নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনলাইন ওয়ান স্টপ বিজনেস অ্যাডভাইজরি সার্ভিস সেন্টার ‘Onnessha’ চালু করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং এশিয়া ফাউন্ডেশন।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, একজন নারী-উদ্যোক্তা www.onnessha.com এ লগইন করে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যে কোনো পরামর্শ ও সেবা গ্রহণ সম্পর্কে তথ্য পেতে পারেন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নের লক্ষ্যে যৌথভাবে Expanding Economic Opportunities for Women Entrepreneurs in Bangladesh: One-Stop Business Advisory Services Platform র্শীষক র্কাযক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত বছরের ১২ অক্টোবর এসএমই ফাউন্ডেশন এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছিল যার ধারাবাহিকতায় এই ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার।
চুক্তির আওতায় রয়েছে:
জাতীয় ও আঞ্চলিক র্পযায়ে সেমিনার আয়োজন
প্রশিক্ষণ আউটলাইন তৈরি ও প্রশিক্ষ আয়োজন
প্রাথমিকভাবে সিলেট ও চট্টগ্রামের নারী উদ্যোক্তাদের তথ্য সম্বলিত ডিরেক্টরি তৈরি
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পরিচালিত ঋণ-স্কিম চিহ্নিত করা
নারী উদ্যোক্তাদের তথ্য সহায়তা প্রদান
নারী উদ্যোক্তাদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ করে তথ্য সহায়তার জন্য একটি অনলাইন ওয়ান স্টপ বিজনেস অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস প্লাটর্ফম তৈরি।
পাইলট র্কমসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের পর এসএমই ফাউন্ডেশন এবং এশিয়া ফাউন্ডেশন এই কার্যক্রম বিশেষ করে ‘ওয়ান স্টপ বিজনেস অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস প্লাটর্ফম’এর সেবা দেশব্যাপী সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
সার্ভিস সেন্টার চালুর সময় বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের র্বতমান অবস্থা জানানো হয়, যার মধ্যে আছে:
দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশী নারী। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব হলেই বিভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারী ও পুরুষের সমান সুযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন উভয়েই নিজেদের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারেন।
সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর সমান অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৩ অনুসারে বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তা হার ৭.২১ শতাংশ; যা ২০০১ সালে ছিল মাত্র ২.৮০ শতাংশ। সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টায় নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেশে নারী উন্নয়নে সরকারের বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে নারীর পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০০৯ এবং ২০১৭ সালে নারী উদ্যোক্তাদের ওপর এসএমই ফাউন্ডেশন পরিচালিত গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:
নারী শিক্ষা উন্নয়নে সরকার বিশেষ গুরুত্বারোপ করার ফলে দেশে উচ্চ শিক্ষিত নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি, নারীবান্ধব ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি হওয়ার ফলে দেশে উচ্চ শিক্ষিত নারীদের ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৯ সালের তথ্যানুযায়ী নারী উদ্যোক্তাদের ২০ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল স্নাতক বা তদূর্ধ্ব; ২০১৭ সালে এই হার এসে দাড়িয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশে।
২০০৯ সালে প্রায় ৪২ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা বলেছেন যে তাঁদের পিতা-মাতা পেশা হিসেবে উদ্যোক্তা হওয়াকে সমর্থন করেন না; ২০১৭ সালে এই হার প্রায় ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, পরিবেশ তৈরি হওয়ায় পিতা-মাতা তাঁদের কন্যাকে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সমর্থন দিচ্ছেন।
২০০৯ সালে প্রায় ২৮ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা বলেছিলেন, উদ্যোক্তা হয়ে উঠার ক্ষেত্রে তাঁরা সামাজিকভাবে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। পক্ষান্তরে, ২০১৭ মাত্র ১৪ শতাংশ নারী সামাজিক বাধার কথা উল্লেখ করেন।
২০০৯ সালে মাত্র ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) ছিল; বর্তমানে এই হার প্রায় ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ, নারী উদ্যোক্তরা কর প্রদান করেও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
আইসিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে ২০১৭ সালের তথ্যানুযায়ী প্রায় ৩৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা কম্পিউটার চালাতে সক্ষম; ২০০৯ সালে এই হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ।
২০০৯ সালে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা এসএমই ফাউন্ডেশন সম্পর্কে জানতো; ২০১৭ সালে এই হার প্রায় ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ, ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে।
সরকারি-বেসরকারী বিভিন্ন সহায়তার ফলশ্রুতিতে দেশে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু, তাঁদের এগিয়ে চলার পথ এখনো বাধামুক্ত নয়।
একজন নারী উদ্যোক্তা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে তাঁর উদ্যোগের যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু,প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব সম্প্রসারণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সকল বাধা দূর করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রবাহ সুগম করতে হবে।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষ করে একজন নারী উদ্যোক্তা তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় সেবা কোথায় পাবেন, কী কী বিশেষ সুযোগ রয়েছে, সেবা পেতে কার সাথে যোগাযোগ করবেন, ইত্যাদি বিষয়ক তথ্য তাঁর দূর গোড়ায় পৌছে দিতে হবে।
এসএমই ফাউন্ডেশন এবং দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের এই যৌথ প্রয়াস নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রযাত্রার পথ বাধামুক্ত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
এই কর্মসূচি পাইলট কার্যক্রম থেকে ভবিষ্যতে সারাদেশব্যাপী সম্প্রসারিত হবে।
ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা