১৯৯২ সাল। ১১ বছর বয়সী নওগাঁ জেলার এক কিশোর। টাকার অভাবে পড়াশোনা হলো না কিশোর আব্দুল বারেকের। বাবার অসুস্থতার কারণে তৃতীয় শ্রেনী থেকে বাদ দিতে হলো লেখাপড়া। দারিদ্রতায় জর্জরিত পরিবার টি কে বাঁচিয়ে রাখতে এক আত্মীয়ের হাত ধরে অচেনা শহরের পথে হাটা শুরু করলেন আব্দুল বারেক। রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১ কাঁঠালতলা এলাকায় একটি জুট ফ্যাক্টরিতে পেটেভাতে কাজ শুরু করেন আব্দুল বারেক।
৬ মাস কাজ করার পর বেতন হলো ২৫০ টাকা। অক্লান্ত পরিশ্রমে জুট নিয়ে কাজ করতে থাকলেন। ২ বছর পর ২৫০০ টাকা সঞ্চয় করে বাড়ী ফিরলেন। বাবাকে জানালেন পাট নিয়ে কিছু করতে চান তিনি। পরিবার থেকে সম্মতি মিললো না।
ফিরে এলেন আবার ঢাকায়। উত্তরার একটি ফ্যাক্টরিতে নতুন করে কাজ শুরু করেন। এভাবে কাটলো কয়েক বছর। চাকরির পাশাপাশি ব্র্যাক এবং বিভিন্ন এনজিওতে পাটের ওপর বিভিন্ন ট্রেনিংও দিয়েছেন আব্দুল বারেক।
দীর্ঘদিন পাট নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে নিজে কিছু করার চিন্তা করলেন। সঞ্চয়কৃত মাত্র ২৫০০ টাকা দিয়েই বানালেন পাটের তৈরি কিছু ব্যাগ। বিক্রয় করলেন হাইকোর্ট এলাকায়। লাভ হলো ৭০০ টাকা। কিছু করার উৎসাহটা বেড়ে গেলো সেখান থেকেই। ভাবলেন পাট নিয়েই এগোবেন তিনি।
২০০১ সালে ৬ জন কর্মী নিয়ে ছোট পরিসরে উত্তরায় পাটজাত পণ্যের একটি কারখানা দেন। কিছুটা লাভবান হলেন তিনি।
২০০৮ সাল। বড় পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে দৃঢ় প্রত্যয়ে নওগাঁয় ফিরলেন। ব্যাংক লোন পেতে বিভিন্ন ব্যাংকে আবেদন করেন আব্দুল বারেক।
অনেক চেষ্টার পরেও ব্যাংক লোন পেলেন না তিনি। চাকরির জমানো টাকায় নিজ বাড়ীতে ২টি মেশিন এবং দুইজন কর্মী নিয়ে নেমে পড়লেন ব্যবসাতে। একটি গিটারের ব্যাগ দিয়ে শুরু করেন যাত্রা। ব্যাগ, বক্স, শপিং ব্যাগ, মানিব্যাগ, ক্যালেন্ডারসহ আরও অন্যান্য পাটজাত পণ্য তৈরি করলেন আব্দুল বারেক।
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সাথে সাথে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করলেন। ২০১৮ সালে ঢাকা সাভারে দিলেন আর একটি কারখানা।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় উদ্যোক্তা ইউবিপ্রেস কে জানান, গত কয়েক বছর জেডিপিসি’র আওতায় মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনেক লাভবান হয়েছেন তিনি। মেলায় বিক্রয়কৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, বক্স, ঝুড়ি, বাস্কেট, ফ্লোরম্যাট ইত্যাদি। বরাবরের মত এবারও মেলায় বেশ সাড়া পাচ্ছেন উদ্যোক্তা আব্দুল বারেক।
শারমীন আয়াত ও শুভ হাসান