আপনার প্রিয় পোশাকটিও হতে পারে পাটের তৈরি, এমনটা কি কখনো ভেবেছেন?
একটা সময় ছিল যখন পাট দিয়ে শুধু বস্তা কিংবা দড়ি তৈরি করা হতো৷ কালের বিবর্তনে পাটের তৈরি বাহারি জিনিস চোখে পড়ে ইদানীং। তাই বলে আপনার পরনের পোশাকটিও হতে পারে পাটের তৈরি, এমনটা কি সত্যিই ভেবেছেন?
সাধারণকে অসাধারণভাবে তুলে ধরাই যখন উদ্যোক্তাদের কাজ, তখন সেই চিন্তা থেকে পাটপণ্যের এক ভিন্ন লাইফস্টাইল নিয়ে কাজ করছেন কানিজ সুলতানা৷
২০১৭ সালে পাটমেলায় ঘুরতে গিয়ে পাটের তৈরি নানা রকম ব্যাগ, শোপিস, ম্যাট, ঝুড়ি, বিশেষ করে পাটের শপিং ব্যাগ দেখে রীতিমত অবাক হন কানিজ। দেশীয় পণ্যকে কতভাবে যে উপস্থাপন করা যায় তা দেখে তিনি মুগ্ধ। সেই মুগ্ধতা থেকেই সিদ্ধান্ত নিলেন পাটপণ্য নিয়ে কাজ করবেন।
পরের বছর পাটপণ্যের উপর ট্রেনিং এর জন্য তিনি জেডিপিসিতে যান। সেখানে গিয়ে পাট পণ্যের এতো বৈচিত্র্য দেখে তিনি আরও উৎসাহিত হন। ট্রেনিং শেষে প্রায় ২ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে জুট ডাইভারসিভাইড পণ্য নিয়ে উদ্যোগ শুরু করেন এবং উদ্যোগের নাম দেন ‘জুট ফিউশন অ্যান্ড হ্যান্ডিক্রাফটস বিডি’।
বর্তমানে তিনি পাটের শপিং ব্যাগ, লেডিস ব্যাগ এবং ডেকোরেটিভ আইটেম তৈরি করছেন। তবে কানিজের সিগনেচার পণ্য হচ্ছে পাটের তৈরি ব্লেজার, শার্ট, কটি, ফতুয়া, কুর্তিসহ ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য পরিধেয় বস্ত্র।
এছাড়াও তিনি পুরোনো এবং নতুন আইটেমকে সংযোগ করে ফিউশন করেন। যেমন, কুশিকাটার সাথে পাটের সমন্বয় করে কটি এবং ব্যাগ তৈরি করছেন। ভবিষ্যতে পাটের জামদানি শাড়ি নিয়ে আসবেন জানিয়েছেন উদ্যোক্তা কানিজ সুলতানা।
বর্তমানে ২০ থেকে ৩০ জন কর্মী রয়েছে তার কারখানায়। দেশের বিভিন্ন কর্পোরেট অফিস এবং সরকারি অফিসগুলোতে কানিজের পণ্য যাচ্ছে নিয়মিত। এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিতে তার পণ্য গিয়েছে। মাসে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার ব্যাগের অর্ডার থাকে তার। প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ টাকার মত সেল হয়। এখন শুধুমাত্র অনলাইনে তিনি তার কার্যক্রম পরিচালনা করলেও খুব শীঘ্রই তিনি অফলাইনেও শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি যে কাজটি বেছে নিয়েছি সেটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। জুটের লাইফস্টাইল যা সচরাচর দেখা যায় না। আমি হয়তো শুরু করেছি, কিন্তু কতজনের কাছে পৌঁছাতে পারবো জানি না। তবে আমার ইচ্ছা সঠিক বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে ফিউশন পণ্যকে বহু দূর নিয়ে যাওয়া যেন তরুণ প্রজন্ম এটা নিয়ে আরো কাজ করতে পারে।’
কানিজ আরও বলেন: যখন আমি শুরু করেছিলাম তখন পাটের জিনিসগুলো ধরে আমি যা ফিল করেছি, সেটা নতুন পণ্য তৈরি করার পর আমি যখন মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি তখন আমি সেই ফিলটাই পাই৷ ভীষণ ভালো লাগে আমার। কতটা সফল হয়েছি জানি না, তবে আত্মতৃপ্তি নিয়ে আমি এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখছি এবং চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
কানিজ সুলতানা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামে। বাবা মরহুম আবু তাহের চৌধুরী ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। স্বামী হারুণ উর রশিদের অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতায় কানিজ তার স্বপ্নের পথে হেঁটে চলেছেন।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা