নিজেকে নিজের বস হতে হবে, উদ্যোক্তা হতে হবে: বিজয় শর্মা

0

বিজয় শেখার শর্মা ১.৭ বিলিয়ন ডলারের মালিক। ২০১৭ সালে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিলিওনেয়ারের তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি।

প্রথম জীবনে অনেক কষ্ট করে, খেয়ে না খেয়ে কাজ করে গেছেন। ২০১০ সালে পেটিএম (PayTm) প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে তার ভাগ্য খুলে যায়। গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অনলাইন পেমেন্ট অ্যাপটি ১০ কোটি বারেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে। এবং বর্তমানে দিনে কোটিরও বেশি লেনদেন হয় এই অ্যাপটি থেকে। অ্যাপ ছাড়ার কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি বিলিওনেয়ার হয়ে যান।

বিজয় শেখর শর্মার জন্ম হয় ১৯৭৩ সালের ৮ই জুলাই, ভারতের উত্তর প্রদেশের আলিগড় শহরে।আলিগড়ের বিজয়গড়ের একটি হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে তার পড়াশোনার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য দিল্লি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।

শিক্ষা জীবনে উদ্যোক্তা ও তার এক বন্ধু মিলে ভারতীয় ওয়েবসাইট খোঁজার একটি সার্চ ইঞ্জিন নাম “Indiasite.Net” নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেন।

এই কোম্পানিটির কাজ ছিল বিভিন্ন মানুষের তথ্য গ্রাহকদের যোগাড় করে দেয়া। বিশেষ করে আননোন নম্বর থেকে কেউ গ্রাহককে কল করলে গ্রাহক সেই নম্বরটি ওয়ান-নাইন্টি সেভেন কে দিলে তারা সেই নম্বরের গ্রাহকের পরিচয় ও ঠিকানা বের করে দিত।

পরে আমেরিকান সংস্থা লোটাস ইন্টারভার্স গাভ নামক প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তা বিজয় শেখর শর্মার কাছ থেকে ১ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সাইটটি কিনে নেয়। ওয়েবসাইট বিক্রী থেকে পাওয়া টাকা সম্পূর্ণটা উদ্যোক্তা সঞ্চয় করেন এবং ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এক বছর কাজ করে কিছু টাকা সঞ্চয় করে ২০০০ সালে ‘one 97’ নামে নিজের একটি কোম্পানি খোলেন।

জীবনের শুরুতে বিজয় শেখর শর্মাকে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়েছে। এমন একটি সার্ভিস চালাতে অনেক টাকা ইনভেস্টমেন্ট এর দরকার হয়। উদ্যোক্তা দেখলেন তার জমানো টাকায় এই কোম্পানীর সার্বিক খরচ মিটিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছে না।

এক সময় উদ্যোক্তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্স সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কনসালটেন্সির কাজ করতে শুরু করেন। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় উদ্যোক্তা চিন্তা করেন সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর মানুষের জীবনে বড় একটি অংশ জুড়ে আছে স্মার্ট ফোন। একে অপরের মাঝে এই স্মার্ট ফোন দিয়ে টাকা লেনদেন করে দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটাতে পারবে এরকম একটি এ্যাপ তৈরী করার দিকে মনোনিবেশ করা শুরু করেন। উদ্যোক্তা তার জন্মদিনে ২০১০ সালের ৮ জুলাই পেটিএম’র ওয়েবসাইটটি চালু করেন।

প্রথমদিকে উদ্যোক্তার পেটিএমে শুধু মোবাইলে টাকা রিচার্জ করা যেত। পরে এই পেটিএমে যুক্ত হতে থাকে বাস টিকেট বুক করা, টাকা লেনদেন করা,কারেন্ট বিল দেয়া, সহ বিভিন্ন রকম সেবা দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে এই পেটিএম সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে থাকে।

পরে ৩ বছরের মধ্যে এই পেটিএম অ্যাপটিতে আড়াই কোটি নিয়মিত গ্রাহক সংযুক্ত হয়। ২০১০ সালে পেটিএম প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে উদ্যোক্তা বিজয় শেখর শর্মার ভাগ্য খুলে যায়। গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অনলাইন পেমেন্ট এ্যাপটি ১০ কোটি বারেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে। যার ফলে বর্তমানে দিনে কোটিরও বেশি লেনদেন হয় এই এ্যাপটি থেকে।

বিশ্ববিখ্যাত আমাজনডটকম ও ফ্লিপকার্ট এর মত সাইটগুলোতেও পেটিএমের মাধ্যমে গ্রাহকদের পেমেন্ট করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এই পেটিএম ক্রেডিট কার্ডের বিকল্পর পাশাপাশি, পেটিএম’র অনলাইন ব্যাংক এর সুবিধা বিদ্যমান।

উদ্যোক্তা বিজয় শেখর শর্মার জীবনে বদলে যাওয়া পরিবর্তন এর সূচনা হলো। এখন পেটিএম ভারতের ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচগুলির পৃষ্ঠপোষক হওয়ার সম্মান অর্জন করেছে। পেটিএম বর্তমানে আয় করছে ১৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।

শূণ্য থেকে উঠে আশা আজকেরউদ্যোক্তা বিজয় শেখর শর্মা সাধারণ জীবনযাপন করেন। কোম্পানির সিইও হয়েও তিনি নিজের আলাদা চেম্বারে বসে অফিস করেন না। অফিসের সাধারণ কর্মীর মত তাদের সাথে একই ডেস্কে বসে কাজ করেন।

উদ্যোক্তা একটি জিনিস বুঝেছিলেন, ‘জীবনে যদি বড় হতে হয় অবশ্যই অন্যের অধীনে থাকা যাবে না। অর্থাৎ নিজেকে নিজের বস হতে হবে। উদ্যোক্তা হতে হবে।’

বিজয় শেখর শর্মার সবচেয়ে বড় গুণটি হল, তার হার না মানা মনোভাব। অপমানিত হয়ে ক্লাসে যাওয়া ছেড়ে দিলেও কিন্তু তিনি পড়া বন্ধ করেননি। ভাষার দুর্বলতা কাটাতে পড়েছেন ইংরেজী, আর হতাশার মাঝে অনুপ্রেরণা খুঁজতে পড়েছিলেন সফল মানুষদের গল্প। না খেয়ে দিন কাটানোর পরও নিজের স্বপ্নকে ছেড়ে দেননি। এই শক্তিশালী মনোভাবই তাকে শেষ পর্যন্ত সফল করেছে।

(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here