এসব প্রান্তিক নারীদের অবস্থার উন্নয়ন করা, তাদের প্রাপ্য মজুরী নিশ্চিত করা। নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে পারিবারিক নির্যাতন অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন উদ্যোক্তা সুরাইয়া।
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সুরাইয়া বলেন, ‘আমি যেহেতু অনুজীব বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, তাই আমার পড়াশোনাকে কিভাবে আমার উদ্যোগে কাজে লাগানো যায় সেটা নিয়ে আরও পড়াশোনা করছি।’
সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা
অসংখ্য ধন্যবাদ উদ্যোক্তা বার্তাকে?