প্রকৃতি কার না ভালো লাগে। ইট কাঠের নাগরিক জীবনে নাভিশ্বাস উঠে যাওয়া মানুষ হলে তো কথাই নেই। সুযোগ পেলেই ছুটে যান প্রকৃতির সান্নিধ্যে। ধরে নিন, এক ছুটির দিনে আপনি ঘুরতে গেলেন এমন একটা জায়গায় যেখানে চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। নৌকায় চড়া ও পানির গা ঘেষে সরু রাস্তা দিয়ে অনেক ঘোরাঘুরির পর যদি সুন্দর একটা ছিমছাম রেস্টুরেন্ট পেয়ে যান তাহলে কেমন লাগবে? নিশ্চয় খুশিতে মনটা ডগমগ করে উঠবে! হ্যাঁ, পানির মাঝখানে এমনই এক অভিনব রেস্টুরেন্ট তৈরি করেছেন যশোরের উদ্যোক্তা মনির হোসেন। নাম দিয়েছেন ‘ক্যাফে বিল হরিণা’।
মনির হোসেনের জন্ম যশোর সদরের রাজারহাটের কাজিপুর গ্রামে। এখানেই বড় হয়েছেন তিনি। উদ্যোক্তার বাড়ির পাশেই হরিণার বিল নামে একটি সুন্দর বিল রয়েছে। ছোটবেলা থেকে দেখতেন এখানে অনেকে বেড়াতে আসে। তখন থেকেই তার মাথার মধ্যে চিন্তা ছিলো, ‘এখানে কিছু একটা করলে মন্দ হয় না’। সেই থেকে মনের মধ্য চিন্তাটা রয়েই গেছে। পড়াশুনো শেষ করে নিজের সেই চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে হরিণার বিলে একটা রেস্টুরেন্ট করে ফেললেন।
কাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে বাহাদুরপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে হাফেজি শেষ করেন। আমীনিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পাশ করেছেন এসএসসি। এরপর বিটিসি কলেজ থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ও নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন। ২০১১ সাল থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি আউটসোর্সিং এর সাথে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্কে দুইটা আইটি প্রতিষ্ঠানে ১ বছর জব করেন। প্রথমটা ফিফোটেক। দ্বিতীয়টা DSS টেকনোলজি।
কারোর অধীনে জব করতে কোনো কালেই তার ভালো লাগেনি। আউটসর্সিংয়ে থাকার কারণে হয়তো এমন হতে পারে। তখন থেকেই এই ভাবনাটা তার ভিতরে কাজ করে যে, ‘আমি একজন উদ্যোক্তা হবো’। করো অধীনে না থেকে নিজে থেকে কিছু একটা করার চিন্তা আগে থেকেই ছিলো। আর বর্তমানে মানুষ সুন্দর আর নিরিবিলি পরিবেশে একটু সময় কাটাতে চায়। তাই সুযোগ সুবিধা সবকিছু ব্যাটে-বলে মিলে যাওয়ায় এই রেস্টুরেন্ট বিজনেস শুরু করেছেন।
প্রথমে বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে প্ল্যান মাফিক কাজ শেষ করতে ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখনো প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো খরচ করবেন বলে উদ্যোক্তা আশাবাদী। রেস্টুরেন্টটা গ্রাম্য পরিবেশে অবস্থিত হলেও এখানে শহরের অভিজাত রেস্টুরেন্ট-এর মতো সকল ধরনের মেনুই রাখার চেষ্টা করেছেন। খাবার ছাড়াও এখানে নৌকা ভ্রমণ ও বিল পাড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে বসার সু–ব্যাবস্থা রেখেছেন। এমনকি আপনি চাইলে নৌকায় ভাসতে ভাসতে খাবার খেতে পারবেন।
উদ্যোক্তা বার্তার সাথে দীর্ঘ কথোপকথনে উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমার রেস্টুরেন্ট একটু ভিন্নধর্মী হওয়ায় এখানে চাপ খুব বেশি হয়। তাই আপাতত ১০ জন কর্মী এখানে কর্মরত আছে। ভবিষ্যতে এখানে বড় ধরনের রিসোর্ট এবং মিনি পার্ক তৈরি করবো। যেখানে আমাদের এলাকার প্রায় ৫০ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে’।
উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান ‘ক্যাফে বিল হরিণা’ নামে অনলাইনে একটি গ্রুপ আছে। প্রতিদিন তার ক্যাফেতে ১০-১৫ হাজার টাকার খাবার বিক্রি হয়। তবে উদ্যোক্তা আশা করছের অধিক প্রচার হলে দিন দিন এই সেল আরো বেড়ে যাবে।
উদ্যোক্তা মনির ওমর ফারুক তোতা ও রেবেকা বেগম দম্পতির সন্তান। ৪ ভাইয়ের মধ্যে মেজো মনির ছোটখাটো জবের জন্য ছোটাছুটি না করে নিজের আশেপাশের সবকিছু নিয়ে ভেবেছন। তারপর নিজের পছন্দমতো একটা কাজে লেগে পড়েছেন। কঠোর পরিশ্রম করে এই সফলতা ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চান তিনি।
সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা