উদ্যোক্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা নুভিয়া

“গাজীর পট” এক প্রকার লোকচিত্রকলা এবং “গন্ড আর্ট” একটি লোকজ শিল্পধারা। যা পাশের দেশ ভারতের অন্যতম বৃহত্তম আদিবাসী সম্প্রদায়ের গন্ড শিল্পীদের হাতে আঁকা চিত্রকল্প। হাতে বোনা তাঁতের শাড়িতে নকশীকাঁথার বিভিন্ন নকশায় স্ক্রিন প্রিন্ট, যামিনী ব্লাউজ, কুর্তি, শ্যামা কামিজ, মীনাক্ষী কামিজ ও ওড়না। এভাবে প্রতিটি পণ্যের নাম ব্যবহার করে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী খাদি পরিচিত করতে কাজ করছি। এমনটাই জানালেন উদ্যোক্তা ফাতেমা তুজ জোহরা নুভিয়া।

খাদি কাপড়ের ব্যবসা শুরুটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড়কেই ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেই। ২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি পেইজ খুলে নাম দেই ‘খাদি’। খাদি কাপড় সূক্ষ্ম ছিদ্র যুক্ত তুলার বুননে তৈরি, শতভাগ পরিবেশবান্ধব, কোমল ও মোলায়েম। শীতের সময় গরম ও গরমের সময় শীত অনুভব হয়। এই কাপড় পড়তেও বেশ আড়াম দায়ক। ক্রেতার চাহিদার কথা চিন্তা করেই খাদি কাপড়ের তৈরি সব ধরনের পোশাক তৈরির সিদ্ধান্ত নেই।

উদ্যেক্তা ফাতেমার জন্ম বরিশালের পিরোজপুর জেলায়। বাবার চাকুরীর সুবাদে ছোটবেলা কাটে ভোলাতে। এরপর বাবার বদলির কারণে আরো বেশ কিছু ঘুরে ঘুরে কাটে তার। অষ্টম শ্রেনিতে পড়ার সময়ে ঢাকায় এসে থিতু হন তিনি। মনিপুর হাই স্কুল আর বিসিআইসি কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসির পরে আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন। ২ বছর চাকুরী করার পর ২০১৮ সালের শেষের দিকে খাদি নিয়ে কাজ শুরু করেন এই উদ্যোক্তা।

হারিয়ে যাওয়া খাদি শিল্পকে নতুন করে পরিচিত করতেই কাজ শুরু করেন জানিয়ে ফাতেমা বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রায় হারাতে বসা এই শিল্পটাকে সবার মাঝে পৌঁছে দিতে চেয়েছি। এ নামটি ব্যবহার করার কারণ, ‘খাদি’ নামটা যেন সবার মাঝে বেঁচে থাকে। এই উদ্দেশ্যে ‘খাদি’ নাম দিয়েই আমার ব্যবসায়ের উদ্যোগ শুরু হয়।

খাদি কাপড় নিয়ে কাজ করার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুমিল্লাতে কয়েকজন আত্মীয় থাকার সুবাদে প্রায় সময় ওখানে বেড়াতে যেতাম। সেখান থেকেই খাদি কাপড় সম্পর্কে জানা ও ভালোলাগা তৈরী হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে এই কাপড়টা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু পড়শোনার ব্যস্ততায় ইচ্ছেটা বেশীদূর আগাতে পারি নি। গ্রাজুয়েশন শেষে ২ বছর চাকরী করে ৯টা থেকে ৫ টার যাঁতাকলে নিজেকে আর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অন্যের অধীনে কাজ করে আর যাই হোক নিজের স্বাধীনতা পাওয়া যায় না। তাই চাকরি ছেড়ে পুরনো ইচ্ছেটা প্রাধান্য দিয়ে ২০১৮ এর শেষ দিকে খাদি নিয়ে কাজ শুরু করি।

তিনি আরো বলেন, নিজের চলার পথটা নিজে তৈরী করতে চেয়েছি সবসময়। চেয়েছি ভালোলাগার কাজগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে যাক। আমি ডিজাইন করতে অনেক পছন্দ করি। ঘন্টার পর ঘন্টা ডিজাইন করে যেতে পারি কোনো ধরনের ক্লানি আসে না আমার। কোনো ক্রেতা যখন পন্য নেয়ার পর প্রশংসা করেন সেটা অন্যরকম একটা ভালো লাগার অনুভূতি। এতে কাজ করার আরো প্রেরণা পাই।
এ উদ্যোক্তা বলেন, ব্যবসার কাঁচামাল সংগ্রহ, ডিজাইন, রিসার্চ, কাস্টমার সার্ভিস, প্যাকেজিংসহ সব কিছু আপাতত একাই সামলাতে হচ্ছে। আমার কাজের শুরুটা খাদি কাপড় নিয়ে হলেও ব্যবসার পরিধি বেড়ে যাওয়াতে এখন অন্যান্য আরামদায়ক কাপড় যেমন সুতি, লিলেন, হাতে বোনা অন্যান্য তাঁতের কাপড় নিয়েও কাজ করছি।খাদি কাপড়গুলো সরাসরি কুমিল্লা থেকে নিয়ে আসি। প্রিন্টিং, ডাইং ও টেইলারিং এর জন্য আলাদা কারিগর আছে। মূলত শাড়ি, থ্রীপিস, কুর্তি নিয়ে কাজ করি।

খাদি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পরিকল্পনা হচ্ছে খাদিতে বিভিন্ন ধরনের ফিউশন আনা। আরো ভিন্ন ধরনের আর্ট প্রদর্শন করে শাড়ি, থ্রি-পিস, শীতের গায়ের কুর্তিসহ অনেক আইটেম নিয়ে কাজ করা। আরও সফলভাবে কাজ করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি সফলতার একটাই সূত্র, লক্ষ্য ঠিক রেখে লেগে থাকা আর পরিশ্রম করা।

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা ঢাকা

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here