উদ্যোক্তা বুলবুল ইসলাম

উদ্যোক্তা বুলবুল ইসলাম গল্পের শুরুতে বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলা শহরে বেড়ে উঠেছেন, তার গ্রাম থেকে শহরের দূরত্ব দেড় কিলোমিটার। তিনি ছিলেন ২ ভাই, ১ বোনের মধ্যে বড়।

তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জের বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও শেষ করতে পারেননি এসএসসি। পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করলেও পারিবারিক সমস্যার কারণে পরীক্ষা দিতে পারেননি।

উদ্যোক্তা বুলবুল বলেন, একমাত্র আয়ের উৎস বাবার টাকা। ছোট একটা চাকরি করতেন। বুলবুল ইসলামের পরীক্ষার সময় তার বাবার চাকরি চলে যাওয়ায় পরিবারের অভাব দেখা দিয়েছিলো। ২০০০ সালে উদ্যোক্তা বুলবুল ইসলাম ইট ভাঙানোর মেশিনে কাজ করতে শুরু করেন। তিনি দেড় বছর কাজ করার পর সেখান থেকে ভিডিওর কাজ শুরু করেন আবার।

উদ্যোক্তা বুলবুল ইসলাম কাজ সম্পর্কে বলেন, বিয়ে, জন্মদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাজ করতেন। ২০০২ সালে তার বাবা সুতার রং করার ব্যবসা শুরু করলেন। ২০০৬ সাল থেকে বাবার কারখানার রং মাস্টার হিসেবে কাজ করেন।

তিনি আরো জানালেন, রাজশাহীতে ৭ দিনের অনলাইন প্রোগ্রাম করেন ব্যবসা সংক্রান্ত ধারণা নেয়ার জন্য। এ প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে তিনি রাজশাহী থেকে মনোভাব তৈরি করলেন।’ নিজে কিছু করার। তখন পকেটে ৬২ টাকা ছিলো। ওই টাকার বিনিময়ে ২৫০০ মেগাবাইট ডাটা কিনে পার্শ্ববর্তী তাঁত ফ্যাক্টরী থেকে ছবি নিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করেন।

উদ্যোক্তা জানান, চার দিন না ঘুমিয়ে কাজ করতে থাকেন। প্রতিজ্ঞা করেন কাজ না পাওয়া পর্যন্ত ঘুমাবেন না। ৪ দিনের মাথায় মতিঝিল থেকে একটা শাড়ির অর্ডার পান। এতে আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যায়, প্রতি সপ্তাহে ৮/১০ পিস বিক্রি করতে শুরু করেন। তিন মাসের মাথায় চট্টগ্রামের রাবেয়া নামে একজন ফোন করে ৫০ হাজার টাকা পাঠান টাঙ্গাইল থেকে কাপড় নেয়ার জন্য। এভাবে ২ মাসে ১০ লক্ষ টাকার কাপড় ক্র‍য় করেন রাবেয়া। এতে বুলবুল ইসলাম শতভাগ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।

বাবার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজের বিক্রি করা টাকা থেকে দুইটা তাঁতের মেশিন ক্রয় করেন। একটা থেকে ৩০ টা এবং অপরটায় ৪০টা কাপড় হয়। ঢাকা থেকে অর্ডার করে একজনে ৭৫ হাজার টাকা অর্ডার করতে চান। বায়না দেন ২৭ হাজার টাকা। অর্ডারের জন্য তিনটা তাঁত এবং নিজস্ব দুইটা মোট পাঁচটা তৈরি করতেন দশ হাত কাপড়। বাইরের কারখানায় কাজ করতেন। এগুলো ছেড়ে নিজের মত করে কাপড় তৈরি শুরু করলেন। এরপর ঢাকায় বাসা ভাড়া নেন ২৫ হাজার টাকায়। ঢাকায় ছয় থেকে আট লক্ষ টাকা বিক্রি করতেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।

উদ্যোক্তা পণ্য সম্পর্কে বলেন, এখানে উৎপাদন হয় শাড়ি, থ্রি-পিস, ওড়না। মূল হচ্ছে সুতি শাড়ি, হাফ সিল্ক, ধুপিয়ান প্রভৃতি। এখানে পাঁচ থেকে সাতটি আইটেম উৎপাদন করা হয়। টাঙ্গাইলের ডিগ্রী হুগ্রা সিরাজগঞ্জের বালসাবাড়ি চৌহালী এলাকায় তিনটি কারখানায় ১৬ থেকে ১৭ জন কর্মী নিযুক্ত আছেন। প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন তাঁতমহল। দেশের বাহিরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়াতে খুচরা ব্যবসা করে থাকেন। দেশের ভেতরে ঢাকা, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা ময়মনসিংহ, সিলেটে তার ক্রেতা রয়েছে।

প্রতি মাসে হাজার থেকে ১২শ’ পিস শাড়ি উৎপাদন করেন। তিন থেকে চার লক্ষ টাকা বিক্রি হয়।

বুলবুল ইসলাম জানান, বাবার কাছ থেকে তার উদ্যোক্তা হওয়ার চেতনা জাগে। যেহেতু বাবার কারখানায় রং মাস্টার হিসাবে ছিলেন। এই কাজ ভাল জানেন। এজন্য আগ্রহী হয়ে আজ তিনি উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, গ্রামের তাঁতীদের জন্য একটি ই-কমার্স সেক্টর তৈরি করবেন। তাঁতের মার্কেট বাড়ানোর জন্য কাজ করবেন। তিনি চান অবস্থার পরিবর্তন করতে।

শারমিন আক্তার
উদ্যোক্তা বার্তা ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here