ব্যবসা শিক্ষায় লেখাপড়া করেছেন ব্যবসা করবেন ভেবেই। কিন্তু কিভাবে ডিজাইনার হলেন তার নেপথ্যে আছে ক্লাস ফাইভে পড়া ছোট মাওয়ার গল্প। সেই বয়সে খাতার পর খাতা ভরিয়ে ফেলতেন ড্রেস ডিজাইন করে। বাবা তখন থেকেই মাওয়াকে “ফ্যাশন ডিজাইনার” বলে ডাকতেন। তাই ব্যবসা শুরু করার কথা মাথায় আসতেই পুরনো শখই মাথায় আনলেন মাওয়া।
পড়াশোনা চলাকালীন পার্টটাইম চাকরী করতেন মাওয়া। ইচ্ছা ছিলো ভালো চাকরির উচ্চাভিলাষ । টপ কোন জায়গায় কাজ করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সময়টা নিজের অনুকূলে ছিল না হয়তো। এভারেজ জায়গায় কাজ করতে চাননি বলে ভেতরে ভেতরে বিষণ্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই বিষণ্ণতা থেকেই ব্যবসায় নামেন মাওয়া।
জান্নাতুল মাওয়া পড়াশোনা করেছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে। সব মিলিয়ে এমবিএ শুরু করেন ২০১৭ সালে এবং প্রথম সেমিস্টারে ৫ টি ডিজাইন নিয়ে পহেলা বৈশাখ এর জামা নিয়ে শুরু করেন। ৭ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে “মাওয়া” নামের পেজ খুলে ব্যবসার যাত্রা শুরু করেন ।
মাওয়া উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “মাওয়া”র পোষাকগুলোর একটি গল্প আছে। এগুলো সম্পূর্ণ আমার ডিজাইন আর আমাদের প্রোডাকশনের। কোনো ভালো শপে গিয়ে দেখতাম যেই কাপড় পছন্দ হয়, ফুল হাতা থাকেনা,বা জামার লম্বা মনের মতো হতো না, তাই “মাওয়া”তে মেয়েরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কাপড় অর্ডার করতে পারে। একটা জামা যেটি শুধু তার নিজের জন্য বানানো হয়। এইদিক দিয়ে মাওয়া সবার থেকে আলাদা। ওয়ান-পিস কামিজ, কুর্তি, লং শার্ট, কোটি, সর্ট আবায়া প্রধান পণ্য। যার মূল্য ৬৫০ থেকে ১৭০০ টাকার মধ্যে থাকে।
মাওয়া বলেন, একা একা ব্যবসা করতে গিয়ে নানান সময়ে নানান বাধার সম্মুখীন হতাম। পণ্যের প্যাকেট বানাতে নয়াবাজারে যেতে হতো। সেখানকার ব্যবসায়ীরা মেয়েদের সাথে কথাই বলতে চায়না। ২য় বার প্যাকেজিং এর অর্ডার ফোনে বুঝিয়ে দেই, সেবার উনারা নিম্নমানের প্যাকেট ডেলিভারি করেন। কিছুদিন আগে ডেলিভারি কোম্পানী থেকে আমার দুটো জামা ছেড়া অবস্থায় কাস্টমারের কাছে ডেলিভারি হয়। ডেলিভারি কোম্পানী ব্যবসা গুটিয়ে বন্ধ করে দেয় আমাকে ক্ষতিপূরণ না দিয়েই। এমন সময়গুলোতে মাঝে মধ্যে মনে হয় কাজই ছেড়ে দেই কারণ একা একা সব গোছানো অনেক কঠিন হয়ে যায়।
পরিবার থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন বেশ। ছোটবোন প্রভাষক কিন্তু যখন প্রয়োজন তখন সে সব ব্যস্ততা ফেলে মাওয়ার পাশে থাকেন । বড়বোনও সবসময় সহযোগিতা করেন । যদিও খালাদের কাছ থেকে এখনো শুনতে হয়, “একটা চাকরি করলে আরো অনেক ভালো হতো।”
ব্যবসা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলেন মাওয়া, আমি খুব বড় চিন্তা করতে পারিনা। কারণ টাকার নেশা নাই আমার, ব্যবসার প্রতি আর ক্রেতাদের ভালবাসাই ব্যবসাটি করছি। আমি চাই আরো মানুষ “মাওয়া”র কাপড় পরবে।
ক্রেতাদের সাড়া ভালোই পাচ্ছেন, মাওয়ার ক্রেতারা মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ও নিয়মিত অফিসে পড়ার জন্য যারা আরামদায়ক ও মার্জিত কাপড় খুজেন তারা।
সম্প্রতি সিটি আলো ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ৩ মাসের কোর্স শেষ করেছেন সেই সাথে কোর্সের এক্সেপশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে বাড়তি ক্রেস্ট অর্জন করেন মাওয়া। উদ্যোক্তাদের ওয়ান স্টপ সল্যুশন শপ আপের সুপার সেলার ছিলেন।
প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বেশ কয়েক জায়গা থেকে, সিটি ব্যাংক এর মেয়েদের জন্য ব্যাংকিং সেক্টর সিটি আলো ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ৩ মাসের উইমেন এন্ট্রেপ্রেনিউর সার্টিফিকেশন কোর্স শেষ করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার এর অধীনে শিট্রেডস ইন কমনওয়েলথ প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত আছেন মাওয়া। তাদের আন্ডারে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন ওয়ার্কশপ করা হয়েছে বলে জানান। এছাড়াও শপ আপ থেকে কাস্টমার হ্যান্ডেলিং, অর্ডার মেনেজমেন্ট এর ওয়ার্কশপ করেছেন।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, আমার একটাই পরামর্শ, সবাই উদ্যোক্তা হতে চায়। কেউ ব্র্যান্ড ডেভেলপে মাথা ঘামায়না। তাই আমি বলব টাকার পেছনে না ঘুরে নিজের প্রডাক্টের একটি ব্র্যান্ড ভ্যালু দাঁড় করান। কিছুদিনের জন্য নয়, সুদুরপ্রসারী বিজনেস এর কথা ভাবুন।
খাদিজা ইসলাম স্বপ্না