পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেও সফল হওয়া যায়

0
উদ্যোক্তা দেলোয়ারা বেগম

ময়মনসিংহের এক তরুণী বিয়ে হয়ে আসলেন জামালপুরে। সংসারে স্বামীর সীমিত আয়ে লক্ষ্য করলেন সংসার খুব সচ্ছল ভাবে চলছে না। তিনি উপলব্ধি করলেন “আমার কিছু করতে হবে “। আমি এমন কিছু করবো যাতে সংসার আরেকটু সচ্ছল ভাবে চলবে। তরুণী তার জমানো ৫০০০ টাকা নিয়ে তার উদ্যোগ শুরু করলেন।

২০০১ সালে শুরু হয় সেই উদ্যোগ এগিয়ে যেতে থাকলো ধীরে ধীরে। আর এরপরের গল্পটি অবিশ্বাস্য ধরনের সুন্দর। এরপরের গল্পটি হচ্ছে জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কার প্রাপ্ত উদ্যোক্তার, আন্তর্জাতিক খ্যাতি তাকে হাতছানি দেয়ার, শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা গল্পের একজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার কথা।

গল্পটি হচ্ছে দেলোয়ারা বেগম এর। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহ শহরেই। গৃহবধূ জামালপুরের।
এইসএসসি পাস করা তরুণী যখন বিয়ে হয়ে আসলেন তখন একটি ব্যাপার লক্ষ্য করলেন; সরকারি চাকরিজীবী স্বামীর একার ইনকামে একজন গৃহবধূর পক্ষে সংসার চালানো অনেকটা কষ্টকর। সন্তান হবার পর দেলোয়ারা বেগম ভাবলেন আমি কিছু একটা করব। যা কিনা সংসারের সচ্ছলতা এনে দিবে।

জমানো টাকা মাত্র ৫০০০! কয়েকটি পোশাক তৈরি করলেন তিনি। তিন মাসের পরিশ্রমের ৭ পিস থ্রিপিস তৈরি হলো। নিজের আত্মীয় স্বজনদের কাছে ডিজাইন দেওয়া হল এবং তৈরি হল পোশাক । পোশাকগুলো বিক্রি হতে সময় লাগলো ৬ মাস। ৫০০০ টাকায় কেনা প্রোডাক্ট বিক্রি হলো ২০০০০ টাকায়। ভীষন আগ্রহ পেলেন তরুণী।

পরিবারের খোঁজ সাপোর্ট মিলল না কিন্তু ধীর পায়ে নিজের গতিতে চলতে থাকলে দেলোয়ারা বেগম। কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল দেলোয়ারা বেগম। ২০হাজার টাকা থেকে নতুন ৩০ টি পোশাক খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকার কাছাকাছি পুজি হবার পর দেলোয়ারা বেগম ভাবলেন শুধুমাত্র এই ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এতগুলো পোশাকের কাজ করা কিংবা কাজ উঠানো, কিংবা বিক্রয় করা সম্পন্ন সম্ভব নয়। মাঠে নেমে হাঁটতে রাজি নন দেলোয়ারা বেগম।

৫০০০ টাকা চাইতে গেলেন এক এনজিওর কাছে। তারা টাকা দিলেন না। নিজের বিয়ের গহনা, পোশাক সবকিছু বদলে ছেঁড়া পোশাক পড়ে গেলেন টাকা চাইতে। টাকা দিয়ে দিলো এনজিও খুব অর্থকষ্টে থাকা নিম্ন মধ্যম আয়ের একজন নারী ভেবে। কয়েক দিন পর মাঠ ভিজিটে এসে দেখলেন থ্রিপিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবি , কাঁথা, বিছানার চাদর, হাতপাখ, কুশন সকল কিছু কাজকর্ম অনেক বেশি নান্দনিক। এইবার পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলেন সেই এনজিওর কর্মকর্তারা।

ছয় জন কর্মী নিয়ে তৈরি হতে থাকে হস্তশিল্প। চাহিদা বাড়তে থাকে সকল পণ্যের। তৈরিকৃত সকল পণ্যেরই জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে বিশেষ করে থ্রিপিসের হোলসেলের। লন্ডন প্রবাসী এক কাস্টমারের কাছ থেকে অর্ডার আসে প্রতিমাসে পাচশ পিস থ্রিপিস যাবে লন্ডনে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না উদ্যোক্তাকে। প্রায় চল্লিশ জন কর্মী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে উদ্যোক্তার কর্মক্ষেত্র।

ঢাকা-রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ সহ সাতটি জেলাই প্রোডাক্ট যেতে থাকে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর শ্রেষ্ঠ আত্মকর্মী হিসেবে ২০১২ যুব পুরস্কার অর্জন করেন তিনি কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ। ২০১৩ সালে একজন এসএমই উদ্যোক্তা হিসেবে মিলে সেরা উদ্যোক্তা পুরস্কার। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামেও অংশগ্রহণ করেন এই উদ্যোক্তা। বিভিন্ন আঞ্চলিক মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিচিতি আরো বাড়তে থাকে। একশ থেকে দেড়শ জন কর্মী নিয়ে একজন দক্ষ নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠেন দেলোয়ারা বেগম। দেশে এবং দেশের বাহিরে বিভিন্ন দেশে চলে উদ্যোক্তার পণ্য।
লেডিস ব্যাগ, হ্যান্ড পার্স, নকশী পাখা, ওয়াল হ্যাংগিং, ওড়না, লেডিস কুর্তি, লেডিস ওয়ান পিস, বেবি ড্রেস সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য উঠতে থাকে উদ্যোক্তার কর্মস্থলে। ১৫হাজারের বেশি কাস্টমার এখন উদ্যোক্তার লিস্টে। বড় বড় এক একটা অর্ডার যেন মুখরিত করতে থাকে উদ্যোক্তার ভুবনকে। লেডিস পাঞ্জাবি এবং শাড়ির বিশাল চাহিদা চায়না মার্কেটে।

নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্যের সম্ভার বাড়তে থাকে উদ্যোক্তার কর্মক্ষেত্রে। সূক্ষ্ম হাতের কাজ, ডিজাইন আর বুননে রঙিন আজ উদ্যোক্তার ভুবন।কুশন কভার, বেডসিট, বাটিক শাড়ি, ব্লকের শাড়ি,সিল্কের শাড়ি কি নেয় উদ্যোক্তার এই ভুবনে। হাজারও নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করেছেন এই উদ্যোক্তা। মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় শুরু করার কর্মসংস্থান ভিশন বলিষ্ঠ মানসিকতায় এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পরিণত করে একজন খ্যাতিমান নারী উদ্যোক্তা হিসেবে।উদ্যোক্তার বর্তমান মূলধনের পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা। কাপড়ের গুনগত মান ঠিক রেখে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক ডিজাইন করা যায় তাহলেই বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করেন উদ্যোক্তা।

অদম্য মনোবল নিয়ে এগিয়ে চলেছেন উদ্যোক্তা । কঠোর পরিশ্রম আর নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন সফল একজন উদ্যোক্তা। সফলতার সাথে পরিচালনা করছেন স্বীয় ব্যবসা।

মার্জিয়া মৌ,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here