খুলনা বিভাগের ঝিনাদাহ জেলার পান্তাপারা গ্রামের আবু নোমানের বড় মেয়ে নাসরিন খাতুন। ঘুগরী পান্তাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শেণি পাস করেন এবং পরবর্তীতে উন্মুক্ত থেকে এসএসসি শেষ করেন। ২০০৯ সালে বিয়ে হয়ে যায় নাসরিনের। বিয়ের পর পড়াশুনা আর করা হয়নি তার। ঘর সংসারেই মনোযোগ দিলেন নাসরিন।
এক ছেলে সন্তানের জননী নাসরিন খাতুনের হঠাতই মনে হলো কিছু একটা করা দরকার কেননা তার ধারণা ছিল বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসএসসি পাশে কোনো চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। টুকটাক ঘরে হাতের কাজ তিনি প্রায়ই করতেন আর সেই কাজ নিয়েই এগিয়ে যেতে চাইলেন নাসরিন। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় কাজ করা,প্রথমে টেইলার্সের কাজ শিখলেন এবং কাজও শুরু করে দিলেন। তার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শোপিস তৈরি করতেন তিনি যা তার আশেপাশের মানুষরা খুব পছন্দ করতেন। আস্তে আস্তে তার হাতের কাজের বেশ সাড়াও পেলেন তিনি।
খুলনায় কিছু শোরুমে তার শোপিসগুলো বেশ ভালো বিক্রি হতে লাগলো। একটা সময় পর তিনি দর্জির কাজটা ছেড়ে দিলেন।কারণ টেইলারিং কাজে টাকা আসলেও মন বসতো না এই কাজে।তখন থেকে শুরু করলেন পাটের তৈরি শোপিস এর কাজ। দিনকে দিন তার শো-পিসের এত চাহিদা বাড়তে থাকলো যে, একা আর কাজ করা সম্ভব হচ্ছিলো না। তখন আশে পাশের কিছু মেয়েদের কাজ শেখাতে শুরু করেন এবং তাদের দিয়ে কাজ করাতে লাগলেন। সময়ের সাথে সাথে নাসরিনের কাজের পরিধি বাড়তে শুরু করে। ৫ জন কর্মী দিয়ে বড় বড় অর্ডারের কাজগুলো করা সম্ভব হচ্ছিলো না৷ তাই ২০১৭ সালের শেষের দিকে গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক মেয়েদের হাতেকলমে কাজ শেখান। এরপর ২০১৮ সালে প্রায় ৫০ জন মেয়ে নিয়ে একটি কারখানা দিলেন উদ্যোক্তা নাসরিন খাতুন।
অল্প কিছু পুঁজি মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে কারখানা শুরু করেন তিনি। তিনি প্রায় ৫০ ধরনের পণ্য তৈরি করে থাকেন। শিকা, ওয়ালমেট, গ্লাসওয়ালমেট, টেবিল রানার,পাপস,পর্দা,কলম দানি,ফুলদানি,টিসু হোল্ডার, গহনার বক্স,গিফট বক্স, বিভিন্ন প্রাণী, চাবির রিং, ফুল, ঝারবাতি,টেবিল ল্যাম্প, ক্যান্ডেল লাইট স্ট্যান্ড,গহনা, দোলনা , পাখির বাসা, পকেট ওয়ালমেট, পুতুলসহ আরো অনেক পাট জাতীয় পণ্য তিনি তৈরি করেন। দেশের ভিতর যারা মেলা করেন তাদের অনেকেই নাসরিনের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে থাকেন। এছাড়াও কিছু লোকাল বায়ারে মাধ্যমে দেশের বাইরেও পণ্য পাঠিয়ে থাকেন। উদ্যোক্তা নাসরিন তার পন্য দারাজের মাধ্যমেও বিক্রি করে থাকেন। এছাড়াও তিনি তার অনলাইন প্লাটফর্ম ‘নাসরিন পাটপল্লী’ থেকেও বেশ সাড়া পাচ্ছেন।
নাসরিনের শিকা ও ওয়ালমেটের চাহিদা সব থেকে বেশি। নাসরিন সবসময় সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে তার পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন।তার কাছে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা দামের পণ্য রয়েছে। ব্যবসার পাশাপাশি যুব উন্নয়নসহ বিভিন্ন এনজিও তে ট্রেনিং করায় উদ্যোক্তা নাসরিন।
২০২০ সালে যখন চারিদিকে করোনার প্রকোপ শুরু হয় ঐ সময় নাসরিন অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার স্বপ্নের কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু তিনি মোটেও ভেঙে পড়েননি,মনের জোড় আর সাহস নিয়ে কাজ চালিয়ে গেছেন। বর্তমানে ১৫ জন মেয়ে নাসরিনের কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। তাদের বাড়িতে গিয়ে নাসরিন কাজ দিয়ে আসে, ওরা নিজেদের বাড়িতে বসেই কাজ করে দেয়। এভাবেই চলছে উদ্যোক্তা নাসরিনের পাটপল্লী।
দীর্ঘ আলাপচারিতায় উদ্যোক্তা নাসরিন বলেন, আমি চাকরি করিনি কিন্তু নিজের শখকে কাজে লাগিয়েছি।তাই নতুনদের বলতে চাই,’চাকরির পিছনে না ঘুরে নিজে যে কাজটি করতে ভালবাসেন কিংবা ভালো বুঝেন সেই কাজে নেমে পড়ুন, কাজের প্রতি ভালবাসা থাকলে আজ কিংবা কাল সফলতা আপনাকে ধরা দিবেই।’
সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তাবার্তা