তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাবার সব দরজা খুলে যাচ্ছে: ডা. দীপু মনি

0

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রামে ‘শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্পাস’ চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষতা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ‘কোডার্সট্রাস্ট’। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন। সেসময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাবার সব দরজা খুলে যাচ্ছে, যার ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী।’

চট্টগ্রাম ক্যাম্পাস উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ হোটেলে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কোডার্সট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইটি উদ্যোক্তা আজিজ আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসন ও শিক্ষাখাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণ প্রজম্মকে দক্ষ ও ডিজিটাল কর্মশক্তিতে রূপান্তর করতে কোডার্সট্রাস্ট অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কোডার্সট্রাস্ট এখন চট্টগ্রামে তাদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে। চট্টগ্রামের মানুষের জন্য এটা আনন্দের বিষয়।’

কোডার্সট্রাস্টের শিক্ষা নতুন প্রজন্মকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে খাপ খাইয়ে নেওয়ার যোগ্য করে তুলতে ডিজিটাল এই প্লার্টফর্ম ভূমিকা পালন করবে। শিক্ষা ব্যবস্থায়ও এটি জরুরি বিষয়। এখানে কেউ টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছে, কেউ রোবটিক্স আবার কেউ সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করছে। বলতে গেলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যেসব কাজ আছে, প্রায় সব কাজে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে কোর্ডার্সট্রাস্ট চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার সব দরজা প্রায় খুলে যাচ্ছে, যার ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী।’

শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি থাকে দক্ষতা বাড়াতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোডার্সট্রাস্টের চুক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ৩৫ লাখ শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করছে। বলতে গেলে, পুরো বাংলাদেশের মানচিত্রই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে আছে। এদের যদি স্কিল বাড়ানো যায়, তাহলে একবার ভেবে দেখুন বাংলাদেশের চিত্র কি রকম পরিবর্তন হবে। তাই কোডার্সট্রাস্টের বিশ্বমানের কোর্সগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ব্যাপক শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বড় সুযোগ। কর্মসংস্থানসহ দেশ গড়ার সুযোগ। আইসিটিতে দক্ষতা বাড়ানোর সম্প্রসারণ ঘটছে।‘

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘এদেশে যেমন সিরাজউদ্দৌলাও ছিল, তেমন মীর জাফরও ছিল। এদেশে অপশক্তিও আছে। নানান সময় নানা চেহারা নিয়ে তারা আসে। দেশ এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের অনেক পার্থক্য রয়েছে। এখন কেউ না খেয়ে নেই, জামা ছাড়া নেই। প্রত্যেকটি শিশু স্কুলে যাচ্ছে। বিদ্যুতের কিছুটা সমস্যা এখন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের সুফল পাচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ চলে গেছে। এগুলো বৈশ্বিক পরিস্থিতির ফল। বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলোও নানা সংকটে আছে।’

‘আমাদের দেশ তবুও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা এগিয়েছি। স্বাস্থ্যর দিকে তাকান। পৃথিবীর কোনো দেশে এতগুলো মানুষকে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি। কোভিডে সারাবিশ্বে আনেক মানুষ মারা গেলেও আমাদের দেশে মৃত্যু হার ছিল মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ। আমাদের যে অভাবনীয় অগ্রযাত্রা তা হুট করে আসমান থেকে পড়েনি।’

তিনি বলেন, ‘দেশ আজ ডিজিটাল। আজ সবার হাতে হাতে মোবাইল। আমাদের জীবনের একটি অনেক বড় অংশ ডিজিটাল প্রযুক্তি দখল করে আছে। তাই সবাইকে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে দক্ষ হতে হবে। এই খাতে গবেষণা করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগ করলেই রিটার্ন আসবে তা ভাবা ছাড়তে হবে। আমাদের কি অসাধ্য কিছু আছে। আমাদের সব পারতে হবে। আজকের মানুষকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জানতে হবে। মানবিকতা, সৃজনশীলতার সম্মিলন হতে হবে। এই দেশকে যারা জঙ্গিবাদের রাষ্ট্র করতে চাই, তাদের বলতে হবে এই মাটি জঙ্গিবাদের নয়, এই মাটি মানবিকতার।’

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘কোডার্সট্রাস্ট তরুণ প্রজন্মকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে দৃঢ প্রতিজ্ঞ। প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রামে একটি ক্যাম্পাস হয়েছে, এটা বেশ আনন্দের সংবাদ। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। গত ১৪ বছরে আমরা অনেক এগিয়েছি। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরের বাজেটেরে চেয়ে ২০২৩ সালের বাজেট ৯ গুণ বেশি।’

‘আমাদের দারিদ্র্য কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে। ২০১০ সালে কারিগরি শিক্ষার পরিমান ছিল ১ শতাংশ, এখন ১৭ শতাংশ। আর এই ১৭ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে চাইলে কোডার্সট্রাস্ট সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারবে। বাংলাদেশের যে উন্নয়নের অভিযাত্রা সে জায়গায় আমাদের সবার একসঙ্গে কাজ করা দরকার,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের স্কিল ডেভলপমেন্ট প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। স্কিল না থাকায় অনেকেই আশানুরূপ চাকরি পায় না। করোনার সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে ক্লাস বন্ধ না করতে। ক্লাস অনলাইনে করতে। অনেক শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস সম্পর্কে তেমন জানতেন না। পরে আমরা করেছি। তাই আমরা কোনো সেশনজটে পড়িনি।’

তিনি বলেন: আমাদের ডিজিটাইলাইজড হতে হবে। আইটি সেক্টরকে উন্নত করতে হবে। তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা চাইবো আমাদের ছেলেমেয়েরা আইটি সেক্টরে নিজেদের স্কিল বাড়িয়ে এগিয়ে যাবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোডার্সট্রাস্টের মাধ্যেমে তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট বাড়াবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘তথ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের যে ভাবনা তার আমূল এবং বিপ্লবী পরিবর্তন দরকার। দেশকে তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ ও সমতাভিত্তিক করতে হলে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে উন্নত করে কাজে লাগাতে হবে। বিজ্ঞানমনস্ক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোডার্সট্রাস্ট কাজ করতে চায়। আমাদের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। এ চুক্তির ফলে এখন থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে কাজ করতে পারবে।’

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। কোভিড আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, সময়ের প্রয়োজনে কিভাবে পরিবর্তন হতে হয়ে। স্কিল বাড়াতে হবে। স্কিল ছাড়া কিছুই করা যায় না।’

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও ডিজিটাল দেশে পরিণিত করবেন। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করছি। দেশের প্রথম স্মার্ট জেলা হিসেবে চট্টগ্রামকে তৈরি করা হচ্ছে। রোবটিক্স ও সাইন্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এখন নতুন নতুন স্কিল প্রয়োজন আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে। কোডার্সট্রাস্টের যে ট্রেনিং সেগুলো ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চাই।’

কোডার্সট্রাস্টের চেয়ারম্যান আজিজ আহমদ বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন চাকরির পড়াশোনা করতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত করে। এই যে একটি লম্বা সময় জীবন থেকে হারিয়ে যায়, সেটা যদি স্কিল ডেভেলপমেন্টের কাজে লাগানো যায়, তাহলে সেটা অনেক কাজ দেবে। দেশের তরুণ প্রজন্মের স্কিল ডেভেলপমেন্ট বাড়াতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ ছাড়াও অনেক দেশে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাজ রয়েছে। বাংলাদেশে চাকরি পাওয়া অনেক চ্যালেঞ্জের। কারণ শিক্ষার্থীরা গ্রাজুয়েট হচ্ছে ঠিকই, তবে তাদের স্কিল নেই। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্কিল ডেভেলপ করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করুক। নিজেদের কর্মসংস্থানের জায়গা নিজেরাই তৈরি করুক।’

কোডার্সট্রাস্টের প্রকল্প পরিচালক কাজী তারানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউল গণি ওসমানী এবং থিম্বল আইও’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অস্কার পেদ্রোসো।

উদ্বোধনী কর্মসূচিতে ইউনিভার্সিটি ফর পিস, সিম্পলিলার্ন, ডিসকভারি এডুকেশন, থিম্বল.আইওসহ কোডার্সট্রাস্টের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরা হয়।

২০১৪ সালে ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করে ‘কোডার্সট্রাস্ট’। আট বছর পর চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের ক্লিফটন প্লাজায় প্রতিষ্ঠানটি তাদের আরেকটি ক্যাম্পাস চালু করেছে। কোডার্সট্রাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ট্রেনিং নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে জীবনে স্বাছন্দ্য এনেছে, যার মধ্যে ৩১ শতাংশ নারী।

চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কোর্সের মধ্যে আছে- গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যাকাউন্টস ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম, এ্যাডভান্সড এক্সেল, ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, কন্টেন্ট রাইটিং, পাইথন, ওয়েব ডিজাইন, এডভান্সড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট।

অ্যাকাউন্টস ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেমের অফলাইন কোর্সের সূচনা ব্যাচে প্রথম ১০০ জন রেজিস্ট্রেশনকারীর জন্য ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বৃত্তি ঘেষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার ১০ জন পাবেন ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here