উদ্যোক্তা - ফারহানা চৌধুরী

বিশ্বজুড়ে ফ্যাশনের দুটি ধারা ট্র্যাডিশনাল ও ফিউশন। বাংলাদেশের মেয়েরাও এ দুই ধারার পোশাক পরতেই পছন্দ করেন। সময়ের সঙ্গে নিজের বসন-ভূষণে পরিবর্তন পছন্দ করেন চলতি হাওয়ায় গা ভাসাতে আনন্দ পান মেয়েরা। এ দলের বেশিরভাগই তরুণী।

তরুণী ও নারীদের কথা ভেবেই ডিজাইনার ফারহানা চৌধুরী দেশীয় পণ্যের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন ফিউশনে শীঘ্রই নিয়ে আসছেন ‘‘ফারহানা’জ ক্লসেট’’।

সাল ২০১৪ অনলাইনে অ্যাটায়ার বাই ফারহানা চৌধুরী নামে একটি পেজ খুলে পোশাক ডিজাইনিং শুরু করেছিলেন ফারহানা। পরে নানান অসুবিধার জন্য অফ লাইনে চলে যায়। পাঁচ বছর পর ফিরে এসে ডিসেম্বরের ৭ তারিখে রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বর ‘সেক্টরের পিক অ্যান্ড পে’ শপিং মলে অন্যান্য নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিজের ছোট্ট পরিসরে ডিজাইনিং শুরু করছেন ফারহানা। এবারের হাউসের নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘‘ফারহানা’জ ক্লসেট’’।

বেশ কিছুদিন পর আবার ব্যবসা শুরু করছেন, গ্রাহকদের কাছে কি বার্তা দিয়ে চান জানতে চাইলে ফারহানা বলেন, আসলে ‘পিক অ্যান্ড পে’ শপিং মলের একটি স্পেসে আমরা বেশ কয়েকজন নারী উদ্যোক্তারা মিলে নিজেদের মতো করে কাজ করব, নিজেদের পণ্য গ্রাহকের কাছে তুলে ধরব। সবাই নিজেদের সেরাটাই গ্রাহককে দিতে চাইবে। যেহেতু আগে থেকেই আমার বেশ কিছু গ্রাহক আছে, মূলত তাদের কথা ভেবেই আবারও ব্যবসায় আসা। সঙ্গে নতুন গ্রাহকের তাদের ইচ্ছা, পছন্দ অনুযায়ী পণ্য দিতে সাধ্যমত চেষ্টা করব।

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মেয়ে ফারহানা বলেন, কোনো ক্রেতা যদি চান ভিন্ন রকম প্যাটার্নের পোশাক বানাতে তাহলে আমার সঙ্গে আলোচনা করতে পারবেন। আমাকে সময় দিলে তার চাহিদা মতো পোশাক তৈরি করে দিব।

দেশীয় পণ্যের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন ফিউশন বিষয়টা ফারহানা চৌধুরী উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ট্রেন্ডি ফ্যাশন হিসেবে মেয়েরা এখন ওয়েস্টার্ন ধাঁচের পোশাক বেশি পছন্দ করে। এছাড়াও বর্তমানে নারীদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে ঘরে ও বাইরে। ফলে ১২ হাতের শাড়ি পরে দ্রুত চলাফেরা আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। আর দীর্ঘসময়ের ট্র্যাডিশনাল সালোয়ার-কামিজের মধ্যেও থাকতে চাইছে না তারা। সে কারণে এ যুগের কর্মব্যস্ত নারীদের কথা মাথায় রেখে ট্র্যাডিশনাল পোশাকের সঙ্গে ভারতীয় পোশাক বা পাশ্চাত্যের পোশাকের সংমিশ্রণে তৈরি করেছি ফিউশনধর্মী সব পোশাক।

ফারহানা’জ ক্লসেটে থাকবে তার নিজস্ব ডিজাইনের সব পোশাক। এর মধ্যে ওয়েস্টার্ন আউটফিট সিঙ্গেল কুর্তি, সালোয়ার কামিজ, গাউন এবং এক্সক্লুসিভ পার্টি ওয়ার শাড়ি।

পোশাকের দর কেমন থাকবে জানতে চাইলে ডিজাইনার ফারহানা বলেন, ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে সাধ্যের মধ্যেই দাম রাখব, তবে পার্টি শাড়িগুলো একটু দাম বেশি পড়বে।

অনলাইনে ব্যবসা করার সময়ে সাড়া কেমন পেয়েছিলেন জানতে চাইলে ফারহানা উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, সাড়া যেমন ভালো ছিল তেমনি বিড়ম্বনাও কম ছিল না। অনেকে পেমেন্টের ক্ষেত্রে তাদের কমিটমেন্ট রক্ষা করে নি। পরে পরিবারের অসুবিধার জন্য তিন বছর পর অনলাইন থেকে ব্যবসা ছেড়ে দেই। কিন্তু আমি অফ লাইনে ব্যবসা চালিয়ে গিয়েছি। কোনো পরিচিত যদি ডিজাইন করে দিতে বলত তাহলে সেটা করে দিতাম।

চট্টগ্রামে এসএসসি ও এইচএসসির পড়াকালীন সময় থেকেই বেশ কিছুদিন র্যাম্পে হেঁটেছেন। পাশাপাশি পত্রিকার বিজ্ঞাপনেও পরিচিত মুখ ছিলেন ফারহানা।

২০১০ সালে বনানীর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন ডিজাইন (আইএনআইএফডি) থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ওপর একটি ডিপ্লোমা করেন ফারহানা চৌধুরী।

ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কোন বিষয়টাতে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে আপনার প্যাসন থাকতে হবে। সততা, কমিটমেন্ট, সব কিছুই। বাধা তো আসবেই, কিন্তু সামনে এগিয়ে যেতে হবে। অনেকে দ্রুত এসে দ্রুত ঝরে পড়ে। তবে আমার নিজেরটা বলতে পারি যখন কেউ নিজের ডিজাইন করা ড্রেস পড়ে প্রশংসা করে তখন আমার পরিশ্রমটা অনেক স্বার্থক মনে হয়।’’

ফ্যাশন ডিজাইনিং যারা পেশা হিসেবে নিতে চাচ্ছে তাদের কেমন হতে হবে জানতে চাইলে ফারহানা বলেন, আমি নিজেও নতুন, শেখার কোনো বয়স নেই। তবে নতুনদের হাতে খড়ি নিয়ে আসাটা জরুরী। এখন অনেক ফ্যাশন হাউজ আছে, ডিজাইনার আছে। তাদের সঙ্গে কাজ করে একটু অভিজ্ঞতা নিয়ে আসলে অনেক ভালো করা যাবে।

নিজেকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তুলে ধরেছেন এর পেছনের গল্প কি? হাসতে হাসতে ফারহানা বলছিলেন, ‘‘আসলে আমি পরিবারের সবার কাছ থেকে সাহায্যটা পেয়েছি, তাদের অবদান না থাকলে এতো কিছু করতে পারতাম না।’’

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here