জীবন জীবিকা রক্ষার্থে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ছয় লাখ মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই দুই সিটি করপোরেশনের ১১টি কোরবানির হাটে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ এবং যথাযথ মাস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।
আজ শুক্রবার ‘মাস্ক আমার সুরক্ষা সবার’ নামে একটি ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনকালে এ সিদ্ধান্ত নেয় আয়োজকরা।
শক্তি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ফুড পান্ডার সহযোগিতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, এটুআই এই ক্যাম্পেইনের সহযোগী পার্টনার।
মাস্ক ক্যাম্পেইন-এর উদ্দেশ্য জানিয়ে শক্তি ফাউন্ডেশনের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইমরান আহমেদ বলেন, কোভিড-১৯ এর উর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এমন উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ছয় লাখ মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণ করব।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১১ টি কোরবানির হাটে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ এবং যথাযথ মাস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।
কোরবানির পশুর হাটে মাস্ক ক্যাম্পেইন কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি কোরবানির হাটে (খিলক্ষেত, পল্লবী, গাবতলী, উত্তরা, দক্ষিণখান, মোহাম্মদপুর, উত্তরখান, ভাটারা, এবং বাড্ডা) চার’শ জন মাস্ক প্রমোটার্স বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ এবং জনসচেতনতা তৈরি করবে। এছাড়াও থাকবে সুরক্ষা বুথ, অ্যান্টিজেন টেস্টিং।
ইমরান আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দু’টি পশুর হাটে (বিবিরহাট, সিডিএ) এক’শ জন মাস্ক প্রমোটার্স বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ এবং জনসচেতনতা তৈরি করবে। এছাড়াও থাকবে সুরক্ষা বুথ।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাস্ক প্রমোটার্সের পাশাপাশি প্রতিটি হাটের ইজারাদার কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাসেবকরাও মাস্ক বিতরণে সহযোগিতা করবে।
এছাড়াও ঈদের পরে এক মাসব্যাপী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ এবং যথাযথ মাস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে কমিউনিটিকে মাস্ক পরিধানে উৎসাহিতকরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মেয়র আতিকুল ইসলাম করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরার গুরুত্ব তুলে ধরে সবাইকে মাস্ক পরতে উৎসাহ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা কোরবানির পশু কিনতে হাটে যাচ্ছি, কিন্তু অনেকেই ঠিকমতো মাস্ক পরছি না। মাস্ক না পরলে আমরা নিজেরাই কোরবানী হয়ে যাবো। যিনি হাটে গিয়ে পশু কিনবেন তিনি এমন বিক্রেতার থেকে পশু কিনবেন না যিনি মাস্ক পরেননি। আবার কোনো পশু বিক্রেতা এমন গ্রাহকের কাছে পশু বিক্রি করবেন না যিনি মাস্ক পরেননি। এটা সবার প্রতি আমার আহ্বান, আমার মেসেজ।
কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা মাস্ক বা পরলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সিটি করপোরেশন জরিমানা করবে বলেও সতর্ক করেন আতিক।
মেয়র আতিক বলেন, আমরা ডিজিটাল হাটে আরও একটিভ করতে চাচ্ছি। ক্রেতাদের পশুর হাটে ভেতর ঢুকতে হবে না। স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরার মাধ্যমে আমরা পশু ক্রেতাকে দেখাতে পারব, ক্রেতার পশু পছন্দ হলে সেখানেই পেমেন্ট করবে।
আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনে মহিলা ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত মাস্ক ও সুরক্ষা সামগ্রী কেনার জন্য ৭২ লাখ টাকা দিয়েছি। নিজ বক্তব্যকালে সমাজের অবস্থাসম্পন্ন নাগরিকদের কাছে তিনি আবার ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা অনুদানের আহ্বান জানান।
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে আমরা করোনা মোকাবিলা করছি। যখন কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো তখন অনেকেই কথা বলছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রশ্ন করছেন। কিন্তু সমাধান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সেটি হচ্ছে, দেশ ও জাতির জন্য জীবন ও জীবিকা একসঙ্গে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া।
জীবন রক্ষার জন্য আমরা দুই সপ্তাহ কঠোর লকডাউনে ছিলাম। এখন জীবিকা রক্ষার্থে সেটা কিছুটা শিথিল করতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তবে সেই ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব যদি আমরা সঠিকভাবে মাস্ক পরি। মাস্ক পরলে আমরা জীবনও রক্ষা করতে পারবো, জীবিকাও রক্ষা করতে পারবো।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, আমরা যদি আমাদের দেশের প্রতিটি স্থানে গ্রামে-গঞ্জের মানুষকে মাস্ক পরা রীতিতে পরিণত করাতে চাইলে চারটি বিষয়কে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। প্রথমটি হলো, বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ আরও নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও নাটোরের সিংড়ায় মাস্ক বিরতণ করছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুঃস্থ, মেহনতি মানুষদের প্রণোদনা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন, ঠিক আমাদের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের হেল্প লাইনে ‘৩৩৩’ ফোন দিয়ে খাদ্য সহযোগিতা চাইলে সেটাও আমরা দিচ্ছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় কিছুদিন আগে আমি দুই লাখ মাস্ক দিয়েছিলাম, এবারের ঈদেও এলাকায় আসার সময় দুই লাখ মাস্ক নিয়ে এসেছি, যা ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করা হবে। দ্বিতীয়ত, মানুষদের সঠিকভাবে মাস্ক পারাতে উদ্বুদ্ধ করাতে হবে। আমাদের এটুআইয়ের হিউম্যান ডেভেলপেন্ট মিডিয়া রয়েছে, তারা পুরোদেশের জন্য প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছে সঠিকভাবে মাস্ক পরা বিষয়ে জনসচেতনা তৈরিতে সেগুলো সেসব জেলার প্রশাসক, মেয়র, জনপ্রতিনিধিরা বাস্তবায়ন করবে। সারাদেশে এসব বিতরণ করা হয়েছে। আমরা অনুরোধ থাকবে সবাইযেন সেটা সঠিকভাবে অনুসরণ করি। তৃতীয়ত, মাস্ক পরাকে আবশ্যকীয় করতে হবে। কোনো ঐচ্ছিক বিষয় থাকবে না যে মাস্ক পরলাম আবার পরলাম না। মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক সঠিকভাবে পরতে পারলে আমরা জীবন ও জীবিকা দু’টোকেই রক্ষা করতে পারব। চতুর্থত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বশীলদের সকলকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, দেশের সাধারণ নাগরিকদের সঠিক পদ্ধতিতে মাস্ক পরতে উৎসাহিত করতে এই ক্যাম্পেইনের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে, মাস্ক পরাকে গণআন্দোলনে পরিণত করতে হবে। আমরা খুব শীঘ্রই দেশের উল্লেখযোগ্য মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে পারব। ভ্যাকসিনের দেওয়ার পরও আমাদের মাস্ক পরতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এমন উদ্যোগ সত্যিই গর্ব করার মতো। করোনার ভয়াল থাবা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সকলকে মাস্ক পরতে হবে। আমরা চট্টগ্রামে করোনার শুরু থেকেই মেহনতি মানুষের মাঝে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করেছি। সম্প্রতি আমাদের ছয়টি পশুর হাটেও বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ চালু আছে।
শক্তি ফাউন্ডেশনের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইমরান আহমেদের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মুবারক ও ফুডপান্ডা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সহপ্রতিষ্ঠাতা আম্বারিন রেজা।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা