পনের’শ টাকার পুঁজি বছর শেষে ৬০ লাখ টাকায় পৌঁছেছে

0
উদ্যোক্তা সুমাইয়া সালাম

চীনারা প্রস্তর যুগের শেষ দিকে সিল্কের আবিষ্কার করে সারা দুনিয়াকেই চমকে দেয়। আমাদের দেশে আশির দশকের শেষের দিকে সুতির পাশাপাশি সিল্ক ও মসলিন নিয়ে কাজ করা শুরু হয়।

দেশে মসলিনের জয়জয়কার এখনো। মসলিন, সফট সিল্ক, বলাকা, ডুপিয়ান, অ্যান্ডি ইত্যাদি সিল্কের নানা ধরণ, নানা নাম, কিন্তু প্রকাশ একই রকম- আভিজাত্য, নারীর শাড়িতে ফুটে উঠে শতভাগ।

সম্প্রতি থিমেটিক ডিজাইনের মসলিনে ডিজাইনার উদ্যোক্তা সুমাইয়ার ‘সিল্কেন’ নজর কাড়ছে। খুলনার মেয়ে সুমাইয়া সালামের ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির ঝোঁক ছিল। ফলে এমবিবিএস শেষ করেও সেই নেশাটা থেকেই যায়। ডাক্তারি পড়াকালীন সময়েই আঁকাআঁকির নেশাটাকে ভিন্ন মাত্রায় রূপ দিতে শাড়িতে থিমেটিক ডিজাইন শুরু। গত বছর সুমাইয়া ‘সিল্কেন’ নামে একটি পেজে থিমেটিক হ্যান্ডপেইন্ট ডিজাইনের মসলিন দিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন। আর তাতেই করেছেন বাজিমাত।

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার কথা জানতে চাইলে সুমাইয়া সালাম উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘আঁকাআঁকির নেশা আমায় পেয়ে বসেছিল, তাই মেডিকেলে পড়াকালীন সময়ে ২০১৬ সালে মাত্র পনের’শ টাকার পুঁজিতে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করি। সে সময় সিনিয়র-জুনিয়র বোন, সহপাঠী, আত্নীয়স্বজনের কাছ থেকে টুকটাক ভালোই সাড়া পাচ্ছিলেন। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি খুব একটা বেশি সময় দিতে পারতাম না।’

বর্তমানে ইন্টার্ন শেষ করলেও কোভিডের জন্য যোগ দেওয়া হয়নি হাসপাতালে। বিয়ের পর রাজধানীতে বসবাসের সুবাদে কাজের প্রতি তীব্র ভালোবাসা ও স্বামীর অনুপ্রেরণায় ২০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে গত বছর ফেসবুকে ‘সিল্কেন’ এর যাত্রা শুরু করলেন সুমাইয়া ।

পণ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শতভাগ দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছি। শুরু থেকেই আমার দৃঢ় ইচ্ছা ছিল আমি দেশীয় পণ্য কে দেশ বিদেশ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেব এ আকাঙ্ক্ষা থেকেই দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছি।আমার সিল্কেনের সিগনেচার পণ্য হ্যান্ডপেইন্ট মসলিন শাড়ি। এছাড়াও অন্যান্য ডিজাইনের কাপড়ও করে থাকি।’

সুমাইয়া বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে কদম, কসমস, হলদে পাখি, সামুদ্রিক মোটিভের কাপল সেট, কাঠবিড়ালি, জারুল রোদ্দুর সহো অসংখ্য থিমেটিক ডিজাইনে ক্রেতাদের মন কেড়েছি। আমার ডিজাইনে সারাদেশে নিয়মিত সিল্কেনের শাড়ি স্থান দখল করছে।

এছাড়াও দেশের বাইরে আমেরিকা, ইংল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া, জাপান, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, দুবাই, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়ে এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সিল্কেনের পণ্য যাচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশে হোলসেলেও শাড়ি পাঠিয়েছি।’’

বর্তমানে সুমাইয়া সালামের সহযোদ্ধা সাত জন। এছাড়াও পার্টটাইম ১৭ জন সহযোদ্ধা সহোযোগিতা করে থাকেন। মাত্র পনের’শ টাকার পুঁজি নিয়ে শুরু উদ্যোক্তার উদ্যোগ আজ বছর শেষে থাকছে ৬০ লাখ টাকা।

কেন সিল্ক বা মসলিনে মনযোগ দিয়েছিলেন? উদ্যোক্তার জবাব ‘‘এইখানে সৃজনশীলতার দারুণ সুযোগ, নিজের স্বপ্ন গুলোকে বাস্তবে রুপ দিতে পারি এই কারণেই কাজের ক্ষেত্র হিসেবে এটি বাছাই করেছি।’’

উদ্যোক্তা হবার পথে কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই একটা সময় ‘ডাক্তার হয়ে কাপড়ের দোকানদার’ ইত্যাদি কথা বলে বিদ্রুপ করতো। আমি দমে যাই নি, কিন্তু উদ্যোগের পরিধি খুব একটা বাড়াতে পারছিলাম না। অবশেষে বিয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণায় এ পর্যন্ত আসা।’’

করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে উদ্যোক্তা সুমাইয়া সালাম একটি শোরুম দিয়ে আরো অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান। সেটা পরিকল্পনায় নিয়েই সামনে এগোচ্ছেন তিনি।

সুমাইয়ার ভাষ্য ‘কাজের প্রতি ভালোবাসাটাই মূল। চলার পথে তো বাধা আসবেই। তাতে থেমে থাকা যাবে না। কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সফলতা আসবেই।’

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here